ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফেসবুকে প্রতারণা- তিন বিদেশীসহ আটক ৫

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ফেসবুকে প্রতারণা- তিন বিদেশীসহ আটক ৫

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ফেসবুকসহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জালিয়াতি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়া প্রতারক চক্রের তিন বিদেশীসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। চক্রটির সঙ্গে সুন্দরী বিদেশিনীও রয়েছে। নারীর মাধ্যমে ধনাঢ্যদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলে ব্ল্যাকমেল করত। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া ২০ লাখ টাকার মধ্যে ৫৩ হাজার উদ্ধার হয়েছে। বুধবার র‌্যাব-২ এর একটি দল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, বাংলাদেশী মোহাম্মদ আলী (৩০) ও মঞ্জুর মাহমুদ (৩১)। আর তাদের সহযোগী নাইজিরিয়ার নাগরিক ইজোচিউ ফ্রাঙ্ককিং (৩০), অবি হেসি (৩৪) ও ইক ফ্লেস্ক (৩৫)। র‌্যাব জানায়, আর্থিকভাবে সচ্ছল তরুণ কিংবা তরুণীকে অভিনব পন্থায় ফেসবুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে টাকা পয়সা আত্মসাত করা একটি পুরনো কৌশল। সম্প্রতি এ ধরনের অসাধু চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কিছু বিদেশী নাগরিকরাও। তারা গ্রেফতারকৃত দুই বাংলাদেশীর মাধ্যমে প্রথমেই সচ্ছল ব্যক্তিদের মোবাইল ফোন নম্বর, বাসাবাড়ি বা অফিসের ঠিকানা যোগাড় করে। এমনই কৌশলে ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার এক চিকিৎসকের সঙ্গে তারা সখ্য গড়ে তোলে। ওই চিকিৎসকের সঙ্গে ব্রিটিশ নাগরিক ডেসমন্ড বি স্যাম্যুয়েলের নিয়মিত কথা হয়। চিকিৎসকের সঙ্গে ডেসমন্ডের হোয়াটস এ্যাপ-জিআইয়ের মাধ্যমে ব্রিটিশ ভাষায় কথা হয়। বন্ধুত্বের সূত্র ধরে ডেসমন্ড তাকে ইংল্যান্ড থেকে উপহার পাঠায়। গত ১০ ফেব্রুয়ারি মিনরো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি কুরিয়ার সার্ভিসের এক প্রতিনিধি ভাষায় চিকিৎসককে তার জন্য উপহার সামগ্রী আসার তথ্যটি জানায়। পরিবহন ব্যয় বাবদ ওই চিকিৎসককে সাড়ে ৫৬ হাজার টাকা সোনালী ব্যাংক উত্তরা শাখায় জমা দিতে বলা হয়। এতে স্বাভাবিক কারণেই চিকিৎসকের আস্থা বাড়ে। কারণ একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মাধ্যমে তিনি টাকা দিচ্ছেন। এতে ন্যূনতম কোন প্রতারণার সুযোগ নেই। যথারীতি চিকিৎসক টাকা দিয়ে দেন। পরবর্তীতে আবার ওই প্রতিনিধি গিফট বক্সে ডায়মন্ডের অলঙ্কার আছে বলে জানান। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা। সেই গিফট বক্স সংগ্রহ করতে তাকে আরও প্রায় ২ লাখ ৬৩ হাজার টাকা ব্যাংকে দিতে হবে। এ সময় আরেকটি ব্যাংকের হিসাব নম্বর দেয়া হয়। এবার মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এ্যাকাউন্ট নম্বর দেয়া হয়। ওই চিকিৎসক যথারীতি টাকা হিসাব নম্বরে দেন। এরপর একই কায়দায় ওই চিকিৎসকের কাছ থেকে প্রায় ১১ লাখ টাকা দাবি করা হয়। এবারও ব্যাংক এ্যাকাউন্ট নম্বর দেয়া হয়। এক পর্যায়ে বিষয়টি চিকিৎসকের সন্দেহ হলে তিনি র‌্যাবকে জানান। র‌্যাব অভিযান চালিয়ে ব্যাংক হিসাবের দুই মালিক মোহাম্মদ আলী (৩০) ও মঞ্জুর মাহমুদকে (৩১) ব্যাংকের জমাকৃত টাকা উত্তোলন করার সময় গ্রেফতার করে। পরে গ্রেফতারকৃতদের তথ্যমতে, গুলশান নিকেতনের বি ব্লকের ১ নম্বর সড়কের ৮ নম্বর নাইজিরিয়ান হাউস থেকে ওই তিন নাইজিরীয়কে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে ফেসবুক, হোয়টস এ্যাপসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এভাবে প্রতারণার বিষয়টি। গ্রেফতারকৃত নাইজিরিয়ানরা জানান, তারা ফেসবুক, টুইটার, ভাইবার, হোয়াটস এ্যাপ এবং ইমোর আইডির মাধ্যমে এভাবে প্রতারণা করে আসছিল। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া ৫৩ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে। আটক নাইজিরিয়ানরা ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট থেকে গ্রেফতারকৃত দুই বাংলাদেশীর সঙ্গে গার্মেন্টস ব্যবসা করে আসছিল। গার্মেন্টস ব্যবসার আড়ালে তারা মূলত প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। গ্রেফতারকৃত দুই বাংলাদেশী প্রতারণার টাকার শতকরা ১০ ভাগ পেত। বাকি ৯০ ভাগ হাতিয়ে নিত নাইজিরীয়রা। তাদের এমন প্রতারণার সঙ্গে বিভিন্ন দেশের সুন্দরী নারীরা রয়েছে। বন্ধুত্ব গভীর করার জন্য ওসব নারীকে ব্যবহার করত তারা। অনেক সময় ওসব বিদেশী নারীকে দিয়ে টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ব্ল্যাকমেল করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করত। ইতোমধ্যেই চক্রটি অন্তত ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
×