ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালিত হলো নানান উৎসবের ভিতর দিয়েও

লাল গোলাপের ছোঁয়ায় শিহরিত হলো প্রেমের হৃদয়

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

লাল গোলাপের ছোঁয়ায় শিহরিত হলো প্রেমের হৃদয়

মনোয়ার হোসেন ॥ ভালবাসা ছাড়া পূর্ণতা পায় না মানবজীবন। অপরিপূর্ণ সেই জীবনটা হয়ে ওঠে বিবর্ণ। তাই তো ভালবাসার প্রাপ্তি বা পরিচর্যায় জীবন হয় সুন্দর ও সার্থক। সৃষ্টির অনাবিল আনন্দে সমান্তরাল পথে এগিয়ে চলে জীবন ও ভালবাসা। পারস্পরিক মমতার বন্ধনে হয়ে ওঠে একে-অপরের আশ্রয়। সেই বন্ধন অটুট রাখার প্রচেষ্টার প্রকাশে নীরার বাগান কবিতায় কবি বলে যায়Ñ যতো না এঁটেল মাটি তার চেয়ে বেশি ছিল বালি/এই বালির ভিতরে ধীরে-ধীরে জীবনের ফুলকে ফোটানো/কাজটা সহজ ছিল না মোটেও/তার জন্য শ্রম চাই, চাই নিষ্ঠা, চাই ভালোবাসা/চাই প্রয়োজনমতো জল-হাওয়া। রাগ-অনুরাগে হৃদয়ের সেই নিভৃত অনুভবের সন্ধানে বিশ্বকবির উচ্চারণটি এমনÑ সখী, ভাবনা কাহারে বলে/সখী, যাতনা কাহারে বলে/তোমরা যে বল দিবস-রজনী ভালোবাসা ভালোবাসাÑসখী, ভালোবাসা কারে কয়...। সুরের আশ্রয়ে এভাবেই মনের গহীনে আলোড়ন তোলা বিচিত্র এ অনুভবকে উপলব্ধির চেষ্টা করেছেন অনেকেই। সেই সূত্রে গল্প-কবিতা-উপন্যাস কিংবা গানের বাণীতে অজস্রবার উচ্চারিত হয়েছে হৃদয়ঘটিত সে বোধের কথা। রবিবার শহরজুড়ে প্রকাশ্যে বা একান্তে প্রকাশিত হয়েছে প্রেমের সেই বার্তা। হয়ত কোন নতুন প্রেমিকযুগল পরস্পরের হাতটি ধরে নতুনভাবে বলেছে অনাদিকালের পুরনো সেই কথা ‘ভালবাসি তোমায়’। অথবা কাব্যিক ঢংয়ে বলার ধরনটি ছিল এমনÑ ভেবেছিলেম আজকে সকাল হলে/সেই কথাটি তোমায় যাব বলে/ফুলের উদাস সুবাস বেড়ায় ঘুরে/পাখির গানে আকাশ গেল পুড়ে...। ঋতুরাজ বসন্তের দ্বিতীয় দিনটি ছিল ‘সেই’ কথাটি বলার। এদিন ছিল বিশ্ব ভালবাসা দিবস। লাল গোলাপের ছোঁয়ায় শিহরিত হলো প্রেমের হৃদয়। ইতিহাসের পাতায় সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ডে। রাজধানী ঢাকার পথে পথে চোখে পড়েছে দিবসটি উদ্্যাপনের সুন্দরতম দৃশ্যকল্প। ভালবাসা দিবসে সকাল থেকে বিকেল অবধি শাহবাগ চত্বরে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। ঢাকাকে ভালবাসার জন্য নাগরিকদের সচেতন করার এ অনুষ্ঠানটি হয়ে ওঠে রাজধানীতে ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র প্রধানতম আকর্ষণ। ‘প্রাণসখা ঢাকা-লাভ ফর ঢাকা’ শীর্ষক আনন্দোৎসবটি নতুন মাত্রা যোগ করে ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র অনুষ্ঠানমালায়। তবে দিনভর সুরে সুরে সাজানো আয়োজনটি কাছে টেনেছে ভালবাসা উদ্্যাপনে আসা প্রেমিক যুগলদের। সেই সুবাদে ভালবাসা উদ্্যাপনকারীদের সঙ্গে আনন্দ পিপাসুরাও শামিল হয়েছেন এ আয়োজনে। চ্যানেল আই ও মাত্রার সহযোগিতায় এ আয়োজনকে ঘিরে সকাল থেকেই দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের আগমন ঘটে শাহবাগে। বিশাল মঞ্চে আয়োজনের শুরুতেই সময়ের জনপ্রিয় গানের দল জলের গান থিম সং ‘ঢাকা আমার ঢাকা প্রাণসখা ঢাকা’ গানটি পরিবেশন করে। এরপর হৃদয়ের আদলে তৈরি লাল বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনসহ অতিথিরা। অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ, নির্মাতা ও অভিনেতা আফজাল হোসেন, জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী, নাট্যজন ড. ইনামুল হক, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীর প্রমুখ। অনুষ্ঠানে আগত দর্শকদের ঢাকাকে তাদের ভালবাসার কথা জানান দেয়ার জন্য ছিল সাদা ‘রাইট ইউ ঢাকা’ নামের বোর্ডও। মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, আট মাস আগে আমি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলাম। ঢাকায় আমাদের নানা সঙ্কটে জীবন কাটে। কিন্তু এটি নিশ্চিতভাবে বলেতে পারি এমন মায়া-মমতায় ঘেরা শহর আর বিশে^র কোথাও নেই। হাজারও সমস্যার মধ্য দিয়ে এখানে জীবনকে আমরা উপভোগ করি। ঢাকাকে বসবাসের অনুপযোগী শহরগুলোর একটি বলা হয়, এখানে পাহাড় সমান সমস্যা রয়েছে, যার সমাধান কারও একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। আমি ঢাকার প্রত্যেক নাগরিককে একজন মেয়র হিসেবে দেখতে চাই। সবাই যখন নিজেদের মেয়র ভাবব তখন ঢাকার চেহারা নিশ্চিত পাল্টে যাবে। ২০১৬ সালকে আমরা পরিচ্ছন্ন বছর হিসেবে ঘোষণা করেছি। এ পরিচ্ছন্নতা শুধু ময়লা পরিষ্কার নয়, পরিচ্ছন্নতা চিন্তা-চেতনারও। সৈয়দ শামসুল হক বলেন, ভালবাসায় ঢাকা বলেই ঢাকা। মনে পড়ে আজ থেকে ৭০ বছর আগে একজন বালক হিসেবে এ ঢাকায় এসেছিলাম। বুড়িগঙ্গার পানি তখন ছিল টলটলে। আমি নতুন ঢাকাকে ঢাকা বলি না, যেখানে এখন আছি এটাই ঢাকা। এ ঢাকাতেই তরুণ রাজনীতিক শেখ মুজিবুর রহমানকে পথে চলতে দেখেছি। তখনও তিনি জাতির পিতা হননি, বঙ্গবন্ধু হননি। আমাদের সেই প্রিয় ঢাকার ঐতিহ্য ফিরে পেতে অবোধের মতো ভালবাসা হলে চলবে না। সত্যিই এখন সময় এসেছে প্রত্যেকে মেয়রের ভূমিকা পালন করবার। পরিচ্ছন্নতা আসুক আমাদের চিন্তা-ভাবনা আর আদর্শে। ঢাকা থাক আমাদের হৃদয়ে। ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ঢাকা একটি ঐতিহাসিক নগরী। এ শহরেরও একটি দেহ আছে, মন আছে। এটা যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা অনুধাবন করতে পারব ততক্ষণ পর্যন্ত আসলে হবে না। সেই সচেতনতা তৈরি করতেই এ আয়োজন। আলোচনার পরই ছিল সাংস্কৃতিক পর্ব। শুরুতেই তুষার ও তার দল নৃত্যের তালে তালে মোহিত করে সবাইকে। পরিবেশনা শেষে গান নিয়ে আসেন শিল্পী মম। তিনি একে একে পরিবেশন করেন ‘সোনাবন্ধু তুই আমারে’, ‘তোমাকে চাই আমি আরও কাছে’, ‘ওরে সাম্পানওয়ালা’, ‘ও বন্ধু কই’ গানগুলো। সুজন আরিফ গেয়ে শোনানÑ ‘শ্রাবণের মেঘগুলো’, ‘চলো বদলে যাই’, ‘সব ভাল ভুই একা ভাসিস নে’, ‘নিটোল পায়ে রিনিক ঝিনিক’, ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’ গানগুলো। এরপর রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে মঞ্চে আসেন বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। ‘আহা আজি এ বসন্তে’ গানটি দিয়ে তার পরিবেশনা শুরু করেন। বসন্তের বন্দনাই যেন গানে গানে আরেকবার করলেন শিল্পী। শুনিয়েছেন ভালবাসার গানও। একে একে পরিবেশন করেনÑ ‘কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া’, ‘ভালোবেসে সখি নিভৃতে যতনে‘, ‘আমার পরাণও যাহা চায়’ গানগুলো। ব্যান্ডদল জলের গান গেয়ে শোনায় ‘বকুল ফুল বকুল ফুল’, ‘তোমার একহাতে দেবো’, ‘নীল আকাশে দুই হাত বাড়িয়ে’ গানগুলো। এরপর গান নিয়ে মঞ্চে আসে শিরোনামহীন। তারা গেয়ে শোনায় ‘তুমি চেয়ে আছো তাই আমি পথে হেঁটে যাই’, ‘একটা পাখি বসে আছে’সহ বেশ কিছু গান। এ আয়োজনের অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন নগর বাউলখ্যাত জেমস। সূচনাতেই শিল্পী গেয়েছেন ‘লেইস ফিতা লেইস’। এরপর পরিবেশন করেনÑ ‘পদ্ম পাতার জল’, ‘দুষ্টু ছেলের দল’, ‘বিজলি’, ‘গুরু ঘর বানাইলা কি দিয়া’, ‘মা’, ‘এক জীবনের জের’, ‘মীরা বাঈ’, ‘পাগলা হাওয়া’। শেষ করে ‘ভিগি ভিগি রাত ম্যায়’ গানটি পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। যদিও দিনক্ষণ বেঁধে ভালবাসা হয় না। প্রকৃতির নিয়মে সহজাতভাবে হৃদয়ে জাগে ভালবাসা। তবে হৃদয়ের ভাষা প্রকাশের বিশেষ কোন দিন থাকলে মন্দ কী? নানা দিবসের মতো ওই দিনটিতে না হয় একটু বেশি উচ্চারিত হলো ভালবাসার কথা। অথবা বিশেষ দিবসের সুযোগে প্রকাশিত হলো প্রিয়তম কিংবা প্রিয়তমাকে মনের কথা জানান দেয়ার সুপ্ত বাসনাটি। দিবসটি আবাহনে প্রেমিক-প্রেমিকারা ভালবাসাবাসিতে পার করেছে সকাল থেকে রাত। লাল গোলাপটি প্রিয়তম বা প্রিয়তমার হাতে তুলে দিয়ে ঘটেছে প্রেমের প্রকাশ। ব্যক্ত হয়েছে বাকি জীবনে পাশে থাকার প্রত্যয়। প্রিয়জনের পাশাপাশি এদিন পরিবারের আপনজন বা প্রিয় বন্ধুটিকেও জানানো হয়েছে তার প্রতি মমত্ব বা মনের গভীরতম টানের কথাটি। ভালবাসা দিবসে রাজধানীর শাহবাগের পুষ্প বিতানগুলো ছিল প্রেমিক-প্রেমিকাদের উপচেপড়া ভিড়। ফুলটি কিনে প্রিয়জনকে তুলে দিয়ে একে অপরকে জানিয়েছে ফুলেল শুভেচ্ছা। বসন্তের দোলালাগা ফাগুনের রংমাখা পোশাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশের দেখা মিলেছে কপোত-কপোতীদের। বিশেষ করে মেয়েদের সাজসজ্জায় বাসন্তী শাড়ির সঙ্গে খোঁপায় জুড়ে গেছে রকমারি ফুলে সাজানো টায়রা। নারীদের হাতে হাতে দেখা গেছে প্রিয়তমের দেয়া লাল গোলাপসহ রকমারি ফুল। এমন বাহারি পোশাক আর বসন্ত বাতাসের ছোঁয়া লাগা উৎফুল্ল মননে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার চারপাশের