ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

৫ উইকেটে হার ভারতের

ভারতকে কাঁদিয়ে শিরোপা উইন্ডিজের

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ভারতকে কাঁদিয়ে শিরোপা উইন্ডিজের

মিথুন আশরাফ ॥ অনুর্ধ ১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরুর আগ থেকেই ফেবারিট দল একটিকেই ধরা হয়েছিল। সেই দলটি ভারত। আর বাংলাদেশের কাছে তিন ম্যাচের সিরিজে জানুয়ারিতে হোয়াইটওয়াশ হওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আমলেই নেয়া হয়নি। অথচ সেই ভারতকেই ফাইনালে ৫ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো যুব বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নকআউট পর্বে এক এক করে পাকিস্তান, বাংলাদেশের পর ভারতকে হারিয়ে শিরোপা নিজেদের করে নিয়ে গৌরবও অর্জন করল ওয়েস্ট ইন্ডিজ যুব দল। যুব বিশ্বকাপ পেল নতুন চ্যাম্পিয়ন দলও। চতুর্থবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যে আশা দেখে ভারত, তা ভেস্তে গেল। ম্যাচে টস জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ভারতকে আগে ব্যাট করতে পাঠায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসাররা যে কতটা বিধ্বংসী তা আগেই বোঝা গেছে। পেস আক্রমণের সামনে কুলিয়ে উঠতে পারেনি স্বাগতিক বাংলাদেশ, পাকিস্তানও। এবার ফাইনালে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপও সেই আক্রমণের সামনে ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে। ৪৫.১ ওভারে ১৪৫ রান করতেই অলআউট হয়ে যায়। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫১ রান করেন সরফরাজ খান। বল হাতে পেসার রায়ান জন ও আলজাররি জোসেফ ৩টি করে এবং কিমো পল ২টি উইকেট নেন। জবাব দিতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানরা খুব সাবধানে জয়ের কাছে এগিয়ে যেতে থাকেন। ভারত স্পিনারদের ঘূর্ণির সামনে খানিক খেই হারিয়ে ফেললেও শেষপর্যন্ত জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিয়াচি কার্টির ১২৫ বলে করা অপরাজিত ৫২ রানের সঙ্গে কিমো পলের অপরাজিত ৪০ রানে ৪৯.৩ ওভারে ৩ বল বাকি থাকতে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৪৬ রান করে জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বল হাতে মায়াঙ্ক ডাগার ৩ উইকেট নেন। একজন স্পিনারও নিয়ে মাঠে নামেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ! ৫ পেসার বল করে। ভারত তাতে শুরু থেকে শেষপর্যন্ত ডুবে থাকে। যখন ৮৭ রানে ৬ উইকেট হারায়, তখনই সবার মনে হয় ফাইনালের দিনটি, ভালবাসা দিবসের দিনটি ওয়েস্ট ইন্ডিজেরই হতে চলেছে। অনেক চেষ্টার পর ১৪৫ রান করতে পারে ভারত। কোয়ার্টার ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ও সেমিফাইনালে বাংলাদেশের বিপক্ষে যেভাবে খেলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তাতে ভারতের করা এ রান যে খুব আহামরি নয়, তা বোঝাই গেছে। এরপরও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানরা শুরু থেকেই খুব সাবধান হয়ে খেলেন। তাতে শুরুতে কাজ হয় না। ৭৭ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পোপ, ইমলাচ, হেটমায়ারা, স্প্রিঙ্গার, গুলিদের হারিয়ে খাদের কিনারায় পড়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তখন মনে হয়েছে, ভারত জিতেও যেতে পারে। জয় হয়ত মিলতেও পারত। যদি উইকেট শিকার করা যেত। সেই সুযোগ মিলেছিলও। ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোরবোর্ডে যখন ৯৫ রান, তখন ১০ রান করা কিমো পলের ক্যাচটি তালুবন্দী করতে ব্যর্থ হন সরফরাজ। এ সুযোগটি পেয়ে আর থেমে থাকেননি পল। এগিয়েও চলেছেন। তার সঙ্গে কার্টির ম্যাচ জয়ী ইনিংসই খেলে ফেলেন! পল ও কার্টির লক্ষ্যই ছিল, কোনভাবেই আউট হওয়া যাবে না। প্রয়োজনে রান নেয়া চলবে না। যেমনটি ৪২ ওভার থেকে ম্যাচ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত টানা ৮ ওভার (৩ বল কম) কোন বাউন্ডারিই হাঁকাননি পল ও কার্টি। তাতে সাফল্যও মিলল। আর কোন উইকেটই পরল না। ১৮ বলে যখন জিততে ১৪ রান প্রয়োজন, ৬ বলে ৫ রান হয়। ১২ বলে যখন জিততে ৯ রান প্রয়োজন, তখন আবার আভেস খান পলের ক্যাচ লুফে নিতে ব্যর্থ হন। শেষে