ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এটিএম বুথ জালিয়াতির মামলা তদন্তে নেমেছে পাঁচ সংস্থা

প্রকাশিত: ০৫:২২, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

এটিএম বুথ জালিয়াতির মামলা তদন্তে নেমেছে পাঁচ সংস্থা

শংকর কুমার দে ॥ রাজধানীর তিনটি ব্যাংকের ছয়টি এটিএম বুথ থেকে স্কিমিং ডিভাইস নামক অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দুই শ’ গ্রাহকের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার মামলাটির তদন্ত করছে পাঁচটি তদন্তকারী সংস্থা। বিদেশ থেকে আনা হয়েছে স্কিমিং ডিভাইস নামক ব্যবহৃত প্রযুক্তিটি। সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে পাওয়া চিত্রে দেখা গেছে, অন্তত চারটি ব্যাংকের বুথে স্কিমিং ডিভাইস বসানো এবং টাকা উত্তোলনের সময়ে দাঁড়িয়ে আছে বিদেশী। লাখ লাখ গ্রাহকের আতঙ্কে থাকার বিষয়টি চিন্তা করে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে স্কিমিং ডিভাইস দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনার মামলাটি। তদন্তকারী সূত্রে এ খবর জানা গেছে। এটিএম বুথ থেকে স্কিমিং ডিভাইস দিয়ে গ্রাহকদের লাখ লাখ টাকা তুলে নেয়ার ঘটনার তদন্ত করছে যে পাঁচটি তদন্তকারী সংস্থা তারা হচ্ছে- ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন (সিআইডি), স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) ও বাংলাদেশ ব্যাংক। তদন্তকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, স্কিমিং ডিভাইসটি বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ব্যবহৃত হয়নি এবং দেশের ভেতরে পাওয়াও যায় না। মানিব্যাগে বহনযোগ্য অতিক্ষুদ্রাকৃতির এ ডিভাইসটি বিদেশ থেকে আনা হয়েছে এবং এই ডিভাইসটি প্রথমবারের মতো ব্যবহৃত হওয়ায় এ বিষয়ে তদন্তকারী সংস্থাগুলোর বেশিরভাগ কর্মকর্তারই স্পষ্ট ধারণা নেই। তবে এন্টি স্কিমিং ডিভাইসটি অনেক এটিএম বুথে বসানো আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভংকর সাহা দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, স্কিমিং ডিভাইস প্রযুক্তিটি ইতোপূর্বে আমাদের দেশে ব্যবহার হয়নি। প্রকাশ্যে বিক্রিও হয় না এটা। এ প্রযুক্তি আমাদের দেশে নেই। এটা বিদেশ থেকে আনা প্রযুক্তি, যা দেশে একেবারেই নতুন। ব্যাংক বুথের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্রায় সবকটি বুথেই স্কিমিং ডিভাইস বসাচ্ছে বিদেশী এবং টাকা উত্তোলনও করছে বিদেশীই। বিদেশীকে দেখা গেছে, একটি বুথে তিন দিন ধরে ডাটা সংগ্রহ করছে। স্কিমিং ডিভাইসটি অতিক্ষুদ্র যা মানিব্যাগে বহন করে আনা সম্ভব। তবে দেশীয় ব্যক্তিদেরও ছবিও আছে সিসি টিভির ভিডিও ফুটেজে। তবে কারা এ ধরনের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ ধরনের প্রতারণার সঙ্গে জড়িত তা এখনও শনাক্তের বাইরেই রয়ে গেছে। র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ানের (র‌্যাব) লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া ইউংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, স্কিমিং ডিভাইস প্রযুক্তি ব্যবহারের ঘটনাটি তারাও তদন্ত করছেন। তবে এই প্রযুক্তিটি সম্পর্কে পুরাপুরি ওয়াকিফহাল না থাকায় এটা কি দেশে তৈরি করা হয়েছে না-কি বিদেশ থেকে আনা হয়েছে তাও নিশ্চিত নন তারা। আসামিদের শনাক্ত করা যায়নি এখনও। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর মারাত্মক বিপর্যয় ঘটানোর ঘটনাটিকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এডিসি মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি তদন্তে মাঠে নেমেছেন তারা। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তিটি সম্পর্কে সম্যক ধারণা নেই গোয়েন্দা সংস্থার অনেক কর্মকর্তারই। ডিবি আসামি ধরার চেষ্টা করছে। আসামি ধরা পড়লে তারা কোথা থেকে কিভাবে এই প্রযুক্তি এনেছে তার রহস্য উদ্ঘাটন হবে। স্পেশাল ব্রাঞ্চের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ২০১২ সালে ক্রেডিট কার্ড ও ডেভিট কার্ড জালিয়াতি করে ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার একটি ঘটনা ঘটেছিল। তখন এই চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়। এই চক্রের সঙ্গে স্কিমিং ডিভাইস ব্যবহারকারী চক্রের সম্পর্ক আছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে ব্যাংকের কোন কর্মকর্তা জড়িত কি-না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অবৈধভাবে বসবাসকারী বিদেশী যারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের ছবিসংবলিত ডাটা বিমানবন্দরে পাঠানো হয়েছে, যাতে তারা দেশত্যাগ করে পালাতে না পারে। সিআইডির একজন কর্মকর্তা বলেন, স্কিমিং ডিভাইস ব্যবহার করে ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা ইতোপূর্বে তদন্ত করেনি সিআইডি। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতারণার ঘটনা নতুন হওয়ায় এই চক্র শনাক্তে একটু সময় লাগতে পারে। তবে রহস্য উদ্ঘাটন হবেই বলে জানান সিআইডির ওই কর্মকর্তা।
×