ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এবার জামায়াতের টার্গেট চাঁপাই সীমান্তের ইউপি দখল

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

এবার জামায়াতের টার্গেট চাঁপাই সীমান্তের ইউপি দখল

ডি এম তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত ঘুরে এসে ॥ পৌর নির্বাচনের সময় থেকেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরসহ জেলাজুড়ে জামায়াত-শিবির তাদের সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক তৎপরতাকে কৌশলগত রূপ দিয়ে ঝুঁকেছে সাংগঠনিক তৎপরতায়। ভারতে পালিয়ে থাকা জঙ্গী সংগঠনগুলোর সঙ্গে এদের সখ্য দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এবার লক্ষ্য তাদের ইউপি নির্বাচনে পরিষদ দখল। বিশেষ করে চিহ্নিত সন্ত্রাসের জনপদ শিবগঞ্জ সীমান্তসহ ১৪ ইউনিয়নের যেসব জামায়াত-শিবির ক্যাডার এখানকার যৌথবাহিনীর একাধিক অভিযানে বাড়িঘর ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল তারাই জঙ্গী সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করার ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। বিশেষ করে পশ্চিম বঙ্গের মালদহ, মুর্শিবাদ, নদীয়াসহ প্রায় সাতটি জেলার চিহ্নিত এলাকায় অবস্থানকারী জঙ্গীদের সঙ্গে এখানকার উগ্রবাদী যুবকরা শুধু ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখছে না, তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে। বিভিন্ন অস্থায়ী কর্মকা-ের মাধ্যমে যে অর্থ উপার্জন করছে তার একটি অংশ জঙ্গীদের হাতে তুলে দিচ্ছে। অপর একটি অংশ চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকার সাংগঠনিক নেতাকর্মীদের পাঠাচ্ছে। এছাড়া ভারতে অবস্থানকারী এসব সন্ত্রাসী কর্মীদের বাসস্থান, চিকিৎসাসহ কর্মসংস্থান মিলিয়ে সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে জঙ্গী সংগঠনগুলো। বিশেষ করে ভারতের ঐসব অঞ্চলে জেএমবি খুবই শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে এখানকার বিএনপি জামায়াত-শিবির কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। গত পৌর নির্বাচনে ভোটার না হয়েও নানা ধরনের সহযোগিতা দিতে শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী গোদাগাড়ীসহ রাজশাহী বিভাগের একাধিক পৌর এলাকায় অবস্থান নিয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছে। সন্ত্রাসের জনপদ শিবগঞ্জ পৌর নির্বাচনে এবার বিএনপি জামায়াত-শিবির প্রার্থী অনেক পিছিয়ে থাকলেও পাস করেছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। অনেকের অভিমত শিবগঞ্জে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর বিজয়ের পেছনে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের প্রত্যক্ষ মদদ ছিল। এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে বিজয়ী বিদ্রোহী আওয়ামী লীগ প্রার্থী। যদিও বর্তমান এমপি কানসাট বিদ্যুত আন্দোলনের নেতা গোলাম রাব্বানীর একান্ত নিজস্ব প্রার্থী ছিল বিজয়ী আওয়ামী লীগের এই বিদ্রোহী প্রার্থী। ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগ তাকে বহিষ্কার করেছে। পাশাপাশি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে পৌর মেয়র হয়েছেন জামায়াত প্রার্থী। অনেকের অভিযোগ এখানেও জামায়াত প্রার্থীর বিজয়ের পেছনে প্রশাসনসহ আওয়ামী লীগের একটি মহলের মদদ ছিল। ধারণা করা হচ্ছে মাত্র হাজার খানেক ভোটে পিছিয়ে থাকা আওয়ামী লীগ প্রার্থী ভবিষ্যতে কোন ধরনের বড় পদে বা আসনে যেতে না পারে তার জন্যই আওয়ামী লীগের একটি মহল গোপনে তার বিরুদ্ধে কাজ করে প্রথম রাতেই বিড়াল মেরে বিজয় রুখে দিয়েছে। একইভাবে রহনপুর পৌরসভার ইতিহাসে প্রথমবার পৌরসভা হাতছাড়া হয়েছে আওয়ামী লীগের। বিএনপি প্রার্থীর বিজয়ের পেছনে মদদ জুগিয়েছে বর্তমান এমপিবিরোধী আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপ। এসব জয় বিজয়ে প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে মদদ জুগিয়েছে বিএনপি-জামায়াত বলে সকলের ধারণা। উল্লেখ্য, রহনপুরে পৌর নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী বর্তমান এমপির আপন ভাই। এবার বিএনপি জামায়াতের টার্গেট জেলার প্রতিটি উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ। বিশেষ করে এখানে জামায়াত শুধু আওয়ামী লীগ বা ১৪ দলকে