টান টান উত্তেজনার সময় একটি উইকেটই অনেক! সেই কাজটিও করতে পারল না ভারত। তাতে করে হারই হলো নিয়তি। ৬ বলে জিততে যখন ৩ রান প্রয়োজন, তিন বলে ৩ রান নিয়ে জয় পেয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কাটিং ও পলের অবিচ্ছিন্ন ৬৯ রানের জুটিতে জয় নিশ্চিত হতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটারদের সে কী উল্লাস! কেউ নাচছে। কেউ মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। কেউ আবার মাঠে পাগলের মতো দৌড়াচ্ছে! আর ভারত ক্রিকেটাররা হতাশায় মুছড়ে পড়ে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ যে পূরণ হলো না। যুব বিশ্বকাপের ফাইনাল মানেই ভারতের দাপট। তা আগে দেখা গেছে। কিন্তু সেই দাপট অব্যাহত থাকল না এবার। ১৯৮৮ সাল থেকে ১১ বার যুব বিশ্বকাপ হয়েছে। আগের ১০ বারের বিশ্বকাপে তিনবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। যুব বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশিবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করতে পারত ভারত। যদি এবার ১১তম আসরে চ্যাম্পিয় হতে পারত। ২০০০ সালে জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার মোহাম্মদ কাইফের নেতৃত্বে প্রথমবার, ২০০৮ সালে জাতীয় টেস্ট দলের বর্তমান অধিনায়ক বিরাট কোহলির নেতৃত্বে দ্বিতীয়বার ও ২০১২ সালে উন্মুক্ত চাঁদের নেতৃত্বে তৃতীয়বার শিরোপা জিতে ভারত। এবার ইশান কিশানের নেতৃত্বে চতুর্থবারের মতো যুব বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তোলার স্বপ্ন পূরণ হলো না। এবারের বিশ্বকাপের আগে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া সবচেয়ে বেশিবার সমান তিনবার করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সেই স্থানেই থাকল ভারত। ৫ বার ফাইনাল খেলে তিনবার চ্যাম্পিয়ন হলো, দুইবার হলো রানার্সআপ। যুব বিশ্বকাপে এগারোবারই অংশ নেয় ভারত। তিনবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সঙ্গে ২০০৬ সালে একবার রানার্সআপ হয়। এবারও রানার্সআপ হলো। ২০০২ ও ২০০৪ সালে সেমিফাইনালেও খেলে ভারত। ২০১৪ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে এবং পঞ্চম দল হয় ভারত। ১৯৮৮ ও ২০১০ সালে ষষ্ঠ হয়। আর ১৯৯৮ সালে দ্বিতীয় পর্বে খেলে ভারত। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফাইনাল ‘কাটা’ এবার দূর হয়েই গেল। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ মিলল। এবার আর তা হাতছাড়া করল না ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০০৪ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো যুব বিশ্বকাপ আয়োজিত হয়। সেই বিশ্বকাপেই প্রথমবার ফাইনালে খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হেরে প্রথমবারের মতো শিরোপা জয়ের স্বপ্ন ধূলিস্মাত হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের। আবার যখন দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশে যুব বিশ্বকাপ হয়, এবারও ফাইনালে খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এবার ভারতকে হারিয়ে শিরোপা স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেই ফেলল। ওয়েস্ট ইন্ডিজও এগারোবারই বিশ্বকাপ খেলে। এর আগে ২০০৪ সালে যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জাতীয় দলের ক্রিকেটার দিনেশ রামদিনের নেতৃত্বে রানার্সআপ হয়, সেটিই সর্বোচ্চ অর্জন ছিল। এরবাইরে ১৯৮৮ ও ২০১০ সালে সেমিফাইনাল খেলে, তৃতীয় হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০০২ সালেও সেমিফাইনাল খেলে, চতুর্থ হয়। ২০০০ সালে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে পঞ্চম, ২০১২ ও ২০১৪ সালে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে ষষ্ঠ হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০০৬ সালেও কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে। ২০০৮ সালে নবম ও ১৯৯৮ সালে দশম হয় দলটি। এবার শিমরন হেটমায়ারের নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবীয় যুব ক্রিকেট দলের ক্রিকেটাররা দেশবাসীকে যেন ভালবাসা দিবসের শুভেচ্ছাই দিল। শিরোপা জয়ের উৎসব করার উপলক্ষ্যই এনে দিল।
×