ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আসন্ন ইউপি নির্বাচনে বিজিবি মোতায়েনের সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

আসন্ন ইউপি নির্বাচনে বিজিবি মোতায়েনের সিদ্ধান্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, র‌্যাব ও আনসারের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েনেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদিও ইসির নিরাপত্তা পরিকল্পনায় প্রাথমিকভাবে বিজিবি ছাড়া নির্বাচন পরিচালনা করার কথা বলা হয়। কিন্তু সে অবস্থা থেকে সরে এসে এখন ইসির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বিজিবি ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। তবে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনার জন্য এবার অধিকসংখ্যক অস্ত্রধারী আনসার সদস্য নিয়োগের পরিকল্পনা করছে ইসি। বুধবার নির্বাচন কমিশনার মোঃ শাহনেওয়াজ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, বিজিবি ছাড়া নির্বাচন পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। গত পৌরসভা নির্বাচনে যেসব বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল ইউপি নির্বাচনেও সেসব বাহিনী থাকবে। তবে এবার বেশিসংখ্যক আমর্ড আনসার নিয়োগ করা হবে। প্রথম ধাপে পৌনে সাত হাজার ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া প্রতিধাপে সমসংখ্যক নির্বাচনী কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে। তাই শুধু পুলিশ, র‌্যাব, আনসার সদস্য দিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন করা যাবে না। এসব বাহিনীর পাশাপাশি বিজিবিও দরকার হবে। পৌরসভা নির্বাচনে যা ছিল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আরও বেশি কিছু করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এর আগে ইউপি নির্বাচনের যে নিরাপত্তা পরিকল্পনা করা হয় সেখানে এ নির্বাচনে বিজিবি না রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে উল্লেখ করা হয় ইউপি নির্বাচনের নিরাপত্তা পরিকল্পনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিজিবিকে রাখা হচ্ছে না। বিজিবি না রাখার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে এর আগে সাংবাদিকদের কাছে নির্বাচন কমিশনার বলেন, বিজিবি ছাড়াই র‌্যাব, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে নিরাপত্তা পরিকল্পনা। যেহেতু ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা অনেক কম হয়। তৃণমূলের এ নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করে তারা সবাই সবার পরিচিত। অনেক ক্ষেত্রে একই পাড়া বা মহল্লা বা পরিবারের লোকেরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নেন। তাই এ নির্বাচনে তারা কোন ঝামেলায় যাবেন না। কিন্তু বুধবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিজিবি ছাড়া নির্বাচন পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে তিনি বলেন, পৌরসভা নির্বাচনেও সেনাবাহিনী নিয়োগ করা হয়নি। সেনাবাহিনী ছাড়াই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। সেনা মোতায়েন একটি চূড়ান্ত ব্যবস্থা। ইউপি নির্বাচন যেহেতু গ্রামপর্যায়ের নির্বাচন, সেহেতু সবাই আত্মীয়-স্বজনের মধ্যেই। কাজেই বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা ঘটবে সে আশঙ্কাও করা হচ্ছে না। বিএনপির দাবি অনুযায়ী নির্বাচনে কোন সম্প্রীতি নষ্ট হবে সে চিন্তাও ইসি করছে না। কাজেই এ নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে মোতায়েনের কোন কারণ দেখছে না ইসি। তবে তিনি উল্লেখ করেন, সব সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে কমিশন বৈঠকে। স্বাভাবিক অবস্থায় সেনা মোতায়েনের কোন কারণ নেই। সেনা মোতায়েনের মতো কোন পরিস্থিতিও বিরাজ করছে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আচরণবিধি কেউ ভঙ্গ করলে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা রাখে ইসি। এখনও যেহেতু প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি, তাই কে কি বলল বা করল সেদিকে নজর দেয়ার সুযোগ নেই। নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রসঙ্গে বলেন, ইউপি নির্বাচন যেহেতু একটি বড় নির্বাচন, তাই নির্বাচন কর্মকর্তার পাশিপাশি কৃষি, মৎস্য অফিসারদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ চলছে বলেও তিনি জানান। ইউপি নির্বাচন স্থগিতে ব্যক্তিপর্যায়ে একাধিক আবেদন ইসিতে ॥ এদিকে কমিশন জানিয়েছে ইউপি নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার পর বিভিন্ন এলাকা থেকে সীমানা জটিলতার অভিযোগ জানিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন স্থগিতের একাধিক আবেদন জমা পড়েছে। পাশাপাশি নিয়মবহির্ভূতভাবে ভোটার স্থানান্তরের অভিযোগও আসছে। তবে এ বিষয়ে কমিশন জানিয়ে দিয়েছে এ মুহূর্তে নির্বাচন স্থগিতের কোন সুযোগ নেই। বিষয়ে কারও কোন অভিযোগ থাকলে আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কমিশন জানিয়েছে প্রথম ধাপে নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করে সীমানা সংক্রান্ত ও আইনী জটিলতার কারণে ১৩ ইউপিকে বাদ দেয়া হয়। এখন প্রথম ধাপের ইউপিগুলোর মধ্য থেকে ব্যক্তিপর্যায়ে নির্বাচন স্থগিতের জন্য এক ডজন দাবি-আপত্তি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে জমা হয়েছে। মাঠপর্যায় থেকেও কর্মকর্তারা প্রার্থীদের আবেদন পাঠাচ্ছেন। এ ধরনের একটি আবেদনপত্র ইসিতে পাঠিয়েছেন বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার পাঁচ নম্বর কাজলা ইউপির চেয়ারম্যান এএসএম রফিকুল ইসলাম। তার দাবি, যমুনার ভাঙনে ইউনিয়নের ১, ২, ৩ ও ৯ ওয়ার্ড বিলীন হয়েছে। ৭ ও ৮নং ওয়ার্ড আংশিক বিলুপ্ত। এ এলাকার সব ভোটার ইউপির বাইরে প্রতিষ্ঠিত ও বসবাসরত। বর্তমানে ভোটের তিনটি কেন্দ্র ইউপির আওতার বাইরে। সীমানা পুনর্বিন্যাস না করা পর্যন্ত এ ইউনিয়ন পরিষদে তিনি ভোট স্থগিতের দাবি জানান। শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সদর ইউপির সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী হাসানুজ্জামান রিয়াদ এক আবেদনে অভিযোগ করেছেন, নালিতাবাড়ী পৌরসভার দুই ব্যক্তি তফসিল ঘোষণার পর ইউপির প্রার্থী হতে ভোটার স্থানান্তরের পাঁয়তারা করছেন। নির্বাচন কমিশনার মোঃ শাহনেওয়াজ বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগ ইউপির সীমানা পুনর্বিন্যাস করেছে। ইসির কাছে এ নিয়ে অভিযোগ করে লাভ নেই। সবকিছু ঠিকমতো পেয়ে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। এখন এ বিষয়ে কিছু করার নেই। তিনি বলেন, তফসিল ঘোষিত এলাকায় ভোটার স্থানান্তরের কাজও বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রার্থী হতে সংশ্লিষ্ট ইউপি ও ওয়ার্ডের ভোটার হতে হবে। এখন আর এলাকা পরিবর্তন করে স্থানান্তরের সুযোগ নেই। ইসিতে এ আবেদন করলেও তা আমলে নেয়া হবে না। কেউ ভোটার ও এলাকার ভুল তথ্য দিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিলে বাছাইয়ে তা বাতিল হয়ে যাবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
×