নয় তারা বিএনপিকেও বড় ধরনের প্রতিপক্ষ করে সামনের দিনগুলোতে সীমান্তের ইউনিয়ন পরিষদগুলো দখল করতে চাচ্ছে। আর এসব কারণে কর্মীদের মনে আস্থা জাগাতে ও বিশ্বাস স্থাপনে নতুন করে সন্ত্রাসের দিকে ঠেলে না দিয়ে কৌশলগতভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। বিশেষ করে গত পৌর নির্বাচনে তারা প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা সেরে নিয়েছে। তাই তারা (জামায়াত) ভারতে পালিয়ে থাকা কর্মীদের ব্যাপক হারে নিয়ে এসে প্রার্থীর সমর্থনে কাজ করিয়েছিল। তবে একটি নির্ভর যোগ্য সূত্র জানিয়েছে সন্ত্রাস করে পালিয়ে থাকা কর্মীদের ভোট ডামাডোলের মধ্যে নিয়ে এনে গ্রামগঞ্জে কাজ করিয়েছে সংগঠনের। সাংগঠনিক কাজে নেতাকর্মীরা এতটাই মনোযোগ দিয়েছে যে জামায়াতের কোন কর্মসূচীতে জেলার কোথাও কোন কর্মীকে দেখা যাচ্ছে না। তারা নতুন করে আটকে পড়া কিংবা জেলখানাতে যাওয়া এড়িয়ে সংগঠনের কাজ করছে। যার কারণে দেখা যাচ্ছে কোন কর্মসূচীতে। প্রায় প্রতিটি গ্রামে মহিলাকর্মীদের নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করছে। সন্ত্রাসের জনপদ শিবগঞ্জ এলাকার ১৪ ইউনিয়নের অধিকাংশ বিএনপির দখলে। জামায়াত চাচ্ছে এবার সেসব ইউনিয়ন তাদের দখলে আনার। একইভাবে বেশি মনোযোগ যেখানে আওয়ামী লীগ চেয়ারম্যান আছে। তাই সেসব ইউনিয়নে জামায়াত সাংগঠনিক তৎপরতা জোরদার করেছে। সমগ্র জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে তারা একই ধরনের তৎপরতা জোরদার করে বিশাল অংকের অর্থ নিয়ে মাঠে নেমেছে। সংগঠনিক কাজে বিশাল অঙ্কের অর্থের বাজেট করে তা সংগ্রহে মনোযোগ দিয়েছে ইউনিয়ন পর্যায়ের জামায়াত ইউনিট। বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, সন্ত্রাসের জনপদ শিবগঞ্জ, ভোলাহাট ও গোমস্তাপুর উপজেলার কয়েক লাখ জামায়াত কর্মী ভারতে পালিয়ে রয়েছে। তার মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার কর্মীরা ভারতে অবস্থান নিয়ে অর্থ রোজগারে তৎপর রয়েছে। তাদের অর্থ কামায়ের প্রধান উৎস অস্ত্র ও মাদক দ্রব্য। তাই এরা বছর শুরুর (২০১৬) প্রথম দিন থেকেই অস্ত্র আর মাদক ঠেলে দিচ্ছে বাংলাদেশে। মাঝে মধ্যেই আইন প্রয়োগকারীদের হাতে ছিটেফোটা অস্ত্র আটক হলেও বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনা খুবই বিরল। র‌্যাবের একটি দল সম্প্রতি শিবগঞ্জের ওমরপুরে অভিযান চালিয়ে দুটি বিদেশী পিস্তল, ১৩ রাউন্ড গুলি, চারটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করে। সে অস্ত্রের চেয়ে বিস্ফোরক এজেন্ট হিসেবে কাজ করে বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে। ইতোমধ্যেই সে কয়েক হাজার কেজি বিস্ফোরক সরবরাহ করেছে। একইভাবে একই সময়ে গোমস্তাপুর উপজেলার রোকনপুর বাজার পাড়ার মনিরুল ইসলামের ছেলে সোহেল রানা (২২), তেলকুপির ফজলুর রহমানের ছেলে মজিবুর রহমানকে (৪৩) আটক করে আইন প্রয়োগকারীরা। তারা মূলত আগ্নেয়াস্ত্র ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করত বলে র‌্যাবের কাছে স্বীকার করেছে। বিজিবি অপর এক অভিযানে গোমস্তাপুর নগর পাড়া থেকে একাধিক অস্ত্র, গোলাবারুদ উদ্ধার করে। একাধিক যৌথ অভিযানের পরও শিবগঞ্জ অঞ্চলে কমছে না সন্ত্রাসী কর্মকা-। পুলিশ এ পর্যন্ত নাশকতার মামলায় সাড়ে আট হাজার আসামিকে আটক করেছে। একই সঙ্গে আইন প্রয়োগকারীরা ২৮টি আগ্নেয়াস্ত্র, ২১০ রাউন্ড গুলি, ১৫৮টি ককটেল, ১১৬ পেট্রোল বোমা ও ২৩ হাজার বোতল ফেনসিডিল আটকের পর একাধিক আইন প্রয়োগকারী এই সুবাদে নানান পুরস্কার পদক পেলেও তারা এখনও বহু দুর্গম সীমান্তে পৌঁছতে পারেনি। যার কারণে অস্ত্রের কোন বড় চালান ধরা পড়েনি। একইভাবে শত শত মন বিস্ফোরক নির্বিঘেœ গন্তব্যে গেলেও তা ধরতে পারেনি আইন প্রয়োগকারীরা। অধিকভাবে অর্থ কামাবার মানসে সন্ত্রাসী অস্ত্রের সঙ্গে সমান তালে এনেছে মাদক সামগ্রী। যদিও বিভিন্ন সময়ে এক কেজির অধিক হেরোইন, ১৬ হাজার ফেনসিডিল, ৪০ কেজি গাঁজা, ১শ’ চোলাই মদ, প্রায় ৯ হাজার নেশা জাতীয় ইঞ্জেকশন আটক করেছে আইন প্রয়োগকারীরা। একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে ফেব্রুয়ারি ১২ তারিখ পর্যন্ত ১০ লাখ ফেনসিডিল ঢুকেছে। আইন প্রয়োগকারীরা শিবগঞ্জ অঞ্চল হতে সহিংসতা, নাশকতার অভিযোগে বিএনপি-জামায়াতের ৭৬ জন শীর্ষ নেতাসহ ১ হাজার ২২ জনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
×