ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

‘লিখে দিও, আর ফিরছেন না পান্থ কানাই’

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

‘লিখে দিও, আর ফিরছেন না পান্থ কানাই’

অনেক বছর ধরে আমরা পাচ্ছি না আপনাকে ঠিকঠাক। এ্যালবাম করছেন না কেন? আমি যে মানের মিউজিক চিন্তা করি, সেরকম করতে হলে তো চার-পাঁচ লাখ টাকা নিজেরই খরচ হয়ে যাবে। আমার আসলে অত পয়সা নেই যে, এ্যালবাম করে ফ্রি কাউকে দিয়ে দেব। সবাই ডাউনলোড করে করে ওটা শুনবে। আমার ওই টাকাটা নেই এখন পাবলিককে শোনানোর মতো। আগে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের পেছনে ঘুরতো, এখন আমরা ঘুরেও এ্যালবাম দেয়াটা কঠিন হয়ে গেছে। কোন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানই কি এগিয়ে আসছে না একদম? এগিয়ে আসছে না, একদমই আসছে না। সিনিয়র কেউও এ্যালবাম করছে না। এমনকি যারা বাজারে হটকেক হিসেবে পরিচিত; যেমন ধরো ফুয়াদ, হাবিব, হৃদয়; ওরাও এ্যালবাম করছে না কিন্তু। মাঝখানে বাপ্পা একটা এ্যালবাম করেছে, ওটার খবর কেবল উনিই জানেন। সবাই সলো করে একটা একটা ভিডিও বানিয়ে কী কী জানি করছে, চ্যানেলে চ্যানেলে দিচ্ছে; এটা শুধু বাজারে টিকে থাকার জন্য আর কী। কোনো টাকা পাচ্ছে না কেউই, আমি নিশ্চিত। এগুলো করে শুধু ‘আমি আছি’ জানান দেয়া যায়। এইভাবে টিকে থাকতে চাই না আমি। তারচেয়ে বরং আমি লাইভ করছি। যাদেরকে গান শোনাচ্ছি, ওদের থেকে সরাসরি ফিডব্যাকটা পাচ্ছি। যা টাকা-পয়সা পাচ্ছি ওখান থেকে, ওটা দিয়েই আমার সংসার চলে যাচ্ছে। আমি খুশি আছি। আমার এখন এ্যালবাম না করলেও চলবে। যখন খুব নিয়মিত ছিলেন, তখন আর এখনকার সংগীতাঙ্গনের মধ্যে বিশেষ কোন পরিবর্তন চোখে পড়ে? আমাদের সময়ে তো অনেক গান বের হয়েছে। ভাল ভাল গান। অথচ, গত পাঁচ বছরে আমার তো মনে হচ্ছে না একটা গানও বের হয়েছে কারো কাছ থেকে, যেটা খুব জননন্দিত হয়েছে। ভাল গান পাচ্ছি না আসলে। তবে, ভাল মিউজিশিয়ান এসেছে কিছু, যারা খুব ভাল বাজাচ্ছে। ভাল গান হচ্ছে না, সিডি চলছে না; এসব অভিযোগের ফাঁকে ফাঁকে ‘সিডি’ নামক ডিভাইসটাই তো উঠে যাচ্ছে শুনলাম! এখন তো সিডি প্লেয়ারও নাই কারও বাসায়! সবাই মোবাইলেই গান শোনে। এতে করে কি সঙ্গীত জগতের কোন উপকার হবে বলে মনে হয়? আমি কিছু জানি না, কী হবে না হবে। গত পাঁচ বছর ধরে আমি এগুলো নিয়ে চিন্তা করাই বন্ধ করে দিয়েছি। আমি বেশি চিন্তা নিতে পারি না। সবসময় ফ্রি থাকতে চাই। এগুলো নিয়ে চিন্তা করতেও আমার কেমন যেন ভাল লাগে না। এখন ব্যাপারটা হচ্ছে- যারা বই করে, তাদের কাছে একটা হার্ডকপি না থাকলে কেমন লাগে! কাউকে দেখাতেও তো পারে! একটা বাস্তবিক জিনিস, একটা বস্তু আছে আমার হাতে। এটা না হয়ে যদি জিনিসটা ইথারে হয়ে যায়; যেমন, আমি একটা বই বের করেছি, এটা আপনারা ইথারে দেখেন, ওই যে আকাশে-বাতাসে, কিংবা মোবাইল থেকে পড়ে নেবেন। এটা আসলে খুবই দুঃখজনক। মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো তো প্রচুর গান বিক্রি করছে বিভিন্ন শিল্পীদের। সম্মানী কি দেয় না ওরা? সামনে পাব কিনা জানি না, সেটা চিন্তাও করি না। কিন্তু আগে যেগুলো গেয়েছি, সেগুলো যে পরিমাণে ওরা বিক্রি করেছে বা এখনও করছে, ওখান থেকে আমাকে যদি আটআনা করেও দিত; আজকে তো আমার ঢাকা শহরে কয়েকটা বাড়ি থাকার কথা! এই যে দিচ্ছে না, তার বিরুদ্ধে আপনারা কিছু বলছেন না? আপনাদের কেউ সহায়তা করছে না এ ব্যাপারে? কেউ তো সহায়তা করছেই না, বরং কিভাবে কী করলে কী সুবিধা হয়, সেই ব্যাপারেও জানি না। কেউ কেউ নাকি অনেক কিছু করার পর টাকা পেয়েছে। মামলা করে, উকিল ধরে ওদের কাছ থেকে টাকা আদায় করার মতো ক্ষমতা আমার নেই। আমি ওইসব কিছু বুঝিও না। আমি বিশ্বাস করি যে, ওগুলো আমার কর্ম না। সঙ্গীত করতে এসে যদি ওদের বিরুদ্ধে মামলা করে টাকা উদ্ধার করতে হয়, আমার ওই টাকার দরকার নেই। বেশ ক’বছর ধরেই আমাদের গানগুলো ঘুরেফিরে একই বৃত্তের মধ্যেই থাকছে। একই রকম সুর, সঙ্গীত, কথা। এই বৃত্ত থেকে কেন বের হতে পারছি না আমরা? আসলে, দুই ধরনের আর্টিস্ট আছে। কেউ গানের জন্য শ্রোতা বানায়, কেউ শ্রোতার জন্য গান বানায়। পার্থক্যটা আসলে এই যায়গাতেই। যারা শ্রোতার জন্য গান বানাচ্ছে, তারা একই বৃত্তে ঘুরতে থাকবে। আমার দরকার নেই শ্রোতার। আমি গান বানাব। তারপর গানের জন্যই শ্রোতা সৃষ্টি হয়ে যাবে। আপনি যে জন্য সঙ্গীত করেন, যতটুকু পেয়েছেন, যথেষ্ট মনে হয়? আমি আসলে ওরকম কিছু পাওয়ার জন্য সঙ্গীতটা শুরু করিনি। হ্যাঁ,আমি সঙ্গীত করে ডাল-ভাত খাই, তা ঠিক আছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি চাওয়ার ছিল যে, আমাকে মানুষ ভালবাসবে। সেটা পেয়েছি অনেক। তাতেই আমি খুশি।
×