ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এসএ গেমস মহিলা ফুটবল

ভারতের কাছে হেরে বাংলাদেশের ব্রোঞ্জ

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ভারতের কাছে হেরে বাংলাদেশের ব্রোঞ্জ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ হায়, ফাগুন-পবনে খড়কুটোর মতো উড়ে গেল গঞ্জালো-ছোটনের শিষ্যরা। ফেসুবকে বাংলাদেশী ফুটলপ্রেমীর আক্ষেপ মাখা স্ট্যাটস এটি। ব্যাপারটা কাকতালীয়ই বটে। এসএ গেমসে শনিবার ফুটবল ইভেন্টে বাংলাদেশ পুরুষ ও মহিলা ফুটবল দল খেলতে নামে। উভয় দলেরই সামনে হাতছানি দিচ্ছিল ফাইনাল খেলার সুযোগ। উভয় দলই সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। উভয় দলেরই স্বপ্ন ভেঙ্গে খান খান করে দেয় স্বাগতিক ভারত! বাংলাদেশের পুরুষ দলের হারের কিছুক্ষণ পরেই খেলতে নামে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দল। আশা ছিল, তারা ফাইনালে উঠে ভুলিয়ে দেবে পুরুষ দলের ব্যর্থতা। প্রথমবারের মতো জয় কুড়িয়ে নেবে ভারতের বিরুদ্ধে। কিন্তু তা আর হলো না। সাবিনা-মারজিয়া-সানজিদারাও হারলো বেশ বড় ব্যবধানে ৫-১ গোলে। অথচ এই ম্যাচে কমপক্ষে ড্র করলেই ফাইনালে যেতে পারতো বাংলাদেশ! ৪ খেলায় বাংলাদেশের পয়েন্ট ৬। সমান খেলায় ভারতের পয়েন্ট ৮। তাদের অবস্থান দ্বিতীয়। বাংলাদেশের তৃতীয়। ফলে বাংলাদেশকে টপকে ভারত পৌঁছে গেল ফাইনালে। সেখানে তারা মুখোমুখি হবে ৪ খেলায় ১০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকা নেপালের। গত ২০১০ আসলেও এই দুই দলই ফাইনালে খেলেছিল। সেবার শিরোপা জিতেছিল ভারত। এ হারে তাম্রপদক অর্জন করেই দেশে ফিরতে হবে গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যাদের। এসএ গেমস মহিলা ফুটবলে এবারের আসরে প্রথম ম্যাচে নেপালের কাছে অপ্রত্যাশিত হারে (০-৩) বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে (২-১) ঘুরে দাঁড়ায় তারা। তৃতীয় ম্যাচে মালদ্বীপকে হারিয়ে (২-০) তাম্রপদক জেতা নিশ্চিত করে। আফগানিস্তান না থাকাতে এবারের টুর্নামেন্টের ফরমেটেও এসেছে পরিবর্তন। এবার খেলা হয় লীগ পদ্ধতিতে (মোট দল ৫টি)। সিঙ্গেল লীগ হওয়ার পর পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দুই দল খেলবে ফাইনালে। ফলে সেমিফাইনাল বলে কিছু থাকছে না। ফাইনালে যেতে পারলে কমপক্ষে রৌপ্যপদক পাওয়া নিশ্চিত হতো বাংলাদেশের। ফলে টপকে যেতে পারতো ২০১০ সালে নিজেদের মাটিতে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ এসএ গেমসে তাম্রপদক জেতার কীর্তিকে। তারিখ হিসেবে দিনটা ছিল শুভ। পহেলা ফাল্গুন। তবে বার হিসেবে দিনটা ছিল অশুভ। শনিবার। সেই শনিবারেই যেন ‘শনির দশা’ ভর করলো সাবিনাদের ওপর। নিয়মিত গোলরক্ষক সাবিনা মেরুদ-ের চোটের কারণে মাঠে নামতে পারলেন না। তার স্থলে খেলেন দ্বিতীয় গোলরক্ষক রওশন আরা। সাবিনার মতো আস্থা নিয়ে খেলতে পারেননি তিনি। এর খেসারত দলকে দিতে হয়েছে পাঁচ গোল হজম করে! ভারত বরাবরই বাংলাদেশের জন্য কঠিন প্রতিপক্ষ। আজ পর্যন্ত তাদের হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। গত এসএ গেমসে তাদের কাছে ০-৭ গোলে রীতিমতো বিধ্বস্ত হয়েছিল বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত মুখোমুখি ৫ ম্যাচের প্রতিটিতেই জিতেছে ভারত। গোল করেছে ২৬টি। বাংলাদেশ করেছে মাত্র ২ গোল! খেলা শুরুর ৬ মিনিটেই এগিয়ে যায় ভারত। গোল করেন তাদের ফরোয়ার্ড বালা দেবী (১-০)। গোল খেয়েই কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যায় বাংলাদেশের খেলা। এর ফায়দা লোটে ভারত। একের পর এক আক্রমণ শাণায় তারা। ১৩ মিনিটে সফলকামও হয়। গোলদাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন আবারও বালা দেবী, ব্যবধান দ্বিগুণ করেন তিনি (২-০)। এই গোল খেয়ে বাংলাদেশ দল তাদের খেলার ধরনে কিছুটা পরিবর্তন আনে। রক্ষণে মনোযোগী হয়। ফলে ৩৬ মিনিট পর্যন্ত আর কোন গোল করতে পারেনি ভারত। তবে ৩৭ মিনিটে আবারও প্রতিরোধ ভেঙ্গে পড়ে বাংলাদেশের। এবার ভারতের হয়ে গোল করেন আরেক দেবী, তিনি কমলা দেবী (৩-০)! প্রথমার্ধে এই স্কোর নিয়েই বিরতিতে যায় দুই দল। দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা আক্রমণ করে খেলে বাংলাদেশ। ৬৫ মিনিটে এক গোল শোধ করে কিছুটা আশার আলো জ্বালায় তারা। গোল করেন অধিনায়ক ফরোয়ার্ড সাবিনা খাতুন (১-৩)। এই গোল করে কোথায় আরও উজ্জীবিত হয়ে খেলবে বাংলাদেশ, তা না ... বরং ভারতের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে তারা। হজম করে আরও দুই গোল! ৭৫ মিনিটে বালা দেবী গোল করে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করেন (৪-১)। এর ৪ মিনিট পরেই আরেকটি গোল করে নিজের গোলকে ‘এক হালি’তে পরিণত করেন বালা (৫-১)। বাকি সময়টায় আর কোন গোল না হওয়াতে খেলা শেষে ভগ্ন মনোরথে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশের মেয়েরা।
×