ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়ান ইলেভেনের দুঃসহ স্মৃতি এবং পদ্মা সেতু, বিশ্বব্যাংক ও মিডিয়া

প্রকাশিত: ০৪:০১, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ওয়ান ইলেভেনের দুঃসহ স্মৃতি এবং পদ্মা সেতু, বিশ্বব্যাংক ও মিডিয়া

ওয়ান ইলেভেন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ভয়ঙ্কর কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। এমন কলঙ্কজনক শাসনের পুনরাগমন বন্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ জাতি যুগ যুগ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। মূলত এটি ছিল নতুন আদলে গড়া সামরিক শাসনের এক দুর্বিষহ অধ্যায়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আড়ালে সামরিক বাহিনীর কতিপয় সদস্য এ সময় যে অত্যাচার-অবিচার এবং দুর্নীতি করেছে- তা পৃথিবীর আর কোথাও হয়েছে কি-না আমার জানা নেই। ওয়ান ইলেভেন ছিল বাংলাদেশের জন্য একটি দুর্যোগপূর্ণ সময়। এ সময় বাংলাদেশকে একটি সঙ্কটকাল অতিক্রম করতে হয়েছে। অপরাজনীতি দিয়ে রাজনীতি বন্ধের অপচেষ্টা করা হয়েছে। নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা নেয়া হয়েছে। টোপ দিয়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দলে নেয়ার চেষ্টা হয়েছে। এ থেকে আমিও বাদ যাইনি। ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবদের ডাকে সাড়া না দেয়ায় আমাকে মামলায় জড়ানো হয়েছে। এ সময় গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা আমাকে নতুন দল গঠনে ভূমিকা পালনে বাধ্য করার চেষ্টা করে। আমি আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করেছি, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুগত নই- এ ধরনের একটি জাল চিঠিও বের করা হয়। অথচ এ চিঠির বিষয়ে আমি জানি না। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জানেন না, সাধারণ সম্পাদকও নয়। আমাকে ফাঁদে ফেলানোর জন্য তাদের এ চেষ্টা। তখন আমি ওয়ান ইলেভেনের কুশলীদের বলি, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আমাকে রাজনীতিতে এনেছেন, যতদিন বেঁচে থাকব তাঁর সঙ্গে থাকব।’ ফলে বাংলাদেশের অনেক রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে সন্দেহভাজন দুর্নীতির তালিকার দ্বিতীয় দফায় আমার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। জন্মকাল থেকে ওয়ান ইলেভেন পর্যন্ত আমার বিরুদ্ধে নামে-বেনামে উত্থাপিত বিভিন্ন অভিযোগসহ বিএনপির ১৯৯১-৯৬ এবং ২০০১-২০০৭ মেয়াদের তদন্ত করা সব বিষয়ে অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগ আনা হয় বিএনপির সময় তৈরি শ্বেতপত্রের অন্তর্ভুক্ত মিথ্যা বিষয়গুলোর ওপরও। এসব অভিযোগ তদন্তে একাধিক টিম কাজ করে। দীর্ঘ তদন্তে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হই। সকল অভিযোগ থেকে মুক্তি পাই। বিষয়টি পত্র দিয়ে দুদক আমাকে জানিয়ে দেয়। প্রত্যেক সামরিক সরকারের বৈশিষ্ট্য অভিন্ন। