ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বৌদ্ধ বিহারে অগ্নিসংযোগ মামলার প্রধান আসামির ভূরিভোজে অংশগ্রহণ

কক্সবাজারে দায়রা জজের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

কক্সবাজারে দায়রা জজের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ বহুল আলোচিত রামু বৌদ্ধ বিহারে হামলা ও অগ্নিসংযোগ মামলার প্রধান আসামি ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার অপসারিত চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা তোফায়েল আহমদের আয়োজনে ভূরিভোজে অংশগ্রহণ এবং আতিথেয়তা গ্রহণ করার অভিযোগ তদন্তে সত্য প্রমাণিত হওয়ায় জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রীমকোর্ট। দুর্নীতি, বিচারিক অসততা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ প্রাথমিক তদন্তে পাওয়ায় প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে সুপ্রীমকোর্টের এ সংক্রান্ত জেনারেল এ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিএ) কমিটি অবিলম্বে তাকে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করারও নির্দেশ দিয়েছেন। ১০ ফেব্রুয়ারি জজ সাদিকুলের বিরুদ্ধে দাখিলকৃত দুটি তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে জিএ কমিটি এ নির্দেশ দেয়। প্রশাসনিক আপীল ট্রাইব্যুনালের সদস্য জেলা জজ ড. মোঃ গোলাম মর্তুজা মজুমদারকে বিভাগীয় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। অভিযুক্ত জজ সাদিকুলের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ হচ্ছে, তিনি রামু বৌদ্ধ বিহারে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার মামলার প্রধান আসামি তোফায়েলের আতিথেয়তা গ্রহণ করে মাছ শিকার করতে গিয়েছিলেন নাইক্ষ্যংছড়িতে। মাছ শিকারের পর আসামি তোফায়েল আহমদের আয়োজনে ভূরিভোজেও অংশগ্রহণ করেন তিনি ও তার সঙ্গে যাওয়া অন্যরা। কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নুরুল আজিম কনক প্রধান বিচারপতির কাছে লেখা এক চিঠিতে এসব অভিযোগ আনেন। চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ মোঃ নুরুল হুদার তদন্ত প্রতিবেদনে ওই অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়। নুরুল আজিম কনক প্রধান বিচারপতির কাছে লেখা অভিযোগে বলেন, গত বছরের ১৭ অক্টোবর পার্বত্য নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার চেয়ারম্যান (বরখাস্ত) জামায়াতে ইসলামীর সশস্ত্র ক্যাডার এবং বৌদ্ধ বিহারে অগ্নিসংযোগ মামলার মূল পরিকল্পনাকারী তোফায়েল আহমদের আমন্ত্রণে ভূরিভোজে ও উপজেলা হেড কোয়ার্টার সংলগ্ন লেকে জজ সাদিকুল ইসলাম মাছ ধরতে যান। গত ১৮ জানুয়ারি কক্সবাজার সার্কিট হাউসের কনফারেন্স রুমে অভিযোগের বিষয়ে অভিযোগকারী কনকের জবানবন্দী ও এর সমর্থনে উপস্থাপিত কয়েকজন সাক্ষীর টেলিফোনে নেয়া বক্তব্য এবং ধারণকৃত আলোকচিত্র পরীক্ষা, বিশ্লেষণ, পর্যালোচনা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদনে জজ নুরুল হুদা বলেন, জেলা ও দায়রা জজ মোঃ সাদিকুল ইসলাম রামু বৌদ্ধ বিহার ভাংচুর ও পোড়ানো মামলাটির বিচার চলাকালে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের আগের দিন গত ১৭ অক্টোবর জেলার পার্শ্ববর্তী বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদরে মামলাটির আসামি তোফায়েল আহমদের আয়োজনে মাছ ধরতে গিয়েছেন এবং ওই আসামির আয়োজনে আপ্যায়ন তথা ভূরিভোজ গ্রহণ করেছেন, যা অনাকাক্সিক্ষত এবং একজন বিচারকের ক্ষেত্রে গুরুতর অসদাচরণ। জজ সাদিকুলের বিরুদ্ধে দাখিলকৃত অপর তদন্ত প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ নূরুল হুদা বলেন, কক্সবাজারের জেলা জজ হিসেবে যোগদানের পর থেকে সাদিকুল ইসলাম তার নিজের ও অন্যান্য আদালতের হাজার হাজার পিস ইয়াবা সংক্রান্ত ফৌজদারি বিবিধ মামলা, স্পর্শকাতর খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন এবং এ্যাসিড মামলার আসামিদের অর্থের বিনিময়ে জামিন দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
×