ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার

মীর কাশেম আলীর আপীলের শুনানি কাল শুরু

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

মীর কাশেম আলীর আপীলের শুনানি কাল শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মৃত্যুদ-প্রাপ্ত বদরবাহিনীর তৃতীয় শীর্ষ নেতা তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রামের বাঙালী খান, জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাশেম আলীর রায়ের বিরুদ্ধে করা আপীলের তৃতীয় দিনের শুনানি সোমবার শুরু হচ্ছে। ১০ জানুয়ারি দ্বিতীয় দিনের শুনানি শেষে এ দিন নির্ধারণ করা হয়। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে ৫ সদস্যবিশিষ্ট বেঞ্চে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৪ সালের ২ নবেম্বর মীর কাসেম আলীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ-াদেশ প্রদান করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ৩০ নবেম্বর মীর কাশেম আলী আপীল করেন। মীর কাশেম তার দেড় শ’ পৃষ্ঠার মূল আপীলসহ ১ হাজার ৭৫০ পৃষ্ঠার আপীলে মোট ১৬৮টি কারণ দেখিয়ে ফাঁসির আদেশ বাতিল করে খালাস চেয়েছেন। ট্রাইব্যুনালে আটজনকে নির্যাতনের পর হত্যা ও মরদেহ গুম এবং ২৪ জনকে অপহরণের পর চট্টগ্রামের বিভিন্ন নির্যাতনকেন্দ্রে আটকে রেখে নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী ১৪টি অভিযোগে অভিযুক্ত হন মুক্তিযুদ্ধকালে জামায়াতের কিলিং স্কোয়াড আলবদর বাহিনীর তৃতীয় শীর্ষ নেতা ও ইসলামী ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক মীর কাশেম আলী। এ ১৪টি অভিযোগের মধ্যে ১০টি প্রমাণিত হয়। বাকি ৪টি অভিযোগ প্রসিকিউশন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পারেননি। প্রসিকিউশন আনীত ১৪টি অভিযোগের মধ্যে ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৪ নম্বর অভিযোগে মীর কাশেম আলী দোষী প্রমাণিত হন। তবে ১, ৫, ৮ ও ১৩ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে এসব অভিযোগ থেকে খালাস (অব্যাহতি) দেয়া হয়। মীর কাশেম আলীকে অভিযোগ ১১ ও ১২তে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- প্রদান করেছেন। চার্জ ১১ সর্ব সম্মতিতে এবং চার্জ ১২ বাইমেজরিটিতে মৃত্যুদ- প্রদান করেছেন। প্রমাণিত অভিযোগগুলোর মধ্যে ২ নম্বর অভিযোগে তাকে ২০ বছরের কারাদ- দেয়া হয়। ৩, ৪, ৬, ৭, ৯ ও ১০ নম্বর অভিযোগে তাকে ৭ বছর করে মোট ৪২ বছর কারাদ- দেয়া হয়েছে। এছাড়া ১৪ নম্বর অভিযোগ ১০ বছরের কারাদ- দেয়া হয়েছে। এই ৮টি অভিযোগে তাকে সর্বমোট ৭২ বছর কারাদ- দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ আসামি মীর কাশেম আলীকে অভিযোগ ১১ ও ১২ তে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- প্রদান করেন। চার্জ ১১ সর্বসম্মতিতে এবং চার্জ ১২ বাইমেজরিটিতে মৃত্যুদ- প্রদান করেন। চার্জ- ১১ : শহীদ জসিমসহ মোট ৬ জনকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও হত্যা করে লাশ গুম। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানী দখলদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আল বদর, আল শামস চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষকে ধরে নিয়ে বিভিন্ন নির্যাতন কেন্দ্রে আটক রেখে নির্যাতন ও অনেককে হত্যা করে। উক্ত ঘটনার ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের রমজানের ঈদের দিনের পর যে কোন সময় মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে চট্টগ্রাম শহরের অজ্ঞাত স্থান থেকে আটক ও অপহরণ করে পাকিস্তানী দখলদার সেনাবাহিনীর দোসর আল-বদর বাহিনীর সদস্যরা আসামি মীর কাশেম আলীর নির্দেশে ও ইঙ্গিতে তার নিয়ন্ত্রণাধীন চট্টগ্রাম মহানগরী এলাকার আন্দরকিল্লার ডালিম হোটেল নির্যাতন কেন্দে নিয়ে যায়। নির্যাতন কেন্দ্রে আটক রেখে তাকে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। ১৯৭১ সালের ২৮ নবেম্বর আসামি মীর কাশেম আলীর নেতৃত্বে ও নির্দেশে আল-বদর বাহিনীর সদস্যরা ডালিম হোটেলের ছাদে জসিমকে নির্যাতন করে হত্যা করে। তাদের নির্যাতনে নিহত অজ্ঞাতনামা আরও ৫ (পাঁচ) জনের লাশের সঙ্গে জসিমের লাশ ঐ দিন সন্ধ্যাবেলা আসামির নির্দেশে ও ইঙ্গিতে তার নেতৃত্বাধীন আল-বদর বাহিনীর সদস্যরা কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দিয়ে লাশ গুম করে। চার্জ-১২ : জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীসহ তিনজনকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন ও পরবর্তীতে রঞ্জিত দাস প্রকাশ লাতু ও টুন্টু সেন প্রকাশ রাজুকে হত্যার পর লাশ গুম করা হয়। ২০১৩ সালের ১৮ নবেম্বর মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের ওপেনিং স্টেটমেন্ট উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে বিচার কাজ শুরু হয়। এরপর ১১ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মীর কাশেম আলীকে ১৪টি ঘটনায় অভিযুক্ত করে অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল। একই বছরের ৬ মে মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে হত্যা, নারী নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৪টি অভিযোগে তদন্ত চূড়ান্ত করে তদন্ত সংস্থা প্রসিকিউশনে জমা দেয়। ২০১২ সালের ১৭ জুন মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে ওই দিন বিকেলে তাকে গ্রেফতার করে বিকেল সোয়া চারটার দিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
×