ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মূল : লিন্ডসে গ্যালওয়ে;###;অনুবাদ : ইব্রাহিম নোমান

দেশ হতে দেশান্তরে অভিন্ন সুরের মূর্ছনা

প্রকাশিত: ০৫:১১, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

দেশ হতে দেশান্তরে অভিন্ন সুরের মূর্ছনা

রবীন্দ্রনাথের লেখা- চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির। স্বাধীনতা কি তাই? স্বাধীনতা শব্দটি আসলে কার কাছে কী অর্থে ধরা দেয়? দেশ থেকে দেশান্তরে ‘স্বাধীনতা’ কি আলাদা কোন তাৎপর্য বহন করে? বার্সিলোনা, এডিনবার্গ, মনট্রিল নুক এবং তাইপের জনগণ স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামরত বহু আগে থেকেই। এ ক্ষেত্রে মূলত বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সংস্কৃতি, ভাষা এবং রাজনৈতিক বৈপরীত্য। আর এ কারণেই মিলতে পারছে না একই বিন্দুতে। অতিসম্প্রতি কাতালানে স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়েছে। কাতালানের নেতারা চাইছে স্পেন থেকে বের হয়ে আলাদা রাষ্ট্র গঠন করতে। গত বছর স্কটল্যান্ডে মূলত শুরু হয় তাদের স্বাধীনতা আন্দোলন। শেষ পর্যন্ত আলাদা রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে-বিপক্ষে গণভোট হয়। তবে রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনই যেমন মূল লক্ষ্য নয়, তেমনি সব আন্দোলন যে ফলপ্রসূ হবে তাও কিন্তু নয়। তাহলে কেন হচ্ছে এমন আন্দোলন? কাতালান, স্পেন : ইউরোপের ফুটবল অঙ্গনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় লড়াই- স্পেনের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সিলোনার দ্বৈরথ, বিশ্ব ফুটবলে যা পরিচিত ‘এল ক্লাসিকো’ নামে। ইউরোপের সবচেয়ে সফল দুটি ক্লাবও রিয়াল-বার্সা। ফলে ফুটবলের কারণে বছরজুড়েই বিশ্বের অনেক মানুষের নজর থাকে স্পেনের দিকে। এবার অবশ্য বিশ্বের দৃষ্টি স্পেনের দিকে পড়তে পারে রাজনৈতিক কারণেও। এখানেও একে অপরের প্রবল প্রতিপক্ষ মাদ্রিদ (স্পেন) ও বার্সিলোনা (কাতালোনিয়া)। দীর্ঘদিন ধরে জারি থাকা স্বাধীনতার দাবিতে আবারও মুখরিত হয়েছে কাতালোনিয়ার রাজপথ। কাতালোনিয়া স্বাধীন হয়ে গেলে খুবই ঝুঁকির মুখে পড়ে যাবে আগে থেকেই টালমাটাল অবস্থার মধ্যে থাকা স্প্যানিশ অর্থনীতি। সতর্কবার্তা হয়ে ঝুলে আছে গ্রীস ট্র্যাজেডি। গ্রীসের মতো ঋণগ্রস্ত স্পেনও আছে দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কায়। স্পেনের পাশাপাশি ইউরোপের মোড়লরাও হয়ত চাইবেন না কাতালোনিয়ার আলাদা হয়ে যাওয়া। কারণ তাহলে নতুন করে আরেকটি বড় সঙ্কটের মধ্যে পড়তে হবে ইউরোপের নীতিনির্ধারকদের। ১১৬৪ সাল পর্যন্ত খুবই শক্তিশালী একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল কাতালোনিয়া। তারপর এটি যুক্ত হয় এ্যারাগনের সঙ্গে। উল্লেখ্য, ১৪৬৯ সালে এ্যারাগনের রাজা ফার্দিনান্দ ও স্পেনের রানী ইসাবেলার বিবাহবন্ধনের মধ্য দিয়ে স্পেনের সঙ্গে মিলন ঘটে এ্যারাগন