ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এবার পান দোকানি দম্পতিকে গরম পানিতে ঝলসে দিল পাষণ্ডরা

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

এবার পান দোকানি দম্পতিকে গরম পানিতে ঝলসে দিল পাষণ্ডরা

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ পানের জর্দা না কেনাকে কেন্দ্র করে এবার এক পান দোকানি দম্পতিকে গরম পানি দিয়ে সারাশরীর ঝলসে দিয়েছে একদল পাষ-। আর এ ব্যাপারে থানা পুলিশ করলে এই দম্পতির মেয়েকে হত্যার হুমকি দিয়েছে পাষ-ের দল। রবিবার রাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে এ ঘটনা ঘটে। আহত দম্পতি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সোমবার সকালে একই উপজেলার শিমুলিয়া এলাকায় যৌতুকের টাকার দাবিতে স্ত্রীকে সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়ে নির্যাতন চালিয়েছে এক পাষ-। মুন্নী বেগম নামে এই নারীকে বটি দিয়ে কুপিয়ে ও লাঠিপেটা করে আহত করেছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। বর্তমানে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। নিজস্ব সংবাদদাতা রূপগঞ্জ থেকে জানান, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পান খাওয়ার জর্দা না কেনাকে কেন্দ্র করে পাষ-রা এক চা-পান বিক্রেতা দম্পত্তিকে গরম পানি দিয়ে সমস্ত শরীর ঝলসে দিয়েছে। এ ব্যাপারে থানা পুলিশ করলে তাদের স্কুল পড়ুয়া ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মেয়েকে হত্যার হুমকিও দিয়েছে। গরম পানিতে ঝলসে দেয়া এই দম্পতি হলেন, আব্দুল আউয়াল গাজী (৫০) ও তার স্ত্রী সুমি বেগম (৩৩)। তাদের বাড়ী সুনামগঞ্জ জেলার দুয়ারাবাজার উপজেলার আলম খালি এলাকায়। দীর্ঘদিন ধরে তারা দুই ছেলে ও চার মেয়েকে নিয়ে উপজেলার বলাইখা এলাকার করিম মিয়ার বাড়িতে বসবাস করছেন। প্রত্যক্ষদর্শী ও আহতরা জানান, ভুলতা তাঁতবাজারের সামনে পান খাওয়ার জর্দা বিক্রির উদ্দেশ্যে আব্দুল আউয়াল গাজীর চা-পানের দোকানে বাবু নামে এক শিশু আসে। এ সময় চা-পান বিক্রেতা আব্দুল আউয়াল গাজী জর্দা কিনবেন না বলে বাবুকে জানিয়ে দেয়। ওই শিশুর কাছ থেকে জর্দা না কেনায় শনিবার রাতে স্থানীয় চাঁদাবাজ জাকারি হোসেন ওরফে পলিথিন টুক্কাসহ তার সহযোগী নাশির মিয়া ও মোস্তফা আব্দুল আউয়াল গাজীকে জর্দা চুরির অপবাদ দেয়। এতে প্রতিবাদ করায় চা দোকানের কেটলিতে থাকা গরম পানি তার শরীরে ঢেলে দেয়া হয়। ঝলসে যাওয়া স্বামীর আর্তচিৎকারে সুমি বেগম এগিয়ে আসলে তার ওপরও আরেকটি কেটলিতে থাকা গরম পানি ঢেলে দেয়া হয়। গরম পানিতে তাদের দু’জনের শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে যায়। বিশেষ করে সুমি বেগমের শরীরের বেশির ভাগ অংশই ঝলসে গেছে। পরে স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের স্থানীয় একটি ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লোকমান হোসেন ও রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল ইসলামকে জানালে তারা ও উপস্থিত সাংবাদিকরা নগদ অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করে এই দম্পত্তিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লোকমান হোসেন বলেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত এবং কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল ইসলাম বলেন, অভিযুক্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ওদিকে রূপগঞ্জে দাবিকৃত যৌতুকের দুই লাখ টাকা না দেয়ায় পাষ- স্বামী মুন্নী বেগম (২৭) নামে এক গৃহবধূকে জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন ওই গৃহবধূকে কুপিয়ে ও লাঠিপেটাসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালিয়েছে। গৃহবধূ মুন্নী বেগম কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার বেন্দ্রীবাজার এলাকার মৃত মালেক ড্রাইভারের মেয়ে। নির্যাতনের শিকার মুন্নী বেগম জানান, গত ১৩ বছর পূর্বে শিমুলিয়া এলাকার সৈয়দ তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে সেলিম মিয়ার সঙ্গে ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক তার বিয়ে হয়। বিয়েতে ঘর নির্মাণের জন্য বাপের বাড়ি থেকে দুই লাখ টাকা যৌতুক দেয়া হয়। বিয়ের পর দুই সন্তানকে নিয়ে ভালই ছিলেন তারা। গত দুই মাস আগে স্বামী সেলিম মিয়াসহ শশুর বাড়ির লোকজন মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশে ফের দুই লাখ টাকা দাবি করে। দাবিকৃত টাকা দিতে না পাড়ায় সেলিম মিয়া সিমা আক্তার নামে আরেক মহিলাকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকেই স্বামীসহ ননদ বিলকিস, মুন্নী বেগমকে নানাভাবে শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে আসছে। এরই অংশ হিসেবে রবিবার রাতে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ঝলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা দেয়া হয় মুন্নী বেগমকে। এছাড়া সোমবার সকালে বটি দিয়ে কুপিয়ে ও লাঠিপেটা করে আহত করা হয় তাকে। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
×