ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইয়েনের প্রত্যাবর্তনে চাঙ্গা জাপানের পুঁজিবাজার

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ইয়েনের প্রত্যাবর্তনে চাঙ্গা জাপানের পুঁজিবাজার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ জাপানের অর্থনীতি ০.৪ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছে। ডিসেম্বর শেষ হওয়া প্রান্তিকে এ তথ্য তুলে ধরেছে দেশটির সংশ্লিষ্ট দফতর। এতে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার কথা। কিন্তু সেটা হয়নি। হয়েছে তার উল্টোটা। আর এর পেছনে শক্তি জুগিয়েছে দেশটির মুদ্রা ইয়েনের প্রত্যাবর্তন। সোমবার নিউইয়র্কে ইয়েনের তুলনায় ডলার শক্তিশালী হয়েছে। এদিন এক ডলারে বিক্রি হয়েছে ১১৩.৯৫ ইয়েন। গত শুক্রবার যা ছিল ১১৩.২৫ ইয়েন। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে জাপানের পুঁজিবাজারে। বিবিসির খবরে বলা হচ্ছে, পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য নেতিবাচক হওয়া সত্ত্বেও সোমবার জাপানের পুঁজিবাজারে সূচক ৭ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ২০০৮ সালের পর যা সবচেয়ে বড় উল্লম্ফন। গত সপ্তাহে ইয়েনের বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম গত ১৫ মাসে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যায়। এর ফলে দেশটির রফতানি খাত ধরা খায়। ওই সময় নিক্কেই সূচক ১১ শতাংশেরও বেশি পতনে যায়। শুধু শুক্রবার সূচক ৪.৮ শতাংশ কমে ১৪৯৫২ পয়েন্টে বাজার শেষ করে। কিন্তু সোমবার ইয়েনের বিপরীতে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় রফতানি খাত চাঙ্গা হয়। আর তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে বাজারে। এদিন নিক্কেই সূচক ৭.২ শতাংশ বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়। সাধারণত, ইয়েন শক্তিশালী হলে বিনিয়োগকারীদের মধ্য অনাস্থা বেড়ে যায়। আর অনাস্থা বাড়লে রফতানি খাতে আয় কমে। যার ফলে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অন্যদিকে ইয়েনের বিপরীতে ডলার শক্তিশালী হলে রফতানি খাত চাঙ্গা হয়। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে জাপানের পুঁজিবাজারে। খবরে বলা হয়, গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি টয়োটার শেয়ারদর এদিন ৯.৫ শতাংশের বেশি, হোন্ডার ৮ শতাংশ এবং নিশানের ৬.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে প্রযুক্তি খাতের কোম্পানি শার্প ও সনির শেয়ারদর যথাক্রমে ৭ ও ৮ শতাংশ বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বছর ইয়েন দুর্বল হওয়ার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। আর এটা হলে তা রফতানিকারকদের জন্য ইতিবাচক কিছু বয়ে আনবে। চাঙ্গা হবে দেশের অর্থনীতি। জাপানের দেশজ চাহিদা দুর্বল ও আবাসন খাতের বিনিয়োগ শ্লথ হওয়ায় দেশটির জিডিপি কমেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিবিসির খবরে বলা হয়, জাপান সরকার দেশটির অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর পরও ২০১৫ সালের শেষ প্রান্তিকে দেশটির জিডিপি সঙ্কুচিত হয়েছে। গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে তার আগের প্রান্তিকের চেয়ে জিডিপি দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে। তবে এ সময়ে দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কমবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে শিনজো আবে জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর দেশটির অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে ‘আবেনোমিকস’ কর্মসূচী গ্রহণ করে। এর পরও দেশটির অর্থনীতি সঙ্কটে রয়েছে। দুই দশক ধরে জাপান চাহিদা ও বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে। তবে অর্থনীতিবিদ মার্টিন শালজ বিবিসিকে বলেছেন, দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল। ফলে কোন এক প্রান্তিকের ঋণাত্মক অবস্থা দেখে সার্বিক বিবেচনা করা ঠিক হবে না। জাপানের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে আবেনোমিকসের ত্রিমুখী পরিকল্পনা কাজ করছে। এই তিন নীতির প্রথমটি হচ্ছে মুদ্রা তীর। এতে দেশটির মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস করতে অর্থ সরবরাহ বাড়বে। দ্বিতীয় নীতি হচ্ছে আর্থিক তীর। এটি অর্থনৈতিক চাহিদার উদ্দীপনা সৃষ্টিতে সরকারী ব্যয় বাড়াবে। আর তৃতীয় নীতি হচ্ছে অবকাঠামোগত তীর। এই নীতি দেশটির অবকাঠামোগত পুনর্গঠনের মাধ্যমে অর্থনীতিকে আরও উৎপাদনমুখী ও প্রতিযোগী করে তুলবে।
×