ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পূর্বাচলে প্লট জালিয়াতি

রাজউকের চার কর্মচারী সাসপেন্ড ॥ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

রাজউকের চার কর্মচারী সাসপেন্ড ॥ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের সাড়ে সাত কাঠার প্রায় ৩ কোটি টাকা মূল্যের একটি প্লট জাল কাগজপত্র ও ছবি বদলের মাধ্যমে অন্য ব্যক্তিকে পাইয়ে দিতে সহযোগিতার অভিযোগে ৪ কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে রাজউক কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া ঘটনা তদন্তে রাজউকের পরিচালক প্রশাসন যুগ্ম-সচিব দুলাল কৃঞ্চ সাহার নেতৃত্বে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বরখাস্তকৃতরা হলেন রাজউকের প্রধান শাখার এস্টেট ও ভূমি-৩ শাখার অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর দীপক চন্দ্র শর্মা, ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পের জরিপ সাথী মোঃ মঞ্জুর আলী, প্রধান কার্যালয়ে এস্টেট ও ভূমি-৩ শাখায় কর্মরত কনিষ্ঠ হিসাব সহকারী মোঃ ফারুক মিয়া, একই শাখার এমএলএসএস পারভেজ চৌধুরী। প্রতারণার সঙ্গে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। রাজউকের দীর্ঘ বছরের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো প্লট জালিয়াতির সহযোগিতার জন্য ৪ কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করলো। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ ধরনের প্রতারণার কাজে সহযোগী কর্মকর্তা কর্মচারীসহ অন্য যে কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে রাজউক কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, প্লটের আসল মালিকের ফটো পরিবর্তন করা, মিথ্যা তথ্য দিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন থেকে ভুয়া পরিচয়ে প্রত্যয়ন সংগ্রহ করা, ভোটার আইডি কার্ডে নাম পরিবর্তন করার চেষ্টাসহ প্রকৃত মালিকের ৪র্থ কিস্তির টাকা পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রায় ৩ কোটি টাকা মূল্যের এ প্লটটি আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে তা বেরিয়ে এসেছে। মঙ্গলবার ফটো পরিবর্তনের মাধ্যমে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের প্রায় তিন কোটি টাকা মূল্যের একটি প্লট বিক্রির চেষ্টার অভিযোগে হালিমা কাউছার নামে এক নারী প্রতারককে পুলিশে দেয় রাজউক। পরে তাকে রাজউক ভবন থেকে আটক করে মতিঝিল থানায় সোপর্দ করা হয়। এরপর প্রচলিত আইনে মতিঝিল থানায় একটি মামলা করে রাজউক। বর্তমানে উক্ত নারী কারাগারে আটক রয়েছেন। আটককালে তাৎক্ষণিকভাবে উক্ত প্রতারক হালিমা কাউছার জানান, তার সঙ্গে বরখাস্তকৃতরা জড়িত রয়েছেন। এর পরই রাজউক প্রশাসন তাদের সংশিষ্ট কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ইঙ্গিত দেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান দুলাল কৃষ্ণ সাহা জনকণ্ঠকে বলেন, প্রাথমিকভাবে অনিয়মের সঙ্গে রাজউকের চারজন কর্মচারীর সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে বিস্তারিত জানতে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি তদন্ত করবেন। এ কমিটি আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবে। এ বিষয়ে রাজউকের সদস্য (এস্টেট) মোঃ আব্দুল হাই জনকণ্ঠকে বলেন, নাসরীন রহমান নামের একজন মহিলা পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২২ নম্বরে সেক্টরের ১২৩ নম্বর রোডে সাড়ে ৭ কাঠার ১৮ নম্বর প্লটটি পান। তিনি তিন কিস্তির টাকাও জমা করেছেন। হঠাৎ করে হালিমা কাউছার নামে এক মহিলা নিজেকে নাসরীন রহমান দাবি করে প্লটের চতুর্থ কিস্তির ৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা জমা দেন। তিনি প্লটের নথিপত্রে থাকা ছবি পুরনো হয়েছে দাবি করে পরিবর্তনেরও আবেদন করেন। এরপর সব ধরনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জালিয়াতিও করেছেন হালিমা কাউছার। আর এতে সহায়তা করেছেন রাজউকেরই কয়েক অসাধু কর্মচারী। পরে প্রকৃত মালিকের অভিযোগের ভিত্তিতে দুই পক্ষকে মুখোমুখি করা হলে হালিমা কাউছারের জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে।
×