স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিচার বিভাগের মর্যাদা রক্ষার আহ্বান জানিয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকলে দেশে গণতন্ত্র থাকবে, তাই বিচার বিভাগকে নিয়ে কটাক্ষ করবেন না।’ আমাদের সংবাদ মাধ্যম ব্যবসা হিসেবে কাজ করছে । সংবাদ মাধ্যম কোন বিজনেস না। এখানে যারা কাজ করেন তাদের এটি পেশা। বুধবার সুপ্রীমকোর্ট বার মিলনায়তনে প্রয়াত ব্যারিস্টার শওকত আলী খানের স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আজকে যখনই কোন ইস্যু হয় তখন বারকে দেখি বিভক্ত হতে। তখন আমাদের এই আইনজীবীরা বিচার বিভাগ নিয়ে কটাক্ষ করতে পিছপা হন না। এটা খুব কষ্ট লাগে। এই বিচার বিভাগ নিয়ে আপনাদের চিন্তা করতে হবে। অনেক পরীক্ষার পর আজকে এই পর্যায়ে এসেছে। সেই ব্রিটিশ আমল থেকে কয়েকটি মার্শাল ল’, কতদিন কতগুলো ইয়ে হয়েছে। সংবিধানকে ছিন্নভিন্ন করা হয়েছে। এই বিচার বিভাগই আবার সংবিধানকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে এনেছে। আপনারা রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করেন। আমি আশা রাখব, কেউ বিচার বিভাগকে কটাক্ষ করবেন না।
তিনি আরও বলেন, এই বিচার বিভাগ এত স্ট্রং, আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, আপনারা যতই সমালোচনা করেন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণœ হবে না। সমুদ্রে যদি কিছু বিষ ঢেলে দিই এতে সমুদ্রের পানি নষ্ট হয় না। ঠিক সে রকম দু’একজন যারা বিচার বিভাগের সমালোচনা করেন, এতে সাময়িকভাবে ক্ষতি হলেও আইনের শাসন কোন দিনও নষ্ট হবে না।
মার্টিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ডের দুটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সে দেশের সংবাদ মাধ্যম নৈতিকতার কথা বিবেচনা করে অনেক কিছু প্রকাশ করে না। কিন্তু আমার দেশের সংবাদ মাধ্যম বিচার বিভাগের মান ক্ষুন্ন করতে একেবারে পিছপা হন না। সে দেশের সংবাদমাধ্যম নৈতিকতা দেখত। সংবাদ মাধ্যমে বিচার বিভাগের ভাল দিক তুলে ধরা উচিত। আমাদের দেশের সংবাদ মাধ্যম নিয়ে আমার খুব কষ্ট লাগে। সংবাদ মাধ্যম রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । আজকে যদি আমরা সংবাদ কর্মীদের বিরুদ্ধে কনটেম করি। তাহলে মামলা দেখব কিভাবে? তিনি আইনজীবীসহ সকলকে আনুরোধ করে বলেন, আমাদের সবাইকে বিচার বিভাগকে মানতে হবে । বিচার বিভাগের মান যেন অক্ষুন্ন থাকে এ জন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল বাসেত মজুমদার। এতে বক্তব্য রাখেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, এএফ হাসান আরিফ, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী, সিনিয়র আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, শ ম রেজাউল করিম। উপস্থিত ছিলেন দেশীয় সংস্কৃতির সভাপতি এ্যাডভোকেট গৌরাঙ্গ চন্দ্র কর, সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা তারাসহ শতাধিক আইনজীবী। প্রধান বিচারপতি বলেন, শওকত আলীর সঙ্গে আমরা খুব ক্লজ ছিলাম। প্রত্যেক দিন শওকত আলী খান আমার সিনিয়রের সঙ্গে দেখা করে যেতেন। তিনি বলেন, এখানে আমরা যারা উপস্থিত হয়েছি তারা সবাই একই পরিবারের লোক। আপনারা শুনেছেন শওকত আলী রাজনীতি করতেন। কিন্তু তিনি নৈতিকতা বিরোধী কাজ করতেন না। নৈতিকতার কথা আমাদের সবারই মেনে চলা উচিত। এ প্রফেসনের অনেক কিছুই আমরা হারিয়ে ফেলছি। তিনি বলেন, শওকত আলীর গুণাগুণ আমরা মূল্যায়ন করি। মাহমুদুল ইসলামের জীবনও মূল্যায়ন করি। তিনি বলেন, আমরা বিচার বিভাগে কোন পক্ষপাতিত্ব করি না। অনেকেই মামলা থেকে জামিন দিয়েছে । বিচার বিভাগ নিয়ে অনেক রাজনীতিবিদ কথা বলেন, যা ঠিক নয়।