ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

জন্মশতবর্ষে শিল্পকলায় শাহ আবদুল করিমকে শ্রদ্ধাঞ্জলি

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

জন্মশতবর্ষে শিল্পকলায় শাহ আবদুল করিমকে শ্রদ্ধাঞ্জলি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভাটি বাংলার কিংবদন্তি বাউল শাহ আবদুল করিম। শৈশব থেকে দারিদ্র্য তাঁর নিত্যসঙ্গী হলেও ভাটা পড়েনি সঙ্গীত সাধনায়। বাণী আর সুরে ভাটি অঞ্চলের মানুষের প্রেম-ভালবাসার পাশাপাশি বলেছেন অসাম্প্রদায়িকতার কথা। গানে গানে সোচ্চার হয়েছেন কুসংস্কার আর অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে। সহজিয়া কথায় ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে কণ্ঠে তুলে নিয়েছিলেন মানবতার মর্মবাণী। সোঁদামাটির গন্ধমাখা শাশ্বত বাংলার ঐতিহ্য লালনকারী এই বাউলসাধকের শততম জন্মবার্ষিকী ছিল ফাল্গুন মাসের প্রথম মঙ্গলবার। এ উপলক্ষে মঙ্গলবার এই মহান সাধককে জানানো হলো সুরাশ্রিত শ্রদ্ধাঞ্জলি। বিশিষ্টজনদের আলোচনায় উঠে এলো তাঁর মানবিকবোধসম্পন্ন বর্ণময় জীবনের বয়ান। এভাবেই শুরু হলো তাঁকে নিবেদিত শাহ আবদুল করিম জন্মশতবার্ষিকী উদ্্যাপন জাতীয় পর্ষদ আয়োজিত বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। ‘আমি বাঙলা মায়ের ছেলে’ সেøাগানে বছরব্যাপী এ অনুষ্ঠানমালার সহযোগিতায় রয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। বসন্ত সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির নন্দন মঞ্চে প্রধান অতিথি হিসেবে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন ও লোগো উন্মোচন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন সংস্কৃতি সচিব আক্্তারী মমতাজ। পর্ষদের আহ্বায়ক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুছের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী ও কলকাতার সঙ্গীত দল দোহারের কর্ণধার কালিকা প্রসাদ এবং গবেষক মাহফুজুর রহমান। এর স্বাগত বক্তব্য রাখেন পর্ষদের সদস্য সচিব আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফ। আলোচনা শেষ হতেই শুরু হয় আবদুল করিমকে নিবেদিত একক ও দলীয় সঙ্গীতের পরিবেশনা। গানে গানে সুরে সুরে এই মহান বাউলকে নিবেদন করা জন্মশতবার্ষিকীর ভালবাসা। একক কণ্ঠে গান শোনান সুবীর নন্দী, চন্দনা মজুমদার, কানন বালা সরকার, ফকির শাহাবুদ্দীন ও শাহনাজ বেলি। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে বহ্নিশিখা ও কলকাতার লোকগানের দল দোহার। আলোচনায় শাহ আবদুল করিমের মনন ও ভাবনাকে চমৎকার করে ব্যাখ্যা করেন সঙ্গীতশিল্পী কালিকা প্রসাদ। বলেন, আমার জীবনে তাঁর মতো এত বড় সাধকের সান্নিধ্য কখনও পাইনি। শাহ আবদুল করিম যে সুর তৈরি করেছিলেন তা চিরকালীন। সময়কে ধারণ করে গানের মাধ্যমে বলে গেছেন অকপট সত্য কথা। তাঁর সঙ্গে আমার দুইবার সরাসরি সাক্ষাত হয়েছিল। মহান মানুষটির সঙ্গে আলাপচারিতার পর মনে হয়েছিল, সবখানে ও সব সময় এমন মানুষ থাকলে এই পৃথিবীটা বদলে যেত। গানে গানে বলেছেন মানবিক সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ার কথা। এ কারণেই তাঁর গান সব সময়ই সমকালীন। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, শাহ আবদুল করিমের সান্নিধ্য পেতে হলে ফিরে যেতে হবে তাঁর সৃষ্টির কাছে। তাঁর মতোই এই গ্রাম বাংলার অনেক বাউল জীবনে প্রচলিত শিক্ষা না নিয়েও তাঁরা রচনা করেছেন অসাধারণ গান। এসব বাউলসাধকদের বিশ্বমানের গানগুলোয় যে দর্শন ও চিন্তার গভীরতা প্রচার করেছেন তা অনেকের পক্ষেই অনুধাবন করা সহজ হয়নি। শাহ আবদুল করিমকে উপলব্ধি করার ক্ষেত্রেও আমাদের বিলম্ব ঘটেছে। আত্মবিমুখ মানুষটি শুধু নিভৃতে সৃষ্টি করেছেন এক একটি মণি-মুক্তা। আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম শুধুমাত্র এই একটি