ও কাতালোনিয়ার। তখন থেকেই ধীরে ধীরে স্পেনের কেন্দ্রীয় শাসনের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে থাকে কাতালানরা। ১৭১৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত করে দেয়া হয় কাতালান রাষ্ট্র। তারপর থেকেই নিজেদের সংস্কৃতি-ঐতিহ্য-ভাষা চর্চার স্বাধীনতা হারাতে হয়েছে বলে অভিযোগ কাতালোনিয়ার মানুষদের। যে নিপীড়নের চরম রূপ দেখা গেছে জেনারেল ফ্রাঙ্কোর সামরিক শাসনের (১৯৩৯-১৯৭৫) সময়। ১৯৭০-এর দশকের শেষে স্পেনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর কাতালোনিয়াকে দেয়া হয় স্পেনের ১৭টি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা। তবে ভেতরে ভেতরে স্বাধীনতার সুপ্ত বাসনাটাও সব সময় লালন করে গেছে কাতালানরা। সেই দাবি আরও জোরালো হয়েছে ২০০৭-০৮ সালের অর্থনৈতিক ধসের পর। নানাবিধ কৃচ্ছ্রতানীতি যারপরনাই অসন্তোষ তৈরি করেছে কাতালোনিয়ায়। ২০১০ সালে কাতালানরা স্প্যানিশ সরকারকে কর দিয়েছে ৬১.৮৭ বিলিয়ন ইউরো আর তাদের কাছে এসেছে ৪৫.৩৩ বিলিয়ন। কেন্দ্রীয় স্প্যানিশ সরকারের হাতে বিপুল পরিমাণ টাকা চলে না গেলে আরও উন্নয়ন করা যেত বলে কড়া মন্তব্য করেছিল কাতালোনিয়া সরকার। কাতালান স্পেনের উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত। রাজধানী বার্সিলোনা। স্পেনের প্রশাসনিক ও সাংবিধানিক কাঠামো দ্বারা পরিচালিত একটি স্বায়ত্তশাসিত অংশ। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নির্বাচনে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নির্বাচিত হন কাতালানে। ক্ষমতায় আসার ১৮ মাসের মধ্যে কাতালানকে স্বাধীন করার প্রতিজ্ঞা করেন তারা। বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা কাতালানের স্বাধীনতার কথা বললেও আসলে কী চাচ্ছে কাতালানবাসী? অনেকে বলছে স্বাধীনতাই বড় কথা নয়। কথা উঠে এসেছে স্বাধীন হয়ে কাতালান ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে তো! স্বাধীন হলেও কাজের ক্ষেত্রে কতটা প্রভাব পড়বে? স্বাধীনতা আন্দোলনের সম্ভাব্য পূর্বাভাস চিন্তা করে কাতালানে ইতোমধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাবস্থা চলছে। এতসব অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও কাতালানের রাজধানী বার্সিলোনা প্রথম সারির বসবাস উপযোগী শহর। এ শহরে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য করছে, সম্পদ গড়ছে। এসব ব্যবস্যায়ী কখনও অস্থিতিশীলতা চাইবে না। এডিনবার্গ, স্কটল্যান্ড : ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস। যুক্তরাজ্যের অন্যতম প্রধান অঙ্গরাজ্য স্কটল্যান্ড তাদের নাগরিকদের জন্য এক গণভোটের ডাক দেয়। এ ভোট ছিল স্বাধীনতার পক্ষে-বিপক্ষে ভোট। ৫৫% ভোট স্বাধীনতার বিপক্ষে পড়ে। তবে কেন ৫৫ শতাংশ ভোট স্বাধীনতার বিপক্ষে পড়েছিল তার জন্য যেতে হবে একটু পেছনে। স্বাধীন স্কটল্যান্ড তাদের সংসদ ভেঙ্গে ব্রিটেনের অংশ হয়েছিল ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে। স্কটিশ সংসদ নিজ থেকেই সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, কিন্তু বিতর্ক আছে, ইংরেজরা ভয় দেখিয়ে উৎকোচের লোভ দিয়ে সেই ট্রিটি অব ইউনিয়ন অর্থাৎ ভূ-রাজনৈতিক ঐক্যের চুক্তি পাস করিয়ে নিয়েছিল। স্কটিশদের বিশাল একটি অংশ সব সময়ই ওই ঐক্যকে দেখেছে ইংরেজদের হাতে পরাধীনতা হিসেবে এবং এই দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্নভাবে তিন শ’ বছরের ইতিহাস বদলাতে চেয়েছে তারা। সেই দাবির ধারাবাহিকতায় ১৯৯৮ সালে স্বায়ত্তশাসন পায় স্কটল্যান্ড আর তার ১৬ বছর পর ১৮ সেপ্টেম্বর স্বাধীনতার প্রশ্নে হয়েছে গণভোট। স্কটল্যান্ডের যে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তার বিকাশে স্বাধীনতা প্রয়োজন। তারা বলছেন, সাগরে ২৪০০ কোটি ব্যারেল তেল মজুদ রয়েছে। রফতানি আয় ২৫০০ কোটি পাউন্ড। স্কটল্যান্ড স্বাধীন দেশ হলে এসব আয় নিয়ে মাত্র ৫০ লাখ জনসংখ্যার এই দেশ বিশ্বের চতুর্দশ ধনী দেশ হবে। স্বাধীনতাকামী মানুষের দাবির পেছনে ছিল খুব সহজ যুক্তি। তাদের যুক্তি ছিল এ রকম- ‘স্কটল্যান্ডের ভালমন্দের সিদ্ধান্ত স্কটল্যান্ডের মানুষের হাতে থাকতে হবে। স্কটিশদের জন্য সমৃদ্ধি, সম্মান এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ নিশ্চিত করতে হবে।’ অন্যপক্ষ বলছে, ব্রিটেনের সঙ্গে থাকাই নিরাপদ। এ অংশে বসবাসরত মানুষ রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার চেয়ে অর্থনৈতিক স্বাধীনতাকে বড় করে দেখেছিল। কারণ স্বাধীনতার পর বেশ বড় ধরনের অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবেলা করার আশঙ্কা করেছিল বিশেষজ্ঞরা। গ্রীনল্যান্ড, ডেনমার্ক : গ্রীনল্যান্ড উত্তর আটলান্টিক ও আর্কটিক মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত একটি সুবৃহৎ দ্বীপ যা ডেনমার্কের একটি স্বনিয়ন্ত্রিত অংশ হিসেবে স্বীকৃত। দ্বীপটির অধিকাংশই আর্কটিক বৃত্তের উত্তর অংশে অবস্থিত। এটি পশ্চিম দিকে ডেভিস প্রণালী ও ব্যাফিন উপসাগর দ্বারা প্রাথমিকভাবে কানাডীয় আর্কটিক দ্বীপপুঞ্জ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং পূর্ব দিকে ডেনমার্ক প্রণালী দ্বারা আইসল্যান্ড থেকে পৃথক হয়েছে। গ্রীনল্যান্ড পৃথিবীর বৃহত্তম দ্বীপ। স্কটল্যান্ড যেমন যুক্তরাজ্যের স্বায়ত্তশাসিত অঙ্গরাজ্য তেমনি গ্রীনল্যান্ড ডেনমার্কের। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই গ্রীনল্যান্ড জনমানুষহীন ছিল। পরে কিছুটা বসতি হয়েছে। এ অংশটুকু নিয়ে নরওয়ে ও আইসল্যান্ডের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। ১৮১৪ সাল থেকে ডেনমার্কের কলোনি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে গ্রীনল্যান্ড। এভাবেই জনশূন্য গ্রীনল্যান্ডে ধীরে ধীরে বসতি গড়ে ওঠে। যদিও এখানে বসবাসরত মানুষের সংখ্যা খুব কম। গ্রীনল্যান্ড স্বায়ত্তশাসিত হলেও