ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

মনিরউদ্দীন ইউসুফ প্রামাণ্যচিত্রের মহরত

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

মনিরউদ্দীন ইউসুফ প্রামাণ্যচিত্রের মহরত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশ্ববরেণ্য পারস্যের কবি ফেরদৌসীর অমর সৃষ্টি মহাকাব্য শাহনামা। এই শাহনামাকে বাংলাভাষী পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন কবি মনিরউদ্দীন ইউসুফ। তার ৯০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘শাহনামার আলোয় মনিরউদ্দীন ইউসুফ’ শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসডি বিপ্লবের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় নির্মিত হচ্ছে তথ্যচিত্রটি। শনিবার বিকেলে এই তথ্যচিত্রের মহরত ও মনিরউদ্দীন ইউসুফের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ইসফেন্দিয়ার জাহেদ হাসান মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চয়নিকা। আয়োজনে প্রয়াত কবি কাইসুল হক স্মরণে পালন করা হয় এক মিনিটের নীরবতা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ। কম্পট্রোলার ও অডিটর জেনারেল মাসুদ আহমেদের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন ঢাকার ইরানের রাষ্ট্রদূত ড. আব্বাস ভায়েজী দেহনাভী, জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আবদুস সবুর খান। পিতৃস্মৃতিচারণ করেন মনিরউদ্দীন ইউসুফের মেয়ে অধ্যাপক ফাতেমা জেবুন্নেসা। তথ্যচিত্রটি নিয়ে কথা বলেন এসডি বিপ্লব। তথ্যচিত্রটি প্রসঙ্গে এসডি বিপ্লব বলেন, আগামী এক বছরের মধ্যে প্রামাণ্যচিত্রটির কাজ শেষ হবে। তিনি ফেরদৌসীর স্মৃতিবিজড়িত ইরানের বিভিন্ন স্থান তথ্যচিত্রটিতে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে ইরানের রাষ্ট্রদূতের সাহায্য কামনা করেন। মাসুদ আহমেদ, ভিন্ন একটি ভাষাকে খুব ভালভাবে রপ্ত করেছিলেন মনিরউদ্দীন ইউসুফ। কারণ, শাহনামার অনুবাদ করাটা কোন সহজ কাজ ছিল না। এই কঠিন কাজটিই সুচারুভাবে সম্পন্ন করেছিলেন মনিরউদ্দীন ইউসুফ। মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, শাহনামা অনুবাদের সূত্র ধরেই মনিরউদ্দীন ইউসুফের সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটে। এই মহাকাব্য তিনি যখন অনুবাদের উদ্যোগ নেন তখন আমি বাংলা একাডেমির অনুবাদ বিভাগের উপ-পরিচালকের দায়িত্বে ছিলাম। ফার্সি শাহনামার কিছু পাতা হারিয়ে যাওয়ায় ইংরেজী থেকে আমি এর স্বল্প অংশ অনুবাদ করেছিলাম। সব মিলিয়ে বাংলা একাডেমি থেকে শাহনামার ছয়টি খ- প্রকাশিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বহু গুণে গুণান্বিত এক মানুষ ছিলেন মনিরউদ্দীন ইউসুফ। কবিতার পাশাপাশি গজলও লিখেছেন। বাংলা সংস্কৃতির বিবর্তনের সব ধারাকে গভীরকে অনুধাবন করেছিলেন এই গুণী মানুষটি। আজীবন সৃষ্টিশীলতা ও মানব ঐক্যে কাজ করেছেন। ড. আবদুস সবুর খান বলেন, দীর্ঘ ১৯ প্রচেষ্টায় মনিরউদ্দীন ইউসুফ শাহনামার অনুবাদ করেছেন। এ কারণে জীবদ্দশায় সব সংস্করণ দেখে যেতে পারেননি। তাঁর মৃত্যুর পর বাংলা একাডেমি থেকে সব সংস্করণ প্রকাশিত হয়। শাহনামায় যে ধ্রুপদী ভাষার প্রয়োগ রয়েছে মনিরউদ্দীন ইউসুফের অনুবাদেও সেটা অক্ষুণœ থেকেছে। চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ‘বাংলা আমার দেশ’ ॥ বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত রাশিয়ান দুই শিল্পী রুবিনা হোসেন ও সাবিনা হোসেনের যৌথ চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ‘বাংলা আমার দেশ’। শনিবার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার ছয় নম্বর গ্যালারিতে এই প্রদর্শনীর সূচনা হয়। চিত্রশালা মিলনায়তনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দার এ নিকোলাভ, খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী কালিদাস কর্মকার, সাবেক সংসদ সদস্য নাজমা আকতার। সভাপতিত্ব করেন শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি লিয়াকত আলী লাকী। শিল্পকলা একাডেমির পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত প্রদর্শনীটি সাজানো হয়েছে অর্ধশতাধিক চিত্রকর্ম দিয়ে। প্রদর্শনীর চিত্রকর্মগুলো বেশিরভাগই পেন্সিলে আঁকা। রয়েছে তেল, চারকোল, বলপয়েন্টে আঁকাও চিত্রকর্ম