ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;গাজীউর রহমানের সাক্ষ্য

সাখাওয়াত নিজ হাতে আমার বাবাকে হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সাখাওয়াত নিজ হাতে আমার বাবাকে হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে যশোরের সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা সাখাওয়াত হোসেনসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। সোমবার প্রথম সাক্ষী গাজীউর রহমান তার সাক্ষে বলেছেন, সাখাওয়াত নিজ হাতে আমার বাবা চাঁদতুল্লা গাজীকে গুলি করে হত্যা করে। সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী তাকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য আজ মঙ্গলবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পলাতক কিশোরগঞ্জের নিকলির রাজাকার কমান্ডার সৈয়দ মোঃ হুসাইনকে আত্মসমর্পণে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছেন। এ সময় প্রসিকিউটশন পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর জিয়াদ আল মালূম, প্রসিকিউটর রিজিয়া সুলতানা চমন, প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল। আর আসামি পক্ষে ছিলেন সাত্তার পালোয়ান ও আব্দুস শুকুর। সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম গাজীউর রহমান। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬২ বছর। আমি সামান্য লেখাপড়া করেছি। ১৯৭১ সালে আমার বয়স আনুমানিক ১৭ বছর ছিল। ১৯৭১ সালে আমার বাবা চাঁদতুল্লা কৃষিকাজ করতেন এবং সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ১৯৭১ সালে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে একদিন সকাল ১০টা সাড়ে ১০টার দিকে আসামি রাজাকার সাখাওয়াত হোসেন আমার বাবার খোঁজে চিংড়া বাজারে যায়। ওই ২০-২২ জন রাজাকারের মধ্যে আসামি ইব্রাহিম, আসামি খালেক, আসামি লুৎফর, আসামি আব্দুল আজিজ পিতা ফুল সর্দার, আসামি আব্দুল আজিজ, আসামি মুজিবুর রহমান, আসামি বিল্লার, আসামি ওয়াহিদুস সালামও ছিলেন। চিংড়া বাজারে আমার বাবাকে না পেয়ে ওই রাজাকাররা আমাদের বাড়িতে এসে আমার বড় চাচাত ভাই মমিন গাজীকে পিট মোড়া দিয়ে বেঁধে আসামি ইব্রাহিম তাকে পিটায় এবং জানতে চায়। আমার আব্বা কোথায়। এর পর রাজাকাররা ২৮ আশ্বন বেলা ১১টা সাড়ে ১১টার দিকে আমাদের বাড়ি ঘেরাও করে। উক্ত আসামিগণ ছাড়াও আরও ২০-২৫ জন রাজাকার ছিল। আসামি ও রাজাকারদের আসতে দেখে আমার বাবা বাড়ির উত্তর পাশে ঝোঁপের মধ্যে চলে যায়। আমি আমাদের বাড়ির পশ্চিম দিকে একটি বাঁশ ঝাড়ের ভিতর লুকাই। তখন আসামিরা ও রাজাকাররা আমাদের বাড়ি খোঁজাখুঁজি করে আমার বাবাকে ঝোঁপের মধ্য থেকে ধরে ফেলে এবং ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে তিন চারদিন অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। এর পর আব্বাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়ার নির্দেশ ॥ একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পলাতক কিশোরগঞ্জের নিকলির রাজাকার কমান্ডার সৈয়দ মোঃ হুসাইনকে আত্মসমর্পণে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। আগামী ২৭ মার্চ এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশনার আদেশ তামিল ও হুসাইনের আত্মসমর্পণ অথবা গ্রেফতার সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল এবং মামলার পরবর্তী আদেশের দিন ধার্য করা হয়েছে। সৈয়দ মোঃ হুসাইন ও গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা মোহাম্মদ মোসলেম প্র্রধান একই মামলার আসামি। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ার-উল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল সোমবার সাতদিনের মধ্যে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজী দৈনিকে পলাতক হুসাইনের বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের এ নির্দেশ দেন।
×