ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্যার ব্র্যাডম্যানকে মনে করাচ্ছেন ভোজেস!

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

স্যার ব্র্যাডম্যানকে মনে করাচ্ছেন ভোজেস!

ডন ব্র্যাডম্যান অস্ট্রেলীয়দের ক্রিকেট-দেবতা। ব্যাটিংয়ের অনুপম সৌন্দর্য বিলিয়ে যিনি নিজেই সেই আসন তৈরি করেছেন। টেস্টে যার ব্যাটিং গড় ৯৯.৯৬। ফাস্ট-ক্লাসসহ সাদা পোশাকে সেঞ্চুরি ১৪৬টি! যার অনেক কীর্তি ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা ক্রিকেটাররা স্বপ্নেও ভাবেন না। সেই ব্র্যাডম্যানকেই কি না মনে করাচ্ছেন এ্যাডাম ভোজেস। হোক না সাময়িকের জন্য, তাতেই বা কম কিসে? নিউজিল্যান্ড সফরে প্রথম টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে জয় পেয়েছে স্টিভেন স্মিথের অস্ট্রেলিয়া। এটি ছিল অভিষেক থেকে টানা শততম টেস্ট খেলতে নামা ব্রেন্ডন ম্যাককুলামের বিদায়ী সিরিজের প্রথম ম্যাচ- তাই আগ্রহের কেন্দ্রে ছিলেন তুখোড় এই নিউজিল্যান্ড উইলোবাজ। কিন্তু ০ ও ১০ রানে আউট হয়ে হতাশ করেন তিনি। সেখানে সবাইকে ম্লান করে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টের আলোটা পুরোপুরিই কেড়ে নেন ভোজেস। ম্যাচের নায়ক খেলেন ২৩৯ রানের অবদ্য এক ইনিংস। স্বাগতিক স্পিনার মাইকেল ক্রেইগের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে যখন সাজঘরে ফেরেন দুই আউটের মাঝে ১১১৫ মিনিট ক্রিজে থেকে করে ফেলেছেন ৬১৪ রান! নবেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি- মাঝে কেটে গেছে তিনটি মাস। আগের দুটি ইনিংসে করেছিলেন ২৬৯* ও ১০৬*! দুই বার আউটের মাঝে ৪৯৭ রান সংগ্রহ করে শচীন দ্বিতীয় ও ৪৯০ রান নিয়ে গ্যারফিল্ড সোর্বাস তৃতীয় স্থানে। ৩০ চার ও ৩ ছক্কায় আনিন্দসুন্দর ইনিংস উপহার দিয়ে এদিন আউট হওয়ার পর অবশ্য ভোজেসের গড় ১শ’র নিচে নেমে যায়। তবে সেটি এখনো অবিশ্বাস্য, ৯৭.৪৬! ক্যারিয়ারের শুরুতে ১৯ ইনিংস পর কেবল স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের গড়ই তার চেয়ে বেশি ছিল, ১০২.৫৬। ওয়ানডে হারের ব্যর্থতা ঘুচিয়ে সফরকারী অসিরাও ঘুরে দাঁড়ায় দুর্দন্ত প্রতাপে। ওয়েলিংটনে ইনিংস ও ৫২ রানের বড় জয়ে দুই টেস্টের সিরিজে ১-০তে এগিয়ে যায় ওয়ানডের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। ম্যাককুলামের বিদায়ী আয়োজনের প্রথম লড়াইয়ে লজ্জায় ডোবে স্বাগতিক কিউইরা। ১৯৯৭ সালের পর এই প্রথম ঘরের মাটিতে ব্ল্যাক-ক্যাপসরা হারে ইনিংস ব্যবধানে! অস্ট্রেলিয়ার ৫৬২ রানের জবাবে প্রথম ইনিংসে ১৮৩ রানে অলআউট স্বাগতিকরা চতুর্থ দিনে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে যায় ৩২৭ রানে। ২৩৯ রানের ম্যারাথন ইনিংস উপহার দিয়ে যেখানে আলোচনায় কেবলই ‘বুড়ো’ ভোজেস। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে ভোজেসের আগমনটাই যে ইতিহাস, আলোড়ন জাগানো। গত বছর জুনে পঁয়ত্রিশ পেরিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ডমিনিকা টেস্টে অভিষেক। আভিজাত্যের সাদা পোশাকে বয়সীরা ভাল করবেন, এটাই স্বাভাবিক। তবে ৩৬- এ পা রাখা কারও নামের পাশে যদি ‘অভিষেক’ শব্দটি যোগ হয়, তবে নড়ে চড়ে বসতে বাধ্য! কা-টা এমনই মজার! ৩৫ বছর ২৪২ দিন বয়সে ‘অভিষেক সেঞ্চুরি’ হাঁকিয়ে নতুন রেকর্ড গড়েন এ্যাডাম চার্লস ভোজেস। ম্যাচের অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতিতে খেলেন অপরাজিত ১৩০ রানের দৃষ্টিনন্দন এক ইনিংস। শেষ মুহূর্তে ক্রিস রজার্স ইনজুরির জন্য ছিটকে গেলে ডমিনিকা টেস্ট দিয়ে সাদা পোশাকে অভিষেক হয় ৩৫ উর্ধ ভোজেসের। ২০০৭ সাল থেকে যিনি দলের হয়ে খেলেছেন ৩১ ওয়ানডে ও ৭ টি২০। অভিষেকটাকে রঙিন করে তোলেন ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার ভাগ্য বিড়ম্বিত এই ব্যাটসম্যান। ডানহাতি ব্যাটিংয়ে একাই শাসন করেন ক্যারিবিয় বোলারদের। ২৪৭ বলে ১৩ চার ও ১ ছক্কায় খেলেন অপরাজিত ১৩০ রানের মনোমুগ্ধকর ইনিংস। টেস্টে অভিষেকে সেঞ্চুরি হাঁকানো ১০১ নম্বর ব্যাটসম্যান ভোজেস। তার আগে সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যান জল এই তালিকায় নাম লিখিয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ভোজেসের আগে অভিষেকে তিন অঙ্কের দেখা পেয়েছিলেন শন মার্শ, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে, শ্রীলঙ্কা সফরে। তবে একটা জায়গায় সবাইকে ছাড়িয়ে ভোজেস। সবচেয়ে বেশি বয়সে অভিষেকে সেঞ্চুরির নতুন রেকর্ড গড়েন তিনি। তার আগে ৩৫ বছর ১১৮ দিন বয়স নিয়ে রেকর্ডটি ধরে রেখেছিলেন সাবেক জিম্বাবুইয়ান তারকা ডেভিড হটন। হারারেতে ১৯৯২ সালের অক্টোবরে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে ১২১ রান করেছিলেন তিনি। ডমিনিকা টেস্টে ২৩ বছর পর সেখানে নিজের নামটি খোদাই করে নেন ভোজেস। সর্বোপরি মাত্র পঞ্চম অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেকে সেঞ্চুরি হাকিয়ে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হয়েছিলে ভোজেস। আগের চার জন হলেনÑ মাইকেল ক্লার্ক, স্টুয়ার্ট ক্লার্ক, জেসন ক্রেজা ও প্যাট কুমিন্স। সেদিন ইতিহাসের ১০১তম ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেকেই টেস্টে সেঞ্চুরি হাকান ভোজেস। ২০০০ সালের পর বেশি বয়সে অভিষেক হওয়ার ক্ষেত্রে তৃতীয় স্থানে তার নাম। ৩৫ বছর ২৪২ দিনে টেস্ট অভিষেক হয় তার। এই তালিকায় প্রথম দুটি স্থানে রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ব্রুস ম্যাকগেইন ও ইংল্যান্ডের শন উদাল। আর বেশি বয়সে অভিষেকে টেস্ট সেঞ্চুরি করার ক্ষেত্রে সবার উপরেই রয়েছেন ভোজেস। ৩৫ বছর ২৪২ দিনে টেস্ট অভিষেক হয়েই সেঞ্চুরি করেন তিনি। এতদিন এই তালিকায় সবার উপরে ছিলেন জিম্বাবুয়ের ডেভ হটন। ১৯৯২ সালে হারারেতে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে ৩৫ বছর ১১৭ দিন বয়সে ১২১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন হটন। এছাড়া ১৬০টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলার পর টেস্ট অভিষেক ঘটে আলোচিত ভোজেসের। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সবচেয়ে বেশি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলে টেস্টে অভিষেক হওয়া চতুর্থ খেলোয়াড় ভোজেস। এর আগে মাইক হাসি ১৭৩, ব্র্যাড হজ ১৬৫ ও এন্ড্রু সাইমন্ডস ১৬৫টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলার পর প্রথম টেস্ট খেলার সুযোগ পান। বয়স করে পাওয়া সুযোগের সদ্ব্যবহার করে চলেছেন ভোজেস। ক্যারিয়ারের বয়স এক বছরও হয়নি। ১৪ টেস্টে ৫ সেঞ্চুর ও ৩ হাফ সেঞ্চুরির সাহায্যে ইতোমধ্যে নামের পাশে জমা করেছেন ১২৬৭ রান। অনন্য ভোজেসের প্রশংসা করেছেন সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ। কিংবদন্তিতুল্য এই ক্রিকেটার বলেন, ভোজেস ব্যতিক্রম প্রতিভাবান এক ব্যাটসম্যান। যে তার শেষ সুযোগটুকো কাজে লাগাতে মরিয়া। ১৬০টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলার পর ও জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছে। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে প্রতিনিয়ত রান করে যাচ্ছে। এটা অন্যদের জন্য একটা উদাহরণ হতে পারে।
×