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল ও তার ব্যবহারকে সাধারণ জনগণের কাছে প্রিয় করে তোলার জন্য, দুর্নীতি প্রতিরোধের নামে কিছু ধনী ও প্রভাবশালী লোকের ওপর অত্যাচার করা- পৃথিবীর প্রত্যেক সামরিক সরকারের অনিবার্য বৈশিষ্ট্য। অন্য একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে : অস্ত্রের মাধ্যমে জনগণের মনে ভীতি সঞ্চার করা। ওয়ান ইলেভেনের তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুটোই সার্থকভাবে তা করে যাচ্ছিল। নানা শঙ্কার মাঝেও আমি ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। আমার মনে সব সময় একটা প্রবল আস্থা কাজ করে- আমি কোন অন্যায় করি না, তাই আমার কোন ভয় নেই। কিন্তু ওয়ান ইলেভেন আমাকে শিক্ষা দিল যে, পাশবতার কাছে ন্যায়-অন্যায় আর ভাল-মন্দের কোন বাছবিচার নেই। তপন চৌধুরীকে সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা করার কয়েকদিন আগে আমার কাছে একটি ফোন এলো। ফোন ধরেই আমি হতবাক। এটি ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সামরিক বাহিনীর প্রভাবশালী এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ফোন। তিনি আমাকে দুটো প্রস্তাব দিলেন। কোন প্রস্তাবের জন্যই আমি প্রস্তুত ছিলাম না। দু’টি প্রস্তাবই আমাকে বিমর্ষ করে দেয়। প্রথম প্রস্তাব ছিল- আমাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা করা। বললেন, ‘আপনাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব প্রদান করা হবে।’ দায়িত্ব কতদিনের তার কোন সীমা নেই- আমাকে লোভাতুর করে তোলার জন্য এটিও বলা হয়েছে। আমি অনেকক্ষণ ধরে তাঁর কথা বিনয়ের সঙ্গে শুনে বললাম : আমি আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। আমার পক্ষে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হওয়া শোভনীয় হবে না। এটি আপনাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারকেও প্রশ্নের মুখে ফেলে দেবে। আমার উত্তরে তিনি খুশি হতে পারেননি। প্রথমে সরাসরি কিছু না বললেও কণ্ঠের বিরক্তি এটাই প্রকাশ করল। এরপর তিনি নতুন প্রস্তাব দিলেন- এটি আরও মারাত্মক। বললেন : দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে নির্বাসনে দেয়ার জন্য একটি রাজনৈতিক দল গঠন করা হবে। আপনাকে সে দলে একটা গুরুত্বপূর্ণ পদ প্রদান করা হবে। আপনি বৃহত্তর ফরিদপুরের অধিবাসী এবং এলাকায় জনপ্রিয়, সম্মানীয় ব্যক্তি। শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার পর নতুন দলকে সহায়তা করার জন্য আপনাকে আমাদের প্রয়োজন। আপনি একজন ভাল মানুষ, সৎ মানুষ। আমরা আপনার মতো ভাল মানুষ দিয়ে দলটি গঠন করতে চাই। দুটো প্রস্তাবই নিঃসন্দেহে অনেকের কাছে লোভনীয় ছিল। কিন্তু আমার কাছে তা ছিল বিব্রতকর, অনাকাক্সিক্ষত ও সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। কারণ আমি সতত দলের প্রতি এবং নেত্রীর প্রতি অনুগত। তাই আমি দুটো প্রস্তাবই সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করি। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তিনি আমার ওপর প্রচ- বিরক্ত হন : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাইকমান্ডের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের জন্য আপনাকে কিন্তু চরম খেসারত দিতে হবে। এমন প্রতিক্রিয়ার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম। তাদের কার্যকলাপ ইতোমধ্যে পুরো দেশকে ত্রাসের রাজ্যে পরিণত করেছিল। এর কয়েকদিন পর দুর্নীতিবাজদের দ্বিতীয় তালিকায় আমার নাম অন্তর্ভুক্ত করে সাংবাদিকদের প্রদান করা হয়। দুদক যথারীতি আমার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে। ওয়ান ইলেভেনের দিনগুলো ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে মারাত্মক কষ্টের দুর্বিষহ স্মৃতি। সামরিক বাহিনী আমাকে গ্রেফতার করার জন্য হন্যে হয়ে খোঁজা শুরু করে। আমি তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছি। তাদের উদ্দেশ্য ছিল- আমাকে আটক করে নির্যাতন ও ব্ল্যাকমেইলিং করা এবং তাদের প্রস্তাবে রাজি করানো। আমি অর্জিত সম্পদের সিংহ ভাগ দেশ, জাতি ও সাধারণ জনগণের কল্যাণে ব্যয় করেছি। জীবনে এক পয়সাও অবৈধভাবে উপার্জন করিনি। তারপরও আমাকে দুর্নীতিবাজ আখ্যায়িত করে গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছে। কষ্ট আর অপমানে আমি ব্যথিত হয়েছি। কোরআন তেলাওয়াত করেছি। আল্লাহর কাছে পানাহ চেয়েছি। প্রতিহিংসামূলক গ্রেফতার এড়ানোর জন্য আমি অস্থির হয়ে পড়ি। নিজেকে রক্ষার জন্য এখান থেকে ওখানে ছুটে বেড়িয়েছি। দিনের পর দিন একা একটি নির্জন কক্ষে কাটিয়েছি। শঙ্কা ও ভয়ে ক্ষুধা-তৃষ্ণার কথাও ভুলে গিয়েছিলাম। বাতাসে পর্দা নড়ার শব্দে শিউরে উঠেছি। চুল ও দাড়িমোচ কাটার জন্য সেলুনে পর্যন্ত যেতে পারিনি। আমার মতো একজন নিষ্ঠাবান ব্যবসায়ীকেও প্রতিনিয়ত আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়েছে। কোন আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে পর্যন্ত যেতে পারতাম না। যদি কেউ দেখে ফেলে। দীর্ঘ দেড় বছরের অধিক কোন আত্মীয়স্বজনকে দেখিনি। সারারাত ঘুমোতে পারতাম না, বসে বসে কাঁদতাম। যদি ধরা পড়ে যাই, তাহলে তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের প্রতিশোধ নিতে নৃশংস অত্যাচার করবে। জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করে বানোয়াট বিবৃতিতে স্বাক্ষর নেবে। শুধু আমি কেন, আমার বড় ভাই সৈয়দ আবুল কাশেম, ভাগ্নে এবং অন্য অনেক আত্মীয়স্বজনও ওয়ান ইলেভেনের সময় নরক-যন্ত্রণার মতো কষ্টে দিনাতিপাত করতে হয়েছে। আমার বড় ভাই গ্রেফতার এড়ানোর জন্য পালিয়ে বেড়িয়েছেন, অসুস্থ হয়েছেন। তাঁর দু’টি কিডনি নষ্ট হয়েছে। পরবর্তীতে এ ধারাবাহিকতায় তিনি অসুস্থ হয়ে ইন্তেকাল করেন। আমাকে ধরার জন্য আমার বড় বোনের এক ছেলেকে ধরে নিয়ে এমন অত্যাচার করেছে যে, সে অসুস্থতা এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে। এমনকি আমার সহধর্মিণীর ভাই ও বোনদের বাসাও তল্লাশি করেছে এবং তাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক ব্যবহার করেছে। আমার জীবনে এগুলো বড় দুঃসহ ঘটনা। আমার সহধর্মিণীর সঙ্গেও সামরিক বাহিনীর লোকজন অসৌজন্য আচরণ করেছে। আমার সহধর্মিণী, উপমহাদেশের খ্যাতিমান আউলিয়া ও পীর হযরত খাজা ইউনুছ আলীর (রা) সেজো ছেলে পীরজাদা এবং বর্তমানে এনায়েতপুর দরবার শরিফের গদিনশিন পাকহুজুর হযরত খাজা কামাল উদ্দিন নুহ মিয়া’র সেজো কন্যা। তাঁর মতো একজন পুণ্যবতী বিদূষী মহিলাকেও সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানসিকভাবে অস্থির করে রেখেছিল। সামরিক বাহিনীর লোকজন দীর্ঘ আট ঘণ্টা ধরে আমার বাড়ি তল্লাশি করেছে, তল্লাশির নামে বাড়ির জিনিসপত্র ভাংচুর করেছে। সে সময় আমার সহধর্মিণী ছাড়া বাড়িতে আর কেউ ছিল না। আমার দুই কন্যাকেও এ সময় অনেক বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে। বিড়ম্বনা এড়াতে তাদের দেশ ছেড়ে যেতে হয়েছে। তারা মর্মাহত, বিমর্ষ ও মানসিকভাবে বিপর্যয়ে ছিল। সে ছিল এক ভয়াবহ অবস্থা। তদন্তের নামে, দুর্নীতিবাজ আখ্যায়িত করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল, ব্ল্যাকমেইলিং ও অর্থ আদায়ের যে নৃশংস প্রহসন তত্ত্বাবধায়ক সরকার করে চলেছিলÑ তেমন নজির পৃথিবীর ইতিহাসে আর আছে কিনা আমার জানা নেই। এই অত্যাচারের কুশীলবরা একদিন এর