গানের মধ্য দিয়েই তিনি অমর হয়ে আছেন ও থাকবেন। আজীবন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ধারণাকেই লালন করেছেন এই মহান শিল্পী। হাসান আরিফ বলেন, পাকিস্তান আমলে ভঙ্গুর রাষ্ট্র ব্যবস্থার গানের বাণীতে সোচ্চার হয়েছেন আবদুল করিম। অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে বলেন, বছরব্যাপী সারাদেশে শাহ আবদুল করিমকে নিয়ে অনুষ্ঠান হবে। ১৯ ফেব্রুয়ারি সিলেট শহরে অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় আয়োজনটি। আলোচনা শেষে শুরু হয় আবদুর করিমকে আশ্রিত সুরেলা সঙ্গীতসন্ধ্যা। আসি বলে গেল বন্ধু আইলো না গানের সুরে পরিবেশিত হয় নৃত্য। সখী কুঞ্জ সাজাও গো আজ আমার প্রাণনাথ আসিতে পারে গানের সুরে পরিবেশিত হয় দ্বিতীয় নৃত্য। এরপর গান নিয়ে মঞ্চে আসে বহ্নিশিখার শিল্পীরা। উন্মুক্ত মঞ্চের পরিপূর্ণ শ্রোতাকে উৎফুল্ল করে দলটি প্রথমেই পরিবেশন করে মানবিক সম্প্রীতির সেই গান- আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম/আমরা আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম/গ্রামের নওজেয়ান হিন্দু মুসলমান মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদি গাইতাম ....। দলটি পরিবেশিত দ্বিতীয় গানের শিরোনাম ছিল- গান গাই আমার মনরে বুঝাই/মন থাকে পাগলপারা/আর কিছু চায় না মনে গান ছাড়া ...। কলকাতার গানের দল দোহারের পরিবেশনার শুরুতেই ছিল করিম বন্দনা। দরদী কণ্ঠে কালিকা প্রসাদ গেয়ে শোনান- গানে গানে ছন্দে ছন্দে দোহারে মুুর্শিদ ধন হে ....। অর্ণ কমলিকার মনোমুগ্ধর নৃত্য ॥ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নৃত্যনাট্য ‘শ্যামা’কে নতুন শিল্পরূপ ও আঙ্গিকে দর্শকদের সামনে তুলে ধরলেন নৃতশিল্পী অর্ণ কমলিকা। ভরতনট্যমকে মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়ে নৃত্য, ছন্দ ও অনুপম সুরলহরীতে দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন কানাডা প্রবাসী এ শিল্পী। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনির্ভাসিটি মিলনায়তনে এ নৃত্যসন্ধ্যার আয়োজন করে ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। ঘড়ির কাঁটা ঠিক সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হয় তাঁর নৃত্যলহরী। একক নৃত্যে তিনি ফুটিয়ে তুলেন চিরায়ত প্রেমাখ্যান। নৃত্যের প্রচলিত কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসে এ পরিবেশনায় অর্ণ ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যের এই বিশেষ রূপটিকে মূলত কাহিনী বর্ণনার মাধ্যম ফুটিয়ে তুলেন। তাতে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় তাঁর নৃত্য আর অভিনয়শৈলী। নৃত্যসন্ধ্যার সূচনাতেই ছিল সংক্ষিপ্ত আলোচনা। এতে শিল্পীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ভারতের রাষ্ট্রদূত হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা, ইন্ডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম ওমর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক জয়শ্রী কু-ু। ঋত্বিক ঘটক রেট্রোস্পেক্টিভ ॥ চলচ্চিত্রম সংসদ সোসাইটি ও জাতীয় জাদুঘরের যৌথ আয়োজনে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে চলছে ছয় দিনের ঋত্বিক ঘটক রেট্রোস্পেক্টিভ। সবার জন্য উন্মুক্ত এ প্রদর্শনীর পঞ্চম দিন ছিল মঙ্গলবার। এ দিনে দেখানো হয় তিনটি চলচ্চিত্র। বিকেল চারটায় প্রদর্শিত হয় ১৯৭৩ সালে ঋত্বিক ঘটক নির্মিত ১৫৯ মিনিটের চলচ্চিত্র ‘তিতাস একটি নদীর নাম’। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় দেখানো হয় ১৯৭১ সালে নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘দুর্বার গতি পদ্মা’ ও ১৯৭৪ সালে নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি ‘যুক্তি, তক্কো ও আর গপ্পো’।
×