চওড়া সড়কের পাশে নিভৃতে গল্প করে কেটেছে অসংখ্য প্রেমিক-প্রেমিকার সুন্দর সময়। দিনমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা রমনা পার্কে সুন্দর সময় কাটিয়েও ঘটেছে প্রেমের উদ্্যাপন। দুপুরের পর বিকেলে প্রেমিক যুগলের অনেকেই ভিড় জমিয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। এর বাইরে বসন্তের মাতাল সমীরণে ভালবাসা দিবসে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন প্রেমিকযুগল। হৃদয়ঘটিত গভীর উচ্ছ্বাস ধারণ করে চষে বেড়িয়েছে ঢাকা শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। মাতাল করা বসন্ত বাতাসে ভাসিয়েছে তাঁদের মন। অন্তর উজাড় করে বলা হয়েছে আগামী দিনের প্রেম-পথে চলার কথা। সকাল থেকে রাত অবধি অন্তরের স্পন্দিত আবেগে পালিত হয়েছে বিশ্ব ভালবাসা দিবস। দিনটি ছিল যেন শুধুই ভালবাসার। ‘নিভৃত যতনে মনের মন্দিরে’ প্রিয়জনকে আরাধনার একটি দিন। সম্পর্কের বন্ধনকে জোরালো করার এক অনন্য ক্ষণ। জোড়ায় জোড়ায় প্রেমিকযুগল অনাবিল আনন্দে ঘুরে বেড়িয়েছে রাজধানীর নানা আঙিনায়। যানজটের শহরেও ক্রিংক্রিং শব্দ তোলা তিন চাকার রিক্সায় চেপে কেউ বা কাটিয়েছে মধুর সময়। নির্ঝঞ্জাট রেস্তোরাঁয় বসে আনন্দময় আহারের সঙ্গে চলেছে ভাব বিনিময়। রাজধানীর বিভিন্ন কফি হাউস থেকে শুরু করে রাস্তার ধারের চায়ের দোকানে বসেও হয়েছে প্রেম বিনিময়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অঞ্চলসহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা রমনা পার্কের সবুজ-শ্যামলিমায় সম্পৃক্ত হয়ে আবেগের উচ্ছলতায় কেটেছে আনন্দময় মুহূর্ত। ভাললাগার মানুষের প্রতি মুগ্ধ হয়ে হয়তো বলা হয়েছে ‘আমার পরাণ যাহা চায়, তুমি তাই তুমি তাই গো’। পরস্পরের মুখোমুখি হয়ে রেস্তোরাঁয় বসে মজা করে খাওয়া, মনটাকে প্রসারিত করে উদ্যানে ঘুরে বেড়ানো, শাহবাগ থেকে প্রিয়জনের হাতে ফুল কিংবা একুশে গ্রন্থমেলার বই তুলে দেয়া, মনজুড়ানো প্রেমের বাণীযুক্ত কার্ড উপহার দেয়া, সিনেমা দেখে লম্বা সময় কাটিয়ে দেয়াÑএমন নানা অনুষঙ্গের ভেতর দিয়ে পরিলক্ষিত হয়েছে ভালবাসা দিবসে প্রেমের উত্তাপ। ভালবাসার কাছে যেন হারিয়ে যায় দূরত্ব। দীর্ঘ পথের ব্যবধানটাও যেন হৃদয়ে প্রবাহিত উত্তাপে হয়ে যায় খুব কাছের। এই দূরত্বকে হারিয়ে দেয়া এক প্রেমিকযুগলের দেখা মিলল ভালবাসা দিবসে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাহুল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী প্রীতির ভালবাসার প্রকাশ ঘুচিয়ে দিয়েছে দূরত্বকে। খুব সকালে প্রীতির সঙ্গে দেখা করতে সাভার থেকে বাসে চেপে রাহুল এসে পৌঁছেন ঢাকায়। দুপুরে রমনা পার্কের সামনে কথা হয় এই জুটির সঙ্গে। রাহুল বলেন, এমনিতে তো সব সময় ভালবাসা থাকে। তবে এ জন্য বিশেষ দিবস থাকলে সেটার তাৎপর্যটা