ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সার্চ ইঞ্জিন পিপীলিকায় যুক্ত হলো আরও পাঁচটি নতুন সুবিধা ॥ ইন্টারনেটে তথ্য খোঁজার দেশী ওয়েবসাইট

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সার্চ ইঞ্জিন পিপীলিকায় যুক্ত হলো আরও পাঁচটি নতুন সুবিধা ॥ ইন্টারনেটে তথ্য খোঁজার দেশী ওয়েবসাইট

ফিরোজ মান্না ॥ ইন্টারনেটে তথ্য খোঁজার বাংলাদেশী ওয়েবসাইট (সার্চ ইঞ্জিন) পিপীলিকায় আরও পাঁচটি নতুন সুবিধা যোগ করা হয়েছে। এখন থেকে দেশ বিদেশের সাম্প্রতিক সংবাদ, কেনাকাটা, চাকরি খোঁজা, লাইব্রেরি ও বানান সংশোধনী করা যাবে এর মাধ্যমে। সার্চ ইঞ্জিনটি দিনে দিনে সমৃদ্ধ করা হচ্ছে। ইঞ্জিনটি বর্তমানে বাংলা ও ইংরেজী ভাষায় দেখা গেলেও ভবিষ্যতে আরও কয়েকটি ভাষা যুক্ত করা হবে। বিশ্বে হাজারো সার্চ ইঞ্জিন থাকলেও পিপীলিকা বাংলাদেশের নিজস্ব সার্চ ইঞ্জিন। এটা দেশের জন্য একটি বড় আবিষ্কার। এই আবিষ্কারের বিস্তার ঘটাতে সরকারী বেসরকারী সহযোগিতার প্রয়োজন। গুগল ইয়াহু সার্চ ইঞ্জিন দুনিয়াব্যাপী রাজত্ব করলেও পিপীলিকাও একদিন অনেক বড় হবে। সূত্র জানিয়েছে, পিপীলিকায় নতুন যুক্ত হওয়া সুবিধাগুলোর বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ফলিতবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন শহীদুর রহমান, পিপীলিকার প্রকল্প ব্যবস্থাপক আবু নাছের ও সিএসই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুহুল আমিন। দেশের প্রধান প্রধান পত্রিকার সংবাদ, বাংলা ব্লগ, বাংলা উইকিপিডিয়া ও সরকারী তথ্য একসঙ্গে পাওয়া যাবে বলে জানানো হয়। পিপীলিকা লাইব্রেরিতে দেশীয় বিভিন্ন প্রকাশনী ও অনলাইনে বইয়ের দোকানের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এ বছরের বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের তালিকাও পাওয়া যাবে। পিপীলিকা জব সার্চ ব্যবহার করে সব চাকরির খবর একসঙ্গে পাওয়া যাবে। বাংলা বানানের সন্দেহ দূর করতে বানান সংশোধনীর সুবিধাও যুক্ত করা হয়েছে। দেশের কিছু উজ্জ্বল মুখ তৈরি করছে বাংলা সার্চ ইঞ্জিন পিপীলিকা। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একদল শিক্ষার্থী। ৩০ গবেষক ১১ ওয়েব ডেভেলপার ৩ বছর পরিশ্রম করে তৈরি করছে বাংলা সার্চ ইঞ্জিন পিপীলিকা। এই সার্চ ইঞ্জিন বাংলা ও ইংলিশ দুই ভাষাতে কাজ করতে সক্ষম। পিপীলিকার রয়েছে নিজস্ব অনুবাধন ব্যবস্থা। বানান ভুল লিখলেও সঠিক উত্তর খুঁজে দেবে পিপীলিকা। সার্চ ইঞ্জিন পিপীলিকা তৈরির সম্পূর্ণ অর্থায়ন করছে বেসরকারী মোবাইল কোম্পানি গ্রামীণফোন। গ্রামীণফোন পিপীলিকা তৈরির জন্য এক কোটি টাকা দিয়েছিল। এরপর আর এই সার্চ ইঞ্জিনের জন্য কোন অর্থ ব্যয় করা হয়নি। সার্চ ইঞ্জিনটি আরও সমৃদ্ধ ও প্রসার ঘটাতে হলে প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ দরকার। পিপীলিকা সার্চ ইঞ্জিনের ঠিকানাÑ। যঃঃঢ়://িি.িঢ়রঢ়রষরশধ.