ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সুইডেনের সঙ্গে চুক্তি ২৩ ফেব্রুয়ারি

পাঁচ বছরে অনুদান ১৪০৮ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

পাঁচ বছরে অনুদান ১৪০৮ কোটি টাকা

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ বাংলাদেশকে ১ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা অনুদান দিচ্ছে সুইডেন। আগামী পাঁচ বছরে (২০১৬-২০ সাল পর্যন্ত) এ অনুদান সহায়তা করবে দেশটি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ও সুইডেনের মধ্যে উন্নয়ন সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হবে বলে জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ডেস্কের দায়িত্বশীল অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, সুইডেন যে অনুদান সহায়তা দিচ্ছে তা পরবর্তীতে কমে বা বেড়ে যেতে পারে। এটা নির্ভর করবে প্রকল্পের ব্যয়ের উপর। এটি হবে একটি আমব্রেলা চুক্তি। এই চুক্তির আওতায় পরবর্তীতে প্রকল্পভিত্তিক অনুদান সহায়তা দেবে সুইডেন। দেশটি অতীতের মতোই ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন এইইকে (সুইডিস কোনাল) বা ১৪শ’ ৮ কোটি টাকা অনুদান দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর এগ্রিমেন্ট বিটুইন সুইডেন এ্যান্ড বাংলাদেশ অন ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন শীর্ষক এ চুক্তিটি স্বাক্ষরের কথা থাকলেও পরবর্তীতে জানানো হয় সে দেশের ক্যাবিনেটে অনুমোদন না হওয়ায় কিছুটা দেরি হবে। পরবর্তীতে তারা তারিখ জানিয়েছে। এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন ও বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত জোহার ফ্রাইসেল। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্র জানায়, সুইডেন বাংলাদেশের অন্যতম সহযোগী। তারা অনুদান দিয়ে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছে। গত পাঁচ বছরে প্রতিবছর ২৮০ কোটি টাকা (২৩৫ মিলিয়ন এসিকে) অনুদান সহায়তা দিয়ে আসছে সুইডেন। মাল্টি ডোনার ট্রাস্ট ফান্ডের মাধ্যমে সুইডেন দেশের প্রাথমিক শিক্ষা, কর্মজীবী শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ মহিলাদের ক্ষমতায়ন, পরিবেশসহ কয়েকটি খাতে এ অনুদান সহায়তা দিচ্ছে। বর্তমানে দেশের অর্থনীতিতে দাতাদের অনুদানের পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে সুইডেনে বড় অঙ্কের অনুদান একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন। কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, অনুদান যত পাওয়া যাবে ততই ভাল। এটি আমাদের জন্য দরকার। তবে সাধারণত যেসব দেশ অনুদান দেয় তারা কারিগরি সহায়তার ক্ষেত্রে অনুদান দিয়ে থাকে। এটি আরও ভাল। কেননা অনেক বিষয়ে আমাদের প্রযুক্তি সক্ষমতা থাকে না। যেমন ডেল্টা প্ল্যান বিষয়ে বাংলাদেশের কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। কিন্তু নেদারল্যান্ড অনুদান দিয়ে এ বিষয়ে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন আমাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়ছে, অন্যদিকে পরিকল্পনাটিও তৈরি হচ্ছে। অনুদানের আর একটি বৈশিষ্ট হচ্ছে যে দেশ বা সংস্থা অনুদান দেয় তারা সাধারণ পরামর্শকও দিয়ে থাকে। এটিও খারাপ কিছু নয়। আমাদের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। ইআরডি জানায়, আগামী অর্থবছরগুলোতে বৈদেশিক সহায়তা আরও অনেক বৃদ্ধি পাবে বলে। সংস্থাটির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, ২০১৫ সালের ১৫-১৬ নবেম্বর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের বৈঠক (বিডিএফ) বৈঠকে ব্যাপক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে সরকারের সঙ্গে উন্নয়নে এক সঙ্গে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে উন্নয়নসহযোগীরা। বিডিএফ বৈঠকের বিভিন্ন আলোচনায় কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, অবকাঠামো, সুশাসন, স্বাস্থ্য, মানসম্মত শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা এবং উন্নয়নের মূল ধারায় জেন্ডার সমতা আনয়ন ইত্যাদি খাতে সুনির্দিষ্ট মতামত ও যৌথ ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। সেই সঙ্গে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যসমূহ এবং টেকসই উন্নয়নে সরকার ও উন্নয়নসহযোগী সংস্থাসমূহের মধ্যে অংশীদারিত্ব তৈরির অঙ্গীকার করা হয়েছে। অন্যদিকে বৈদেশিক অর্থ ব্যবহারের সক্ষমতা বাড়ছে বাংলাদেশের। এ বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, গত তিন বছর ধরে প্রতিবছর বিশ্বব্যাংকের ডিসবাসমেন্ট তার আগের বছরের চেয়ে বেশি হয়েছে। এক্ষেত্রে যেটি হয়েছে সেটি হচ্ছে চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ওপর মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। ডোনার এবং সরকার উভয় পর্যায়েই এটি করা হয়েছে। যেমন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের প্রকল্পগুলোতে একাধিক দাতা যুক্ত ছিল। এক্ষেত্রে একটি দাতা বেশি অর্থছাড় করলে তো হবে না। সবার অর্থছাড় থাকতে হবে। এজন্য যেসব প্রকল্পের অর্থছাড়ে সমস্যা ছিল সেগুলো বিষয়ে প্রতিমাসে ডোনার ও সরকারী পর্যায়ে টেকনিক্যাল লোকজন প্রথমে বৈঠক করতেন। সেখানে সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের করণীয় নির্ধারণ করা এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তাকে চিহ্নিত করা হতো। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের একটি এ্যাকশন প্ল্যান করা হতো। পরের মাসের মিটিংয়ে আবার এগুলোর ফলোআপ করা হতো। যদি দেখা যেত সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তখন প্রতি তিন মাসে উচ্চ পর্যায়ের (সচিব) একটি বৈঠক করা হতো। সেখানে প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে আমন্ত্রণ করা হতো। এভাবে সমস্যা সমাধান করা হতো। তিনি আরও বলেন, আগে বৈঠক ডাকলে মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কেউ আসতেন না। ওই সময় সমস্যা চিহ্নিত হলোও ওই পর্যন্তই থাকত। সমাধান হতো না। কিন্তু এখন সমস্যা সমাধানে সবার আন্তরিকতা ও গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ার ফলেই বৈদেশিক অর্থছাড় বাড়ছে। ইআরডি সূত্র জানায়, গত ছয় মাসে বেড়েছে উন্নয়নসহযোগীদের প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড়। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত উভয় ক্ষেত্রে গত অর্থবছরের একই সময়ে তুলনায় উর্ধগতি বিরাজ করছে। এ সময়ের মধ্যে বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি এসেছে ১৪৬ কোটি ৭০ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময় ছিল ১০০ কোটি ৩৩ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে অর্থছাড় হয়েছে ১৫৯ কোটি ২৪ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার আর গত অর্থবছরের একই সময়ে ছাড় হয়েছিল ১৫০ কোটি ১৬ লাখ ১০ হাজার মাকিন ডলার। এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে বিশ্বব্যাংক। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। তবে কিছুটা কমেছে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ।
×