ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দাপিয়ে বেড়িয়েছে মতিঝিল থেকে নিকুঞ্জ ;###;চার ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে বাগে আনা হলো

খোদ রাজধানীতে আচমকা বন্য হাতির তাণ্ডব

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

খোদ রাজধানীতে আচমকা বন্য হাতির তাণ্ডব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এতদিন বন্যহাতির উৎপাত ছিল পাহাড়ী এলাকায়। এবার সেটার দেখা মিলল খোদ রাজধানীতেই। সোমবার শেষ রাতে এমনই এক বন্যহাতি দাপিয়ে বেড়িয়েছে রাজধানীর মতিঝিল থেকে নিকুঞ্জ পর্যন্ত। তাকে ঘায়েল করতে চলে চার ঘণ্টার শ্বাসরুদ্বকর অভিযান। শেষ পর্যন্ত তাকে অচেতন (ট্রাক্সকুলাইজার) করে পাঠানো হয় গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে। হাতির এই বেপরোয়া ও উন্মত্ত আচরণে চার ঘণ্টা চরম আতঙ্কে কাটে বন বিভাগ ও মহানগর পুলিশের। শ্বাসরুদ্ধকর এই অভিযান শুরু হয় রাত সাড়ে তিনটায়। হঠাৎ মতিঝিল থানার টহল পুলিশ খবর পায়, একটি বন্যহাতি মাহুত ছাড়াই শাপলা চত্বর দিয়ে ধেয়ে আসছে। পুলিশের টহল টিম সেখানেই হাজির। হাতির গতিবিধি অস্বাভাবিক দেখতে পেয়ে খবর দেয়া হয় বন বিভাগে। বন পরিদর্শক অসীম মল্লিক তাৎক্ষণিক একটি টিম নিয়ে সেখানে রওনা হন। তিনি হাতির উন্মত্ত আচরণ দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এটি যে কোন সময় রাজপথের পথচারী বা প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ করার মতোই আচরণ করতে থাকে। তিনি বুঝতে পারেন- দ্রুত এটাকে ঘায়েল করতে না পারলে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আক্রমণের শিকার হতে পারে যে কেউ। এমন উদ্বেগ- উৎকণ্ঠায় তিনি বিষয়টি অবহিত করেন ময়মনসিংহে অবস্থানকারী বন সংরক্ষক অসিত চন্দন পালকে। সেখান থেকে তিনি নির্দেশ দেন সাফারি পার্ক থেকে দ্রুত মাহুত ডেকে হাতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে। ঘণ্টাখানেক পর ভোরের দিকে সাফারি পার্ক থেকে ছুটে আসেন কয়েক মাহুত। তারাও হাতিটির মেজাজ ও আচরণ দেখে নিশ্চিত হন এটা বন্য স্বভাবের হলেও কিছুটা শান্ত। তবুও তাকে পোষ মানানোর সাঙ্কেতিক পদ্ধতি প্রয়োগ করেন মাহুত। কিন্তু তাতে সাড়া দেয়নি হাতিটি। এতে ঘাবড়ে যান পুলিশসহ উপস্থিত সবাই। ভোর তখন সাড়ে ছয়টা। আলোময় হয়ে ওঠে রাজপথ। ময়মনসিংহ থেকে ছুটে আসেন বন সংরক্ষক অসিত চন্দন পাল। তার নেতৃত্বে সবাই কোন প্রকার উস্কানি ছাড়াই গতিবিধি লক্ষ্য রেখে হাতির পিছু নেন। সঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশের টহল। হাতিটি শাহজাহানপুর, বাড্ডা, বসুন্ধরা বালু নদীর ব্রিজ হয়ে পূর্বাচল তিন শ’ ফুট রাস্তা ধরে লেকসিটি কনকর্ড দিয়ে নিকুঞ্জের দিকে ছুটে যায়। সকাল তখন সাড়ে সাতটা। রাজপথে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বেরিয়েছে। হাতিটির পেছনে পুলিশ ও বনপ্রহরীদের লাইন দেখে কেউ আতঙ্কে কেউ কৌতূহলে ভিড় জমায় স্থানে স্থানে। নিকুঞ্জের ২০ নম্বর রোডের শেষ মাথায় গিয়ে থামে হাতিটি। তখন অসিত চন্দন পালের নির্দেশে এটিকে অচেতন করা হয় ট্রাঙ্কুলাইজার দিয়ে। মিনিট কয়েক পরেই হাতিটি একেবারে শান্ত ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এ সময় হাতিটিকে একটি ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয় ততক্ষণে কৌতূহলী লোকজনের ভিড় জমে যায়। চার ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের কাহিনী শুনে মানুষ আঁতকে ওঠে। এটিকে দ্রুত একটি ট্রাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় সাফারি পার্কে। সেখানেই ছাড়া হয় তাকে। এ হাতির ভয়াবহতা সম্পর্কে অসীম মল্লিক বলেন- এ ঘটনার তদন্ত চলছে। হাতিটিকে কিভাবে কারা রাজধানীতে এনেছে তাদের খুঁজে বের করা হবে। এটা খুব ভয়ঙ্কর হতে পারত। চার ঘণ্টা পুলিশসহ আমরা সবাই আতঙ্কে ছিলাম। অসিত চন্দন পালের সার্বিক তত্ত্ব¡াবধানে হাতিটিকে পাহারা দিয়ে দিয়ে অত্যন্ত কৌশলে কোনক্রমে রাজধানী থেকে বের করতে হয়েছে। বেলা ওঠার পর স্কুলের শিশুরা যখন রাজপথে বের হয়েছে তখন চরম আতঙ্ক নেমে আসে। না জানি কখন তাকে আক্রমণ করে বসে এমন আতঙ্কে নিয়েই কাটাতে হয়েছে শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্ত। কারণ এই হাতিটিকে কিছুতেই বশীভূত করা সম্ভব হয়নি। কয়েক মাহুতও তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়। উল্টো সে তার মনমতো আচরণ করেছে। কোথা থেকে শেষ রাতে আগমন ঘটে তা জানতে চাইলে অসীম মল্লিক বলেন-প্রাথমিকভাবে জানা গেছে এটি চট্টগ্রাম থেকে ভাড়ায় আনা হয়। এটিকে দিয়ে সারাদিন রাজধানীতে চাঁদাবাজি করানো হয় । হয়ত তাকে কোন খাবার না দিয়ে ক্ষুধার্ত অবস্থাতেই রাতে মতিঝিল টিকাটুলী এলাকায় বেঁধে রাখা হয়েছে। এতেই সে হিংস্র হয়ে শিকল ছিঁড়ে বের হয়ে পড়ে খাবারের সন্ধানে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে কারা তাকে রাজধানীতে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা ছিল ।
×