ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিরীয় যুদ্ধ বন্ধে ॥ পাড়ি দিতে হবে দীর্ঘ পথ

প্রকাশিত: ০৭:১৯, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সিরীয় যুদ্ধ বন্ধে ॥ পাড়ি দিতে হবে দীর্ঘ পথ

সিরিয়ার চার বছরের গৃহযুদ্ধ বন্ধ করতে জার্মানির মিউনিখ শহরে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে চুক্তি হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাস্তব অবস্থা ও চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দেশটিতে বিমান থেকে বোমাবর্ষণ বন্ধ হতে এক সপ্তাহ বাকি আছে এবং রাশিয়া এর কাছে সন্ত্রাসী বলে মনে হয় এমন দলগুলোর ওপর হামলা চালানোর অধিকার নিজের কাছে রেখেছে। তুর্কি সিরীয় সীমান্তে আটকেপড়া হাজার হাজার সিরীয় বেসামরিক শরণার্থী রেহাই পাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে সন্দিহান। শুক্রবার পর্যন্ত চলতে থাকা বোমাবর্ষণ থেকে বাঁচতে তারা সেখানে আশ্রয় নিতে গিয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। ওয়াশিংটনের কোন কোন গবেষণা সংস্থা ওই চুক্তিকে রাশিয়ার জন্য বিজয় বলে বর্ণনা করেছে। কারণ এর ফলে রুশরা তাদের বোমাবর্ষণ অভিযান সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের জন্য উদ্ধার করে এনেছে এমন সব ভূখ-ে অবস্থান সুসংহত করার সুযোগ পেয়েছে। আসাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা অপেক্ষা করে দেখবে বলে জানান। তারা সিরিয়ার অবরুদ্ধ এলাকাগুলোতে ত্রাণ সরবরাহ শুরু না হওয়া পর্যন্ত আলোচনায় বসতে গত সপ্তাহে অস্বীকার করেন। ত্রাণ তৎপরতার ব্যবস্থা করতে এক আন্তর্জাতিক টাস্কফোর্সের জেনেভায় আয়োজিত বৈঠক কোন কিছু ঘোষণা না করেই মুলতবি রাখা হয়েছে। এ বিলম্বের ঘটনায় আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো হতাশা ব্যক্ত করেছে। মিউনিখে ওবামা প্রশাসনের এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, এ কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, অনেক সংঘাতের ক্ষেত্রেই কোন অস্ত্র বিরতিকে সফল রূপ দিতে গিয়ে বহুবার চেষ্টা চালাতে হয়েছিল। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে, ১৯৯০-এর দশকের বলকান সংঘর্ষের সময় কোন চুক্তি পালন করাতে গিয়ে ৮-১০ বার চেষ্টা করতে হয়েছিল। ওই কর্মকর্তা বলেন, এটি যে সহজ হবে না, সুগম হবে না বলে আমরা প্রায় নিশ্চিতভাবেই মনে করি। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা আমরা সহিংসতার অবসান ঘটানোর ওপর জোর দিচ্ছি এবং এ প্রথমবারের মতো আমরা বাস্তবে একটি তারিখ এক সপ্তাহ সময় নির্ধারণ করে দিয়েছি। ওই সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন এক টাস্কফোর্সকে তখনও ইসলামিক স্টেট ও আল কায়েদার সিরিয়া শাখা জাবহাত আল-নুসরার ওপর রাশিয়াকে যে সব বিমান হামলা চালাতে দেয়া হবে, সেসব হামলার ভৌগোলিক ও অন্যান্য সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। এসব বাহিনী যুক্তরাষ্ট্র ও এর অংশীদারদের সমর্থনপুষ্ট বিরোধী গ্রুপগুলোর সান্নিধ্যে বা পাশে থেকে তৎপরতা চালাচ্ছে। এক বিরোধী গ্রুপপন্থী দুবাইভিত্তিক সিরীয় স্যাটেলাইট স্টেশন ওরিয়েন্ট টিভির সঙ্গে শুক্রবার রাতে এক সাক্ষাতকার দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন এফ কেরি। এতে রাশিয়া যখন সব মধ্যপন্থী বিরোধী পক্ষকে বা আসাদ শাসকগোষ্ঠীর বিরোধী এমন যে কোন পক্ষকে সন্ত্রাসী বলে চলেছে, তখন এর অর্থ কি কেরিকে এ প্রশ্ন করা হয়। কেরি জবাবে বলেন এটি গ্রহণযোগ্য নয়। কোথায় বৈধ বিরোধী পক্ষ এবং কোথায় সন্ত্রাসী রয়েছে, তা খুবই স্পষ্ট করে দিতে আমরা রুশদের সঙ্গে কাজ করব। আর রুশরা কোথায় বোমাবর্ষণ করছে এবং কোথায় তারা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে, সেই সম্পর্কে তাদের আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। তারা এ নিয়ে সতর্ক হবে বলে আমরা আশা করছি। মার্কিন প্রশাসনের ওই উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, ঠিক কোনটি অনুমোদিত এবং কোনটি নয়, কিভাবে পর্যবেক্ষণ চালানো হবে, সে ক্ষেত্রে চুক্তি লঙ্ঘিত হয়েছে বলে মনে হবে সে ক্ষেত্রে কি প্রতিকার নির্দেশ করা হবে এবং চুক্তির ভাষায় লড়াই বন্ধ তদারক করতে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে, তা টাস্কফোর্সই নিধারণ করবে। যখন চুক্তির বিস্তারিত দিক নির্ধারণ করা হচ্ছে, তখন কেরির সঙ্গে মিউনিখ গিয়েছিলেন এমন প্রশাসন কর্মকর্তারা লড়াই বন্ধ এবং অস্ত্রবিরতির মধ্যে পার্থক্য কি তা ব্যাখ্যা করতে সমস্যায় পড়েন। এসব ধারণা কার্যত একই বলে ওই উর্ধতন কর্মকর্তা মন্তব্য করেন। কিন্তু মার্কিন সমর্থিত সিরীয় বিরোধী পক্ষ কিছুই ভিন্ন ধারণাই করে। তিনি বলেন, তাদের মতে অস্ত্রবিরতি বলতে সংঘর্ষের আনুষ্ঠানিক অবসানই বোঝায়। আমরা স্পস্টতই এখনও সেই পর্যায়ে পৌঁছাইনি। -ওয়াশিংটন পোস্ট
×