ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খ্রীস্টানদের নির্যাতন থেকে বাঁচানোর আহ্বান ভ্যাটিকান ও রুশ চার্চ প্রধানের

পোপ ও প্যাট্রিয়ার্কের ঐতিহাসিক বৈঠকে ঐক্যের ডাক

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

পোপ ও প্যাট্রিয়ার্কের ঐতিহাসিক বৈঠকে ঐক্যের ডাক

পোপ ফ্রান্সিস ও রুশ অর্থোডক্স চার্চের প্রধান প্যাট্রিয়ার্ক কিরিলের মধ্যে কিউবায় শুক্রবার এক ঐতিহাসিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে তারা দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে পূর্বেকার খ্রীস্টান ঐক্য প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন। খবর বিবিসি অনলাইনের। খ্রীস্টান ধর্ম একাদশ শতকে পশ্চিমাঞ্চলীয় ও পূর্বাঞ্চলীয় শাখায় বিভক্ত হওয়ার পর ভ্যাটিকান-পোপ ও রুশ চার্চপ্রধানের মধ্যে এটাই প্রথম বৈঠক। তাদের মধ্যে দু’ঘণ্টার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় হাভানা বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনে পোপের মেক্সিকো যাওয়ার যাত্রা বিরতিতে এবং প্যাট্রিয়ার্ক কিরিলের কিউবা, ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে সফরকালে। তারা এক যৌথ ঘোষণায় মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় নির্যাতন থেকে খ্রীস্টানদের রক্ষার জন্য বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানান। দুই নেতা বৈঠক শুরু হওয়ার আগে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরেন এবং চুম্বন করেন। রুশ চার্চপ্রধান বলেছেন, প্রিয় ভ্রাতা, আপনাকে সম্ভাষণ জানাতে পেরে আমি সুখ অনুভব করছি। রোমের প্রধান যাজক বলেছেন, শেষ পর্যন্ত তাই হোক। বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে কিরিল বলেন, খোলামেলা ও ভ্রাতৃসুলভ আলোচনা হয়েছে আমাদের মধ্যে। ফ্রান্সিস বৈঠককে অত্যন্ত আন্তরিক বলে অভিহিত করেছেন। তাদের যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, আমাদের প্রত্যাশা, ঈশ্বরের ইচ্ছায় এ ঐক্য পুনর্প্রতিষ্ঠায় আমাদের এ বৈঠক অবদান রাখবে। যৌথ ঘোষণায় তারা বলেন, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার অনেক দেশেই আমাদের খ্রীস্টান ভাই-বোনদের পুরো পরিবার, গ্রাম ও শহর ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। তাদের গির্জাগুলো বর্বর হামলায় ধ্বংস ও লুট করা হচ্ছে তাদের ধর্মীয় বস্তুগুলো পবিত্রতা বিনষ্ট হচ্ছে এবং তাদের স্মৃতিসৌধগুলো ধ্বংস করা হচ্ছে। সিরিয়া ও ইরাক থেকে পালিয়ে যাওয়া শরণার্থীদের জন্য বড় ধরনের মানবিক সহায়তার প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তারা। দুটি দেশে ব্যাপক হারে খ্রীস্টানদের দেশান্তরী হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলেও মন্তব্য করেন তারা। ধর্মীয় এ দুই নেতার বৈঠক চলাকালে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল ক্যাস্ট্রো। ভ্যাটিকানের কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা রক্ষীসহ হাভানা বিমানবন্দরের টার্মিনালে এসে পৌঁছান শ্বেতবস্ত্র পরিহিত পোপ ফ্রান্সিস। দীর্ঘদিনের ধর্মীয় বিরোধ নিরসনে তার দায়িত্ব পালনই এ সফরের লক্ষ্য। রুশ প্যাট্রিয়ার্ক কিরিল টার্মিনালে এসে পৌঁছান ফ্রান্সিসের কিছু সময় আগে। তাদের এ বৈঠকের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল সমঝোতার ভিত্তিতে। কালো গাউন পরিহিত প্যাট্রিয়ার্ককে দেশে ফিরে গিয়ে রক্ষণশীলদের ক্ষোভ কাটিয়ে উঠতে হবে। সত্যিকার খ্রীস্টান ধর্ম থেকে ক্যাথলিকবাদ বিচ্যুত হয়েছে বলে রক্ষণশীলরা মনে করে। রোমান ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের সদস্য সংখ্যা ১শ’ কোটিরও বেশি এবং রুশ অর্থোডক্স সম্প্রদায়ের সদস্য সংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি ৫০ লাখ। এএফপি জানায়, কিউবায় প্যাট্রিয়ার্ক কিরিলের সঙ্গে ঐতিহাসিক বৈঠকের পর পোপ ফ্রান্সিস শুক্রবার মেক্সিকো গিয়ে পৌঁছান। তাকে বিমানবন্দরে স্থাগত জানান বিশ্বের দ্বিতীয় ক্যাথলিক সংখ্যার অধ্যুষিত দেশ মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট এনরিক পেনা নিতো। এ সময় বাজতে থাকে দেশটির ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত। জনতা পোপের উদ্দেশে স্লোগান দেয় ফ্রান্সিস, আপনি মেক্সিকান জনগণের ভ্রাতা।
×