ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গবেষণায় বিজ্ঞানীদের সফলতা

মুক্তা চাষে উজ্জ্বল ভবিষ্যত

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

মুক্তা চাষে উজ্জ্বল ভবিষ্যত

মোফাজ্জল হোসেন, বাকৃবি ॥ মুক্তা চাষে উজ্জ্বল ভবিষ্যত দেখছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) মুক্তা চাষ গবেষণা প্রকল্পের বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি মিঠা পানির ঝিনুকে ইমেজ মুক্তা উৎপাদনে সফলতা পেয়েছেন ওই প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি মিঠা পানির ঝিনুক থেকে ইমেজ মুক্তা উৎপাদনে সক্ষমতা দেশের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। আমাদের দেশে গ্রামাঞ্চলে বহুল পরিচিত কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ণ ঝিনুকের রয়েছে বিশাল শিল্প সম্ভাবনা। ঝিনুকের খোলস শৌখিন জিনিসপত্র, অলংকার তৈরির পাশাপাখি হাঁস, মুরগি, মাছ ও চিংড়ির খাদ্যের ক্যালসিয়ামের প্রধান উৎস। এছাড়াও বিভিন্ন দেশে ঝিনুকের মাংস মানুষের খাদ্য হিসেবে পরিবেশন করা হয়। এসব কিছুর পাশাপাশি ঝিনুক মহামূল্যবান ‘মুক্তা’র উৎস। সৌখিনতা, আভিজাত্য ও সামাজিক মূল্যায়নের প্রতীক হলেও এ মুক্তা কিছুু জটিল রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) দেশে প্রথমবারের মতো মিঠা পানির ঝিনুক থেকে ইমেজ মুক্তা উৎপাদন করতে পেরেছেন। কৃত্রিম উপায়ে ঝিনুক থেকে পাখি, মাছ, নৌকাসহ দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন বস্তুর আকৃতির ইমেজ মুক্তা উৎপাদন করেন তাঁরা। তাঁরা মনে করছেন দেশে-বিদেশে মুক্তার বিপুল চাহিদা থাকায় গ্রামীণ ও উদ্যোক্তা পর্যায়ে এ প্রযুক্তি ছড়িয়ে দিলে বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানসহ ব্যবসা-বাণিজ্য ও রফতানি খাতে ব্যাপক সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। ইমেজ মুক্তা গবেষক ড. মোহসেনা বেগম তনু বলেন, দেশে মুক্তা উৎপাদনে সক্ষম ৫ প্রজাতির মিঠাপানির ঝিনুকের মধ্যে দুটি প্রজাতি অধিকতর উপযোগী। ইমেজ মুক্তা উৎপাদনের জন্য প্রাথমিকভাবে বড় আকৃতির স্বাস্থ্যবান ঝিনুক বাছাই করে ভিতর চ্যাপ্টা আকৃতির মোম, প্লাস্টিক বা স্টিলের বস্তুর প্রতিচ্ছবি স্থাপন করে ঝিনুকটি পুকুরে ছেড়ে দেয়া হয়। ছেড়ে দেয়ার ৭ থেকে ৮ মাসের মধ্যে ওই আকৃতির ইমেজ মুক্তা পাওয়া যায়। এভাবে সফলতার হার প্রায় ৮০ শতাংশ। এ বিষয়ে মুক্তা গবেষণা প্রকল্পের পরিচালক হারুন-অর-রশিদ বলেন, মিঠাপানির ঝিনুকে মুক্তা উৎপাদনের মূল গবেষণা শুরুর ৮ থেকে ১০ মাসেই আমরা সফলতা পাই। প্রথমে ইমেজ ও রাইচ দুই ধরনের মুক্তা উৎপাদন করতে সক্ষম হলেও দেশের ঝিনুকের আকৃতি ছোট হওয়ায় শুধু ইমেজ মুক্তা ভাল হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহের প্রকল্প হওয়ায় গবেষকদের নিরলস প্রচেষ্টা এত দ্রুত সফলতা এসেছে। এখন এ প্রকল্পটি বৃহত্তর পরিসরে চলছে এবং চাষী পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়ার মতো অবস্থায় আছে। ইমেজ মুক্তার সম্ভাবনার বিষয়ে ইনস্টিটিউটটির পরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, আমাদের দেশের জলবায়ু ও পরিবেশ ইমেজ মুক্তা উৎপাদনের উপযোগী। মাছের সঙ্গে ঝিনুক চাষ করলে কোন খরচ ছাড়াই মৎস্য চাষীরা মুক্তা উৎপাদন করে অধিক আয় করতে পারবে। গ্রামীণ মহিলাদের মুক্তা উৎপাদনে সহজেই সম্পৃক্ত করতে পারলে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে নারীরা সাবলম্বী হতে পারবেন।
×