পড়স। দেশে প্রথমবারের মতো চালু হওয়া বাংলা সার্চ ইঞ্জিন ‘পিপীলিকা’ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের নেতৃত্বে পরিচালিত এই প্রকল্পে মুখ্য গবেষক ও টিম লিডার হিসেবে ছিলেন রুহুল আমীন সজিব। প্রকল্প সম্পর্কে টিম লিডার রুহুল আমীন সজিব আগেই বলেছেন, আপাতত এটি বিটা ভার্সন আকারে ছাড়া হয়েছে। এতে যে কেউ পরামর্শ দিতে পারেন। প্রতিনিয়ত এর বৈশিষ্ট্য ও ফাংশন আপডেটের কাজ চলছে। ইতোপূর্বে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিনগুলোর কোনটিতেই বাংলা ভাষার ওপর তেমন গুরুত্বারোপ করা হয়নি। তাই পিপীলিকায় বাংলা তথ্য বিশ্লেষণ ও অনুসন্ধানের ওপর গুরুত্ব দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। পিপীলিকার (শাবির) ১১ ডেভেলপার মিলে এটি তৈরি করেছেন। এরা হলেন মিশু, তালহা, তালহা ইবনে ইমাম, তৌহিদ সাজ্জাদ, আসিফ, বাকের, অপু, ফরহাদ আশিষ ও মাকসুদ। এছাড়াও ৩০ শিক্ষার্থীর থিসিসের ওপর ভিত্তি করে এই প্রজেক্ট তৈরি করা হয়েছে। পিপীলিকা তে চারটি ভিন্ন ধরনের সার্চ সুবিধা রয়েছে যেমন সংবাদ অনুসন্ধান, ব্লগ অনুসন্ধান, বাংলা উইকিপিডিয়া অনুসন্ধান, জাতীয় ই-তথ্যকোষ। নির্মাতারা জানান, পিপীলিকার বাংলা সার্চের জন্য আমাদের নিজস্ব একটি বাংলা অভিধান ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যবহারকারী কোন শব্দের ভুল বানান দিলেও পিপীলিকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সঠিক বানান খুঁজে নিয়ে অনুসন্ধান চালাবে। তবে ইংরেজী সার্চের ক্ষেত্রে অভিধানটি ব্যবহার করা হয়নি। ব্যবহারকারীদের সুবিধার জন্য তথ্যগুলো বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে, অপরাধ, ব্যবসা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, খেলাধুলা, কৃষি তথ্য ইত্যাদি। আর ক্যাটাগরিভিত্তিক সার্চের ক্ষেত্রে পিপীলিকায় দেশের খবর, আন্তর্জাতিক, ব্যবসা ও বাণিজ্য, তথ্য ও প্রযুক্তি, বিনোদন ও খেলাধুলা নামে ছয়টি ক্যাটাগরি রয়েছে। সূত্র মতে, ২০০৪ ব্যাচের কয়েক ছাত্র অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল হিসেবে তৈরি হয় ওয়েব ক্রলার। এটা হওয়ার পরই নজর দেয়া হয় বাংলা সার্চিংয়ের দিকে। ডাটাবেজ সার্চিং থেকে সরে এসে হাত দেয়া হয় ইনডেক্সবেজড সার্চের দিকে। আস্তে আস্তে একটা শক্তিশালী সার্চ ইঞ্জিনের দিকে এগিয়ে যায় তরুণরা। ২০০৫ ব্যাচের একটি থিসিস গ্রুপ এই কাজটাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যায়। এটিকে একটি বেসিক বাংলা সার্চ ইঞ্জিনে কাঠামো হিসেবে দাঁড় করা সম্ভব হয় ২০১০ সালের শেষের দিকে। ডাটাবেজ কোর্স প্রজেক্ট হিসেবে একটা ছোট স্কেলের সার্চ ইঞ্জিন বানিয়ে তার নাম দেয়া হয় পিপীলিকা। পরে এই দুই প্রজেক্টকে এক করে তৈরি করা হয় মূল সার্চ ইঞ্জিন। ২০১১ সালে পিপীলিকা বাংলা এবং ইংরেজী দুই ভাষাতেই সার্চ করতে শুরু করে। আর তখন থেকেই এটি কার্যকর একটি সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। দিন যত যাচ্ছে পিপীলিকা তত সমৃদ্ধ হচ্ছে। ২০১৩ সালের ১৩ এপ্রিল থেকে অফিসিয়ালি রিলিজ করা হয় পিপীলিকার বেটা ভার্সন।
×