শংকর কুমার দে ॥ রাজধানী ঢাকায় অবস্থানরত ১০ দেশের প্রায় ১ হাজার অবৈধ বিদেশীদের ওপর খোঁজখবর ও নজরদারি শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। অবৈধভাবে বসবাসকারী এসব বিদেশীদের বেশিরভাগই ক্রেটিডকার্ড জালিয়াতি, জঙ্গী তৎপরতা, আদম পাচার, জাল ডলার ব্যবসা, মাদক পাচারের মতো অপরাধে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় জড়িত সন্দেহজনক প্রতারক চক্রের সঙ্গে বিদেশী চক্রের জড়িত থাকার বিষয়টি সামনে চলে আসায় খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে ঢাকায় বসবাসরত বিদেশী অপরাধী চক্রের সদস্যদের। এ প্রতারক চক্রকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা না গেলে আরও ভয়াবহ ধরনের জালিয়াতি ও প্রতারণার খপ্পরে পড়ে বিপুল পরিমাণ অংকের টাকা খোয়া যাওয়ার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকায় বসবাসরত অবৈধ বিদেশী যারা নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের মধ্যে বেশিরভাগই কালো আফ্রিকান। বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় জড়িত সন্দেহজনক বিদেশী চক্রের বিশেষ করে কালো আফ্রিকান নাগরিকদের সন্দেহ করে গ্রেফতার অভিযানে মাঠে নেমেছেন গোয়েন্দারা। প্রায় দুই বছর আগে ক্রেডিটকার্ড ও ডেবিটকার্ড জালিয়াতি চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করেছিল গোয়েন্দারা। তখন এই বিদেশী চক্রের সদস্যদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যায়। এখন আবার সেই চক্রটিই এটিএম বুথের স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার একই চক্র কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঢাকায় ও রংপুরে বিদেশী হত্যাকা-ের ঘটনার পর বিদেশীদের ডাটাবেজ তথ্য সংগ্রহের কাজ চালাচ্ছে পুলিশ ও গোয়েন্দারা। বিদেশী চক্রের অপরাধে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়ায় তাদের বৈধ কাগজপত্র ছাড়া বাড়িভাড়া না দেয়াসহ সবকিছু খতিয়ে দেখার বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেয়া হয় পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাকে। এটিএম বুথে স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা দৃশ্যে বিদেশী জড়িত থাকার তথ্য প্রমাণ পাওয়ার পর আবারও বিদেশী অপরাধীদের বিষয়টি তদন্তের সামনে এসেছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, দুই বিদেশী হত্যাকা-ের পর রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী যে বিদেশীদের ডাটাবেজ তথ্য সংগ্রহের কাজ চালানোর আগে ও পরে অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ ও গোয়েন্দারা। রাজধানীর রামপুরা, গুলশান ও উত্তরার ১৪৭টি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তখন কাগজপত্র ছাড়া অপরাধে জড়িত এমন ৩১ জনকে আটক করে পুলিশ, যাদের প্রায় সবাই কালো আফ্রিকান। গ্রেফতারের পর ৩১ বিদেশী নাগরিক কোন বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। তারা শিক্ষার্থী ও ভ্রমণ ভিসায় তারা বাংলাদেশে এসেছেন। তারা সবাই আফ্রিকান নাগরিক। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত বিদেশী নাগরিকরা খুন, প্রতারণা, মাদক ব্যবসা, জালটাকা তৈরি, ভিওআইপি ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছেন। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ছিলেন নাইজিরিয়ার ১২, উগান্ডার ৫, ক্যামেরুনের ৪, গাম্বিয়ার ৩, আইভোরি কোস্টের ২, সেনেগালের ১, কেনিয়ার ১, মালির ১, মোজাম্বিকের ১ ও টোগোর ১ জন। এখন আবার এটিএম বুথে স্কিমিং ডিভাইস বিষয়ে বনানী থানায় প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) ছায়া তদন্ত শুরু করার পর দুই বছর আগে যে চক্রটি ক্রেডিটকার্ড ও ডেবিটকার্ড জালিয়াতি করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা একই চক্র কিনা, তার ওপর গুরুত্বারোপ করে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে। এটিএম বুথে স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে যে চক্রটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তার মধ্যে সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ছবিতে প্রতারক চক্রের সদস্যদের মধ্যে বিদেশীর ছবি দেখা গেছে, যার ধারণকৃত ভিডিও ছবি বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কমকর্তা বলেন, আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, কিছু বিদেশী ছাত্র ও ভ্রমণ ভিসায় এ দেশে আসেন। উত্তরা ও গুলশানসহ বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় তারা বাসাভাড়া করেন। এক সময় ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও তারা এ দেশে অবৈধভাবে থাকতে শুরু করেন, যা বড় ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এছাড়া তারা অনেক সময় মাদক ও জালটাকা তৈরিসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে।