ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মাহমুদা সুবর্ণা

আত্মপ্রত্যয়ী ডেনি শিপার্স

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

আত্মপ্রত্যয়ী ডেনি শিপার্স

তরুণ প্রতিভাবান এ্যাথলেট হিসেবে ইতোমধ্যেই পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে এসেছেন ডেনি শিপার্স। হ্যাপ্টাথলনে যেমন তেমনি স্প্রিন্টেও দুর্দান্ত হল্যান্ডের এই এ্যাথলেট। হ্যাপ্টাথলনে ২০১০ সালে বিশ্ব জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণ জেতেন তিনি। গত বছর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ২০০মিটারেও স্বর্ণপদক জয়ের স্বাদ পান শিপার্স। পারফর্মেন্সের সেই ধারাবাহিকতা এখনও ধরে রেখেছেন তিনি। জার্মানির বার্লিনে ইন্ডোর মিটিংয়ে নিজেকে দারুণভাবেই মেলে ধরেছেন প্রায় ছয় ফুট উচ্চার এই ডাচ এ্যাথলেট। তার লক্ষ্য এখন ক্রীড়াজগতের মহাযজ্ঞ অলিম্পিক। ডেনি শিপার্স স্বপ্ন বুনছেন অলিম্পিকে নিজেকে মেলে ধরার। আগামী আগস্টে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে শুরু হবে ক্রীড়াজগতের মহাযজ্ঞ অলিম্পিক। বিশ্বের সকল এ্যাথলেটেরই স্বপ্ন থাকে ক্রীড়াজগতের এই বিশাল মঞ্চে নিজেকে প্রতিনিধিত্ব করার। সেই স্বপ্ন বুনছেন হল্যান্ডের ডেনি শিপার্সও। রিও অলিম্পিকেরই অংশ হিসেবে জার্মানির বার্লিনে ইনডোর মিটে অংশ নেন হল্যান্ডের তরুণ প্রতিভাবান স্প্রিন্টার। আর ৬০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে নিজেকে দারুণভাবেই মেলে ধরলেন তিনি। বছরের সেরা টাইমিং গড়ে ৬০ মিটার প্রতিযোগিতা জিতে নিজেকে আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এলেন ডেনি শিপার্স। গত বছর চীনের বেজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ব এ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপ। সেখানেই প্রথমবারের মতো পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে আসেন ডেনি শিপার্স। ২০০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণপদক জয়ের স্বাদ পান তিনি। শুধু তাই নয়, ১০০মিটারেও রৌপ্যপদক জেতেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে। তাই বার্লিনের মিটে নিজেকে মেলে ধরাটা তার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেই সুযোগটা দারুণভাবেই কাজে লাগালেন শিপার্স। ৬০ মিটার স্প্রিন্টে মাত্র ৭ সেকেন্ডেই ফিনিশিং লাইন স্পর্শ করেন তিনি। যা তার বছরের সেরা টাইমিং। আগের সেরা টাইমিং ছিল ৭.০৪ সেকেন্ড। বার্লিনের এই পারফর্মেন্স তাকে অলিম্পিকেও সেরাটা দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন তিনি। এদিকে লং জাম্পে আলো ছড়িয়েছেন স্বাগতিক এ্যাথলেট আলেক্সান্দ্রা ওয়েস্টার। মৌসুম সেরা ৬.৯৫ মিটারে প্রথম হন তিনি। আর দ্বিতীয় হওয়া ব্রিটেনের শারা প্রোক্টর সময় নেন ৬.৯১ সেকেন্ড। নিজের দেশের সমর্থকদের সামনে রেখে মৌসুমের সেরা পারফর্মেন্স করতে পেরে খুবই সন্তুষ্ট আলেক্সান্দ্রা ওয়েস্টার। পারফর্মেন্সের এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি। ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করেননি শিপার্স। যে কারণে রিও অলিম্পিকের সৌজন্যেই বিশ্ব মঞ্চে দ্যুতি ছড়াতে চান তিনি। ব্রাজিলে কী আসলেই মেলে ধরতে পারবেন শিপার্স? অনেকেই সংশয় প্রকাশ করলেও তা উড়িয়ে দিয়েছেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে হল্যান্ডকে প্রথম এ্যাথলেট হিসেবে পদক উপহার দেয়া শিপার্স। শুধু তাই নয়, বয়সকেও চাপ হিসেবে নিতে নারাজ তিনি। এ বিষয়ে ৪ গুনিতক ১০০মিটার রিলেতে রেকর্ডধারী শিপার্স বলেন, চীনের বেজিংয়ে খেলাটা ছিল আমার জন্য দারুণ রোমাঞ্চকর। কেননা, সেখানে বড় বড় তারকা এ্যাথলেট খেলেছে। যাদের সঙ্গে আমি পারফর্ম করেছি। আর সেটাই আমাকে অনুপ্রাণিত করছে। ডেনি শিপার্স আরও বলেন, ‘বেজিংয়ের পারফর্মেন্সের হিসাব-নিকাশ করে আমার মনে হয়েছে যে, এখনও অনেক কাজ বাকি রয়েছে। প্রতিযোগিতায় নিজের সেরাটা ঢেলে দেয়ার জন্য সেগুলো আমাকে করতে হবে। আমার বয়স এখন ২৩। অলিম্পিকে অংশগ্রহণের আগে আমি আরও পরিপূর্ণ খেলোয়াড়ে পরিণত হব। আশা করি, এই সময়টাতে নিজেকে আরও ভালভাবে প্রস্তুত করে নিতে পারব। অলিম্পিকে কোন্ কোন্ ইভেন্টে অংশগ্রহণ করব সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হয়নি। ফেবারিট ইভেন্ট চূড়ান্ত করতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। ১০০মিটারে আমার আরও উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে। ২০০মিটারে আমার আরও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন। তবে এসব বিষয়ে কোন ধরনের চাপ পড়বে না বলেই মনে করি আমি। আর যদি চাপ তৈরিও হয় তাহলে আশা করি তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব। মাত্র ৯ বছর বয়সেই এ্যাথলেট হিসেবে নিজের বহির্প্রকাশ ঘটান ডেনি শিপার্স। এরপর আর পেছনের দিকে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ক্রমেই নিজেকে বিশ্বমঞ্চে মেলে ধরতে প্রস্তুত করছেন। ২০১৩ সালে মস্কো এবং ২০১৫ সালে বেজিংয়ের পর শিপার্সের পরীক্ষাটা এখন রিও অলিম্পিকে। ব্রাজিলের রাজধানী রিওতে পারবেন কী নিজেকে মেলে ধরতে? সেটা এখন সময়ের হাতে। তবে ব্রাজিলের উদ্দেশ্যে বিমানে ওঠার আগের যে সময়টা পাচ্ছেন তার শতভাগ কাজে লাগাতে চান ডেনি শিপার্স। শুধু শিপার্স একা নন, রিও অলিম্পিকের প্রস্তুতিমঞ্চ হিসেবে বার্লিনে অংশ নিয়েছেন আরও অনেক এ্যাথলেটই। বার্লিনে পুরুষের ৬০ মিটার ফাইনালে চমক উপহার দিয়েছেন চিরতরুণ খ্যাত এ্যাথলেট কিম কলিন্স। আসছে এপ্রিলেই ৪০ বছরে পা দিতে যাচ্ছেন কলিন্স। কিন্তু তারপরও স্প্রিন্টে দুর্দান্ত এই এ্যাথলেট। ৬.৫৩ সেকেন্ডে ফিনিশিং লাইন স্পর্শ করে প্রথম স্থানে থেকে দৌড় শেষ করেন তিনি। এই ইভেন্টে দ্বিতীয় হওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার হেনরিচো ব্রুইনটিজিস ফিনিশিং লাইন স্পর্শ করতে সময় নেন ৬.৬২ সেকেন্ড। তবে বার্লিনের এই টুর্নামেন্টে চমক দেখিয়েছেন ব্রাজিলের থিয়াগো ব্র্যাজ দা সিলভা। ২২ বছর বয়সী এই এ্যাথলেট পল ভোল্টে অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন রিনাউড লাভিলেনিকে হারিয়ে রীতিমতো হইচই সৃষ্টি করে দেন। ফ্রান্সের বিশ্ব রেকর্ডধারী এ্যাথলেট লাভিলেনি ৫.৮৫ মিটার গড়েন। আর তাকে হারানোর জন্য ৫.৯৩ মিটার গড়েন ২০১২ সালের জুনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের মালিক থিয়াগো ব্র্যাজ। এই ব্র্যাজের নিজের দেশই রিও অলিম্পিকের আয়োজক। স্বাগতিক সমর্থকদের উৎসাহ-উদ্দীপনা পেয়ে স্বাভাবিকভাবে নিজেকে মেলে ধরতে মরিয়া এই এ্যাথলেট।
×