কেন্দ্রীয় সরকার স্থানীয় সরকারকে সকল ক্ষমতা দেয়নি। ২০০৮ সালে গ্রীনল্যান্ডবাসী পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে গণভোটের ডাক দেয়। বর্তমানে স্থানীয় শাসন ব্যবস্থা, খনিজসম্পদ, বিমান চালনা ও পুলিশ ব্যবস্থার পূর্ণ ক্ষমতা গ্রীনল্যান্ড স্থানীয় সরকারের হাতে থাকলেও বৈদেশিক নীতি ও প্রতিরক্ষা কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে। গ্রীনল্যান্ডে স্বাধীনতার দাবি এখনও চলমান। এই দুই অংশের মধ্যে ঘোরতর সাংস্কৃতিক পার্থক্য বিদ্যমান। গ্রীনল্যান্ডবাসী বলছে, তারা স্বাধীন হলেও ডেনমার্কের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আগের মতোই থাকবে। এ অংশের বেশিরভাগ মানুষ ডেনিশ ও ইংরেজী ভাষায় কথা বলে। ২০০৯ সালের শেষের দিকে স্থানীয় কালালাইসুতকে অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে ঘোষণা করে। কুইবেক, কানাডা : ১৯৯৫ সালে কয়েকটি ভোটের ব্যবধানে কুইবেকের পূর্ণ স্বাধীনতা হাতছাড়া হয়ে যায়। গণভোটে ৫০.৫৮% ভোট পড়ে স্বাধীনতার বিপক্ষে। কুইবেক এখন পর্যন্ত কানাডার অঙ্গরাজ্য হিসেবেই রয়েছে। কুইবেক অনেকদিন আগে থেকেই স্বাধীনতা দাবি করে আসছে। এ অঙ্গরাজ্যের মানুষের ভাষা, সংস্কৃতি কানাডার অন্যসব জায়গা থেকে আলাদা, এমনকি শিক্ষা ব্যবস্থাও। কুইবেকের মানুষ নিজেদের ফ্রেন্স ভাষা ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক বলে মনে করে। অধিবাসীরা মনে করে, কানাডার অন্যসব মানুষের থেকে কুইবেক হলো স্বতন্ত্র। তাই তাদের স্বাধীনতার দাবি যৌক্তিক। তাইওয়ান, চীন : আমরা অনেকেই এখনও জানি না তাইওয়ান চীনের অধীন না স্বতন্ত্র কোন রাষ্ট্র। কিন্তু কেন সঠিকভাবে জানি না, নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে। অনেকবার স্বাধীনতার আন্দোলন তীব্রতর হলেও শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতার স্বাদ পায়নি তাইওয়ানবাসী। প্রায় সব রকম সুযোগ-সুবিধা থাকলেও তাইওয়ানবাসী মনে করে, তারা চীন কলোনির অধীন। চীনের মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন তাইওয়ান মূলত দক্ষিণ চীন সাগরের একটি দ্বীপ। এক সময় ওলন্দাজ কলোনি ছিল। তবে ১৬৮৩ থেকে ১৮৯৫ সাল পর্যন্ত চীনের রাজারাই শাসন করেছে তাইওয়ান। এরপর জাপানীরা দখল করেছে এই দ্বীপ। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তাইওয়ানের নিয়ন্ত্রণ তুলে দেয়া হয় চিয়াং কাইশেকের নেতৃত্বাধীন চীনা সরকারের হাতে। কিন্তু চীনে মাও জেদংয়ের নেতৃত্বে কমিউনিস্ট বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে হারতে থাকে চিয়াং কাইশেকের সরকার। চীনের বেশিরভাগ অংশের নিয়ন্ত্রণ হারায় তারা। এরপর চিয়াং কাইশেক আর তার কুওমিনটাং সরকারের লোকজন তখন পালিয়ে যায় তাইওয়ানে। সেখানে তারা ‘রিপাবলিক অব চায়না’ নামে এক সরকার গঠন করে। নিজেদের সমগ্র চীনের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার বলেও দাবি করে