ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট প্রধানমন্ত্রীর নামে করার সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট প্রধানমন্ত্রীর নামে করার সিদ্ধান্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের প্রথম জাতীয় বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে নামকরণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। রাজধানীর চাঁনখারপুলে প্রস্তাবিত এই বার্ন ইনস্টিটিউটের নাম ‘শেখ হাসিনা বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট’ হিসেবে পরিচিত হবে। নতুন এই স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের নাম প্রধানমন্ত্রীর নামে প্রতিষ্ঠা করার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে একটি আনুষ্ঠানিক পত্র বঙ্গবন্ধু ট্রাস্ট বরাবর অনুমোদনের জন্য শীঘ্রই প্রেরণ করা হবে। ট্রাস্টের অনুমোদনের পর এর নামকরণ চূড়ান্ত হবে। আগামী মার্চের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। গত ২৪ নবেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়া হয়। ৫২২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে আগামী ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। রবিবার সচিবালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এই ঘোষণা দেন। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বিমান কুমার সাহা, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ দীন মোঃ নুরুল হক, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের জাতীয় সমন্বয়ক অধ্যাপক ডাঃ সামন্ত লাল সেনসহ মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী সম্মেলনে বলেন, বিগত কয়েক বছরে একটি রাজনৈতিক দলের প্রতিহিংসা মেটানোর লক্ষ্যে সারাদেশে আগুন ও পেট্রোলবোমার সন্ত্রাস ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। শত শত মানুষ আগুনে দগ্ধ হয়ে ঝলসানো শরীর নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছিল। মারা গেছে অসংখ্য নিরীহ মানুষ। তাদের হাত থেকে শিশু বা অন্তঃসত্ত্বা নারীও রক্ষা পায়নি। এ সময় দিনমজুর, রিক্সাচালক, ট্রাক ড্রাইভারসহ অগণিত গরিবের পাশে মায়ের মমতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দাঁড়ানোর কথা স্মরণ করে মন্ত্রী বলেন, সারাদেশের মানুষ দেখেছে আগুন সন্ত্রাসের সময় প্রধানমন্ত্রী কিভাবে দরিদ্র মানুষের জন্য সর্বোত্তম চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন। জনগণ ও অগ্নিদগ্ধ মানুষের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর সেই অবদানকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বার্ন ইনস্টিটিউটের নামকরণ জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার নামে রাখার প্রস্তাব দিয়েছে। চাহিদার তুলনায় বার্ন ইউনিটের ধারণ ক্ষমতা অত্যন্ত নগণ্য হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক ইনস্টিটিউট নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়। প্রস্তাবিত ‘শেখ হাসিনা বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক ইনস্টিটিউটের নির্মাণ ব্যয় দেশী সম্পদ থেকে হবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের সময় বাংলাদেশের জন্য ভারতের অনুদান ঘোষণার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের কাছে প্রস্তাব করা হয়েছে যেন আন্তর্জাতিক মানের এই বার্ন ইনস্টিটিউট নির্মাণে ভারতের অনুদান থেকে একটি অংশ বরাদ্দ করা হয়। তিনি নিজেও ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। অবশেষে দেশে আন্তর্জাতিক মানের বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট স্থাপিত হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি হোটেল সোনারগাঁওয়ে প্লাস্টিক সার্জনদের বার্ষিক সম্মেলনে দেশে একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সর্বাধুনিক বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট স্থাপনের ঘোষণা দেন। এরপর ওই বছরের ১৭ মে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পরিচালক ডাঃ মোঃ জুলফিকার আলী বার্ন ইনস্টিটিউট স্থাপনের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেন। আর তা বাস্তবায়নে জোরালো ভূমিকা রাখে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। পুরান ঢাকার চাঁনখারপুলে বর্তমানে যে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে সেখানকার দুই একর জমির ওপর বহুতল ভবন বিশিষ্ট এ ইনস্টিটিউট গড়ে উঠছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকরা জানান, দেশে প্রতিবছর গড়ে ৬ লাখ নারী, পুরুষ ও শিশু বিভিন্নভাবে (বিদ্যুতস্পৃষ্ট, অগ্নিশিখা, রাসায়নিক ও গরম তরল পদার্থে ঝলসে) দগ্ধ হচ্ছে। তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে উচ্চ ডিগ্রীধারী বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন। সারাদেশের হাজার হাজার পোড়া রোগীর চিকিৎসার জন্য (এমডি ও এম এস উচ্চ ডিগ্রিধারী) কমপক্ষে দেড় হাজার জন বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক বিশেষজ্ঞ সার্জন প্রয়োজন হলেও বর্তমানে রয়েছে মাত্র ৫২। বর্তমানে সীমিত পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মেডিক্যাল কলেজে বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিষয়ে স্নাতকোত্তর এম এস ও মহাখালীর বিসিপিএসে (বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস এ্যান্ড সার্জনস) এফসিপিএস কোর্সে প্রতি বছর হাতেগোনা দুই/তিন শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে। পৃথক ইনস্টিটিউট স্থাপিত হলে প্রতিবছর গড়ে ১০ থেকে ১২ জন উচ্চ শিক্ষার কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন। আধুনিক বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট পোড়া রোগীদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার পৃথক ব্লক থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নের মাধ্যমে পোড়া রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে জাইকা প্রেসিডেন্ট সনদ প্রদান ॥ বাংলাদেশ টিকাদান কর্মসূচী, পোলিও নির্মূল এবং ফাইলেরিয়া প্রতিরোধে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ জাইকার প্রেসিডেন্ট সনদ পেলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। রবিবার সচিবালয়ে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হাতে এই সনদ তুলে দেন বাংলাদেশে জাইকার প্রতিনিধি মিকিতো হাতেইদা স্বাস্থ্যসেবায় সাফল্য অর্জনকারী চার থেকে পাঁচ দেশকে প্রতিবছর জাইকা প্রেসিডেন্ট সনদ দেয়া হয়। গুটিকয়েক দেশের মধ্যে এ বছর বাংলাদেশকে নির্বাচন করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এই সনদ সারাদেশে টিকা প্রদানের সহায়তায় নিয়োজিত লাখ লাখ কর্মীর পরিশ্রমলব্ধ সাফল্যের স্বীকৃতি। স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের নিরলস প্রচেষ্টার স্বীকৃতি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে যেভাবে পোলিও নির্মূল করা হয়েছে, অতীতে অনেক দুরারোগ্য ব্যাধি নির্মূলেও এদেশের জনগণ সেভাবেই সফল হয়েছে। ফাইলেরিয়া নির্মূলেও বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে। শীঘ্রই বাংলাদেশকে ফাইলেরিয়া মুক্ত ঘোষণা করার মতো পরিবেশ তৈরি হয়ে যাবে। বাংলাদেশের পোলিও নির্মূল ও ফাইলেরিয়া প্রতিরোধে জাইকার অবদান কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নে যে অবদান রেখে চলেছে এদেশের জনগণ তা সব সময় শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদতফরের পরিচালকবৃন্দ এবং জাইকার উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×