রয়েছে। বিষয়ভিক্তিকভাবে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনী। ‘ইতিহাস’ বিভাগে শিল্পীদ্বয় তুলে ধরেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। রবীন্দ্র-নজরুলের মুখোচ্ছবি আছে এই প্রদর্শনীতে। তাদের চিত্রকর্মে ফুটে উঠেছে সংগ্রামী মা, পরিশ্রমী কৃষক, স্কুল বালিকা, বিয়ের সাজে নববধূর মুখচ্ছবি। নজর কাড়ছে দেশের ঐতিহাসিক ভবনগুলো আলাদা আলাদা চিত্রকর্ম। রুবিনা এঁকেছেন আহছান মঞ্জিল, কার্জন হল, পুঠিয়া মন্দির কমপ্লেক্স, সুপ্রীমকোর্ট, সোনাগাঁও, তারা মসজিদ। সাবিনা এঁকেছেন জাতীয় সংসদ ভবন, তিন নেতার মাজার, লালবাগের কেল্লা, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, মানিকগঞ্জের শিবমন্দির। শিল্পীদ্বয় চিত্রকর্ম সৃজন করেছেন জাতীয় ঐতিহ্যকেও ঘিরে। ফুটন্ত লাল শাপলা এঁকেছেন রুবিনা। সাবিনা এঁকেছেন জাতীয় শহীদ মিনার। এ ছাড়াও ক্যানভাসে দৃশ্যমান হয়েছে তরুণীর মুখ কিংবা বয়সের ছাপ পড়া বৃদ্ধার হাসিমুখ। পেশীবহুণ খেলোয়াড়ের ছবিও বাদ যায় তুলির আঁচড় থেকে। রুবিনা তুলে ধরেছেন খোলা চুলের হাস্যোজ্জ্ব¡ল নারী। অন্যদিকে সাবিনা মেলে ধরেছেন ভয়ার্ত চোখে কোন এক শিশুর মুখ। ‘বিউটি অব ন্যাচার’ পর্বের চিত্রকর্মে নিরীক্ষাধর্মী কিছু সৌন্দর্যের চিত্রকর্ম রয়েছে। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে প্রদর্শনী। প্রতিদিন বলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ঋত্বিক ঘটক রেট্রোস্পেক্টিভের বিশেষ বক্তৃতা ॥ জাতীয় জাদুঘরে চলছে ঋত্বিক ঘটক রেট্রোস্পেক্টিভ। বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নির্মাতা ঋত্বিক ঘটকের আটটি চলচ্চিত্রে সাজানো এ আয়োজন সবার জন্য উন্মুক্ত। রেট্রোস্পেক্টিভের দ্বিতীয় দিন ছিল শনিবার। এদিন সকালে জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাঙালির আত্মপরিচয় ও ঋত্বিক কুমার ঘটক’ ॥ শীর্ষক বিশেষ বক্তৃতা। বক্তৃতা করেন ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও বিশেষ্ট ঋত্বিক গবেষক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। বিকেল ৪টায় প্রদর্শিত হয় ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত চলচ্চিত্র নাগরিক। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় দেখানো হয় ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ও অযান্ত্রিক। আজ রবিবার বিকেল ৪টায় প্রদর্শিত হবে বাড়ি থেকে পলিয়ে, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় প্রদর্শিত হবে ফিয়ার ও মেঘে ঢাকা তারা। সকল প্রদর্শনী আসন খালি থাকা সাপেক্ষে সকলের জন্য উন্মুক্ত। তরুপল্লবের মাধবীবরণ উৎসব ॥ স্নিগ্ধতায় মোড়ানো ভোরে কোকিলের কুহুতানই মনে করিয়ে দিল বসন্ত এসেছে। কোকিল যেমন বসন্তের আগমন বারতা ছড়িয়ে দেয় তেমনি মাধবী ফুলের হাত ধরেই আসে ফাগুন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ তার কথা-কবিতা-গানে মাধবীলতাকে অনন্য মর্যাদায় অভিষিক্ত করলেও ফুলটি চেনেন না অনেকেই। আবার কেউ কেউ মধুমালতী বা মধুমঞ্জীরলতাকে মাধবী বলে ভুল করেন। তাই পয়লা ফাল্গুন শনিবার মাধবীলতাকে ঘিরে রমনা পার্কে হয়ে গেল ব্যতিক্রমধর্মী মাধবীবরণ উৎসব। তরুপল্লবের আয়োজনে এ উৎসবে যোগ দেন অর্ধশত প্রকৃতিপ্রেমী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন তরুপল্লবের সভাপতি ও উদ্ভিদবিজ্ঞানী অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা। শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান এ আর খান। অনুষ্ঠানে ২০১৫ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পাওয়ায় তরুপল্লবের সদস্য পাখি বিশেষজ্ঞ শরীফ খান ও শিশুসাহিত্যিক সুজন বড়ুয়াকে অভিনন্দন জানানো হয়। তাঁদের উত্তরীয় ও উপহারসামগ্রী তুলে দেন নিসর্গী বিপ্রদাশ বড়ুয়া। শুরুতেই ঢোলের বাদনে মুখরিত হয়ে ওঠে মাধবী চত্বর প্রাঙ্গণ। তরুপল্লবের সাধারণ সম্পাদক মোকাররম হোসেন উপস্থিত সবাইকে ফাগুনের শুভেচ্ছা জানিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করেন। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে কবিতা ও গান পরিবেশন করেন দেবাশিস বিশ্বাস, ফারুক মঈনুদ্দিন, লায়লা আহমেদ ও হেনা নূরজাহান। আয়োজনের শেষে ছিল মুড়ি-মুড়কি, খৈসহ বিচিত্র খাবারের সমন্বয়ে বাসন্তী আপ্যায়ন।
×