তারা। কোন একদিন কমিউনিস্টদের কাছ থেকে আবার পুরো চীনের নিয়ন্ত্রণ তারা নেবে- এমনটাই ছিল তাদের পরিকল্পনা। বহুদিন পর্যন্ত জাতিসংঘ থেকে বিশ্বের অনেক দেশ চিয়াং কাইশেকের সরকারকেই চীনের সত্যিকারের সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আজ অনেকের কাছে শুনতে অবাক লাগতে পারে, ১৯৭১ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে কিন্তু তাইওয়ানের সরকারই চীনের প্রতিনিধিত্ব করেছে। কিন্তু ১৯৭১ সালে জাতিসংঘ বেজিংয়ের সরকারকেই চীনের আসল সরকার বলে স্বীকৃতি দিল। তারপর থেকে একে একে বিশ্বের প্রায় সব দেশই বেজিংয়ের পক্ষ নিল এবং তাইওয়ানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি কমতে থাকল। ১৯৮০-এর দশক পর্যন্ত চীন আর তাইওয়ানের মধ্যে চলেছে তীব্র বাগ্যুদ্ধ। কিন্তু এরপর সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে শুরু করে। ‘এক দেশ, দুই পদ্ধতি’ নামে চীন এক প্রস্তাব দেয় যেখানে তাইওয়ান মূল চীনে বিলুপ্ত হবে কিন্তু তাদের স্বায়ত্তশাসন দেয়া হবে। তবে তাইওয়ান সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। অবশ্য দুই পক্ষের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকেনি। ২০০০ সালে তাইওয়ানের নতুন প্রেসিডেন্ট হন চেন শুই বিয়ান। ২০০৪ সালে তিনি ঘোষণা দেন যে, তাইওয়ান চীন থেকে আলাদা হয়ে সম্পূর্ণ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চায়। তার এই অবস্থান চীনকে ভীষণ রুষ্ট করে। ২০০৫ সালে চীন তড়িঘড়ি করে এক আইন পাস করে, যাতে বলা হয়- তাইওয়ান যদি চীন থেকে আলাদা হওয়ার চেষ্টা করে, সেটা ঠেকাতে চীন প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করবে। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন তাইওয়ানের বেজিংবিরোধী ডেমোক্র্যাটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টির নারী নেত্রী সাই ইং-ওয়েন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি ক্ষমতাসীন চীনাপন্থী দল ন্যাশনাল পার্টির (কুমিংটাংয়ের-কেএমটি) চেয়ে ২০ ভাগ ভোট বেশি পেয়ে তাইওয়ানের প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। এ বছরের জানুয়ারি মাসে তাইওয়ানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ডেমোক্র্যাটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টি নির্বাচনে জয়লাভের পরই আবার স্বাধীনতা আন্দোলনের ডাক দেয়। নির্বাচন চলাকালেই তাইওয়ানের রাজধানী শহর তাইপের রাস্তাঘাটে ব্যানার, বিলবোর্ড আর র‌্যালি চলে। নির্বাচনী প্রচারণার পাশাপাশি চলে স্বাধীনতা আন্দোলন। তাইওয়ানের অর্থনীতি এখন চীনের ওপর এতটাই নির্ভরশীল যে, জনসংখ্যার একটা বড় অংশ এখন আর স্বাধীনতাকে কোন বাস্তবসম্মত বিকল্প বলে ভাবে না। তবে প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও দেশ থেকে দেশান্তরে ‘স্বাধীনতা’ আসলে অভিন্ন সুরের মূর্ছনা। সূত্র : বিবিসি [email protected]
×