হয় ভিন্নরকম। তাই ভালবাসা দিবস উপলক্ষে ভালবাসার মানুষের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য সাভার থেকে ছুটে এসেছি শাহবাগ প্রান্তে। দু’জন মিলে হাত ধরে হাঁটি রমনার সবুজ উদ্যানে। দুপুরের পর গ্রন্থমেলা ঘুরে ওর হাতে তুলে দিয়েছি পছন্দের কিছু বই। সারাদিন খাওয়া-দাওয়া, একান্ত আলাপচারিতা ও ঘোরাঘুরি শেষে সন্ধ্যায় একজন আরেকজনের কাছ থেকে বিদায় নেব। চারুকলা সংলগ্ন ছবির হাটের সামনে কথা হয় প্রেমিকযুগল তমাল ও অর্পিতার সঙ্গে। কেমন করে কাটল ভালবাসার দিন জানতে চাইলে অর্পিতা বললেন, সকাল বেলায়ই আমার হাতে এক গুচ্ছ গোলাপ তুলে দিয়েছে তমাল। ওর ফুলেল ভালবাসায় সিক্ত হয়েছে মনটা। এরপর দু’জন নানা জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি আর মজা করে খাওয়া-দাওয়া করেছি। একটু পরেই তো নামবে বিকেল। অন্য সময় হলে বাসায় ফিরে যেতাম। তবে আজ আমরা বিচ্ছিন্ন হব সন্ধ্যার পর। অনেকেই আবার ভালবাসা দিবসের বিকেলে ছুটে গেছেন একুশের বইমেলায়। সকালে প্রিয়জনকে ফুল দিয়েছেন আর বিকেলে দিয়েছেন বই। এমনই এক জুটি শামীম শাহাদাত ও তাহমিনা হায়দার। শামীম বললেন, বইয়ের চেয়ে ভাল উপহার তো আর কিছু নেই। তাই ভালবাসা দিবসে প্রিয়তমাকে বই দিয়ে নিজের ভাললাগার প্রকাশ করলাম। আর এতে ওর আনন্দ দেখে নিজের মনটাও হয়ে উঠল প্রফুল্ল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বর থেকে বাংলা একাডেমির বইমেলা পর্যন্ত প্রেমিক যুগলের হাতে হাতে দেখা গেছে লাল গোলাপ। ভালবাসা দিবসকে ঘিরে বিকেলে বাড়তি জনসমাগম ঘটে ক্যাম্পাস এলাকায়। ক্যাম্পাসের আশপাশের রেস্তোরাঁয়-ক্যাফেতে দিনভর ছিল প্রেমিক-প্রেমিকার আনাগোনা। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, চারুকলা অনুষদই নয়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ধানম-ি লেক, চন্দ্রিমা উদ্যান, রমনা বটমূলসহ নানা স্থানে যুগল তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। লাল গোলাপসহ সুগন্ধিময় নানান বর্ণ ও আকৃতির ফুল দিয়ে প্রিয়জনকে বলা হয়েছে হƒদয়ে চাপা থাকা অব্যক্ত কথাটি। এছাড়া ভালবাসা দিবসে কেবলই ফুল নয়, শুভেচ্ছা কার্ড, ক্ষুদে বার্তা, ফেসবুক কিংবা টুইটারের মাধ্যমেও ভালবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন অনেকে। সাগরের সীমাহীনতার মতো আমার উদারতা/ গভীর আমার প্রেম/যতই তোমাকে দেই ততই পেয়ে যাই আমি/দু’টোই অসীমÑউইলিয়াম শেক্সপিয়ারের অমর সৃষ্টি রোমিও জুলিয়েটের এই বাণীটি প্রেমপিপাসুদের ধ্বনি-প্রতিধ্বনির মধ্য দিয়ে ভালবাসা দিবসের শেষ হলেও, ভালবাসা থাকবে অমলিন ও অমরÑরয়ে গেল সেই প্রত্যাশা। সেই সঙ্গে শুধু প্রেমিকযুগলের বাইরেও স্নেহ-মমতা ও বন্ধনে গড়া ভালবাসা ছড়িয়ে পড়ুক প্রতিটি মানুষের মাঝে, প্রতিটি সম্পর্কের ভেতরে। সব শেষে বলা যায়, ভালবেসে সুখী হোক সকলে।
×