পরিণাম ভোগ করবে, আল্লাহ তাদের বিচার করবেন। শুক্রাবাদের একটি বাসায় আমি আত্মগোপনে ছিলাম। বাড়িতে কয়টা কক্ষ ছিল। বাড়িটার বিভিন্ন কক্ষ হতে ফোন করলে ভিন্ন টাওয়ারকে নির্দেশ করত। তাই আমি কখনও এ রুমে, আবার কখনও অন্যরুম থেকে ফোন করতাম। এজন্য সামরিক বাহিনীর প্রতিশোধপরায়ণ লোকজন আমার অবস্থান ঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারেনি। একদিন আমি আমার স্ত্রীকে শুক্রাবাদের বাসা থেকে রিং করি। টাওয়ার বিভ্রান্তির কারণে তারা আমাকে অন্য জায়গায় খুঁজতে যায়। আর একদিন আমাকে দেখেও সামরিক বাহিনীর লোকজন চিনতে পারেনি। দীর্ঘদিন চুল-দাড়ি কাটতে না পারায় আমি সম্পূর্ণ অন্য একজন হয়ে গিয়েছিলাম। একদিন চোখ বন্ধ করে গোপন অবস্থান থেকে নিজের ভবিষ্যত, দেশের পরিস্থিতি, জাতির ভাল-মন্দ প্রভৃতি নিয়ে চিন্তা করছিলাম। আমার মনে এমনটি বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছিল যে, আর কোনদিন হয়ত দেখা হবে না আমার স্ত্রী, কন্যাদ্বয় এবং আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে। হয়ত এভাবে আমাকে বাকি জীবন কাটাতে হবে। দিন দিন মনের সঙ্গে সঙ্গে শরীরটাও অবশ হয়ে পড়ছিল। চোখ খুলতে ইচ্ছা করছিল না। মনে মনে ভাবছি- এভাবে যেন অন্ধ হয়ে যাই, প্রলয় হয়ে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাক। হঠাৎ আমার বন্ধ-চোখের অন্ধকার আলোর জ্যোতিতে ভরে ওঠে। আমার গোপন কক্ষের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আব্বাহুজুর- এনায়েতপুর পাক দরবার শরিফের গদিনশিন হুজুরপাক হযরত খাজা কামাল উদ্দিন নূহ মিয়া। তাঁর পাক শরীরে মিসরের তৈরি একটি পোশাক। পোশাকটি আমিই তাঁকে উপহার দিয়েছিলাম। এমন দৃশ্য আমাকে অভিভূত করে দেয়। আমি কি তাহলে ঘুমোচ্ছি? আসলে আমি ঘুমোচ্ছিলাম না, জেগেই ছিলাম। চোখ খুলি, দেখি সামনে কেউ নেই। ঘাড় নেড়ে এবং নিজের শরীরে চিমটি কেটে বুঝতে পারি আসলে আমি জেগে আছি। আবার চোখ বন্ধ করি। আবার আগের সেই দৃশ্য। আব্বাহুজুরপাক পবিত্র কদমমোবারক বিস্তার করে আমার কক্ষে হেঁটে বেড়াচ্ছেন। আমি উঠে বসি। ফোনে আমার সহধর্মিণীকে বিষয়টা জানাই। আমার সহধর্মিণী সঙ্গে সঙ্গে আব্বাহুজুরপাকের কাছে বিষয়টা অবহিত করেন। আব্বাহুজুরপাক বললেন : আবুল হোসেন যাঁকে দেখেছে তিনি আমি নই। তিনি স্বয়ং হযরত এনায়েতপুরী (র.)। তাকে বলো, তার দুঃখের দিন শেষ হয়েছে। তার কিছু হবে না। এমন সৎ মানুষের বিপদ আসবে, আসতে পারে; কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছু হয় না। আমাদের নবীজির (স) ওপর কী কম বিপদ গিয়েছে! এরপর আব্বাহুজুরপাক কোরআনের একটি আয়াত পড়ে আমার সহধর্মিণীকে শুনিয়ে বলেছিলেনÑ আমাকে নিশ্চিন্তে থাকতে। সে আয়াতটি এখনও আমি স্মরণ করি এবং উৎসাহ, গর্ব আর পবিত্রতায় উদ্বেল হয়ে উঠি। কোরআনের এই আয়াতটির ইংরেজী অনুবাদ হলো- ডযবহ ভধষংবযড়ড়ফ রং পড়হভৎড়হঃবফ রিঃয ঃৎঁঃয, ভধষংবযড়ড়ফ রং নড়ঁহফ ঃড় ঢ়বৎরংয ধহফ ধষষ ভধষংবযড়ড়ফ রিষষ রিঃযবৎ ধধিু. শেষ পর্যন্ত আমার কিছু হয়নি, কারণ আমি কখনও বেআইনী কিছু করিনি। তাই শত চেষ্টা করেও তারা আমার সামান্য ত্রুটিও খুঁজে পায়নি। সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার কয়েকবার আমার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করেছে। অনুসন্ধান করে আমার বিরুদ্ধে মামলা করলেও শেষ পর্যন্ত তদন্তে আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির সামান্যতম সূত্রও খুঁজে পায়নি। ফলে আমার অনুকূলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে বাধ্য হয়েছে। আব্বাহুজুরের ভবিষ্যদ্বাণী সত্য প্রমাণিত হয়েছে। আমি সৎ ছিলাম। তাই সাময়িক অসুবিধায় পড়লেও অবশেষে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছি। আমি জীবনে কোন অন্যায় করিনি, অবৈধ পন্থায় এক পয়সাও আয় করিনি, তেমন চেষ্টা কখনও করিনি। তবু অনেক অসত্য অভিযোগ ও অপসংবাদের বোঝা আমাকে বহন করতে হয়েছে। পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগ ও সেতু নির্মাণ বিষয়ে আমাকে জড়িয়ে তিন বছর ধরে যে বিতর্ক হয়েছেÑ তাতে আমি আদৌ সম্পৃক্ত ছিলাম না। আমি বলেছিলাম, স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়ম-নীতি বজায় রেখে জবাবদিহিতার পথ অনুসরণ করে পদ্মা সেতু নির্মাণের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের কাছে কিছু লোকের অসত্য অভিযোগ ও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা আমাকে জড়িয়ে নানা অসত্য খবর প্রকাশ করে ভিত্তিতে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ বাধাগ্রস্ত করে আমার মর্যাদা ক্ষুণœ করে। এমনকি সত্য জানার পরও তারা নেতিবাচক সংবাদে আমাকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা অব্যাহত রাখে। অথচ পদ্মা সেতুর কাজে সত্য ও ন্যায়ের দাঁড়িপাল্লায় আমি নির্দোষ, যা দুদকসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থার প্রতিবেদনে শেষ পর্যন্ত প্রমাণিত হয়েছে। পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির আশঙ্কায় আমাকে জড়ানো যে পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলক বা বিশ্বব্যাংকের ঋণ না- দেয়ার একটি উছিলা তা আমার পক্ষ থেকে বারবার বলা হলেও তখন মিডিয়ার কেউ আমার কথায় কর্ণপাত করেনি। কতিপয় পত্রিকা সত্যের দিকে ধাবিত না হয়ে বিশ্বব্যাংকের অন্যায় সিদ্ধান্তে আমাকে জড়িয়ে কার্টুন প্রচার করে, কল্পকাহিনী লেখা শুরু করে। এটা যে কত দুঃসহ বিড়ম্বনা, কত সীমাহীন অপমানজনক ছিলÑ তা ভুক্তভোগী মাত্র অনুধাবন করতে পারবেন। বিশ্বব্যাংক স্বীকার করেছে, অসত্য অভিযোগ ও বাংলাদেশের কতিপয় পত্রিকার মিথ্যা সংবাদে প্রভাবিত হয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, যা আদৌ উচিত হয়নি। আমার প্রতি অন্যায় ও অমানবিক আচরণের জন্য বিশ্বব্যাংক এখন চরমভাবে অনুতপ্ত। দেশের কতিপয় পত্রিকা পরিকল্পিতভাবে পদ্মা সেতুসহ আমার সম্পর্কে নানা কল্পকাহিনী তৈরি ও তার ওপর ভিত্তি করে অসত্য রিপোর্ট প্রকাশ করে। আমার সম্পর্কে জনমনে ভুল ধারণা সৃষ্টিতে সহায়তা করেছে। যোগাযোগমন্ত্রীর অফিস মেরামত ও গাড়ি ক্রয় নিয়ে অসত্য প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে আমাকে বিতর্কিত করার হীন ষড়যন্ত্র শুরু হয়। আমার বাড়ি মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার ডাসার থানায়। বাড়িতে আমি একটি নতুন ভবন নির্মাণ করি। বাড়ি নির্মাণের ব্যয় আমি কর পরিশোধিত অর্থ থেকে বহন করেছি। অথচ এই বাড়ি নির্মাণ নিয়ে দেশের একটি প্রথম শ্রেণীর দৈনিকের প্রথম পৃষ্ঠায় ব্যানার হেডিং করা হয়, বাড়ির ছবি দিয়ে আমার বিরুদ্ধে নেতিবাচক পন্থায় নাতিদীর্ঘ রচনা লেখা হয়। এমনকি অসত্য তথ্য দিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে মিডিয়া আমার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ‘সাকো’ ও আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। (বাকী অংশ আগামীকাল)
×