ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আজি দখিন দুয়ার খোলা...

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

আজি দখিন দুয়ার খোলা...

আজ ফাগুনের প্রথম দিন। শুরু হলো বসন্ত। শীতের স্থবিরতা-জড়তা কাটিয়ে উত্তুরে হাওয়ার বদলে আসে দখিনা মলয়। শীতের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে আসে কোকিল। সে এসে তার কুহু কুহু ডাকের ভেতর দিয়ে জানিয়ে দেয় ঋতুরাজের আগমনবার্তা। মানুষ প্রকৃতি রাজ্যের সবচেয়ে সচেতন, সর্বাধিক অনুভূতিসম্পন্ন প্রাণী। আমরা প্রকৃতির রূপবদল বুঝতে পারি, তারতম্যও বুঝতে পারি। অন্য প্রাণীরাও তারতম্য অনেকখানি বুঝতে পারে হয়ত। তাই তারাও প্রকৃতির রূপবদলের সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দেয়। মানুষের মনে আজ নির্মল আনন্দ। প্রকৃতির অনেক কাছে আসবে মানুষ। আমাদের দেশে আবহমানকাল ধরে আসছে বসন্ত। এবারও এসেছে। শীতের জড়তা কাটিয়ে গাছপালা নতুন পুষ্প-পল্লবে নবরূপে সেজেছে, ফুটেছে ফুল, ডেকেছে কোকিল। এখন মাঝে-মধ্যেই শোনা যাবে কোকিলের ডাক। বাংলার গ্রামে গ্রামে ও শহুরে জনপদে এখনও যেখানে যতটুকু প্রকৃতির শোভা রয়েছে সেখানে দেখা যাবে নতুন রূপ, পাখির ওড়াউড়ি ও কলকাকলি। এই রাজধানীতে আজ অনেকেই সাজবেন নতুন রঙ্গিন পোশাকে। বিশেষ করে শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীরা আপ্লুত হবে বসন্ত আবাহনে। অনুষ্ঠান হবে এই নগরীতে। এখনও এই ধারা টিকে আছে অনেকখানি। এটাকে আরও ব্যাপ্ত করা দরকার। আমরা অনেক বিদেশী পালাপার্বণ অনুষ্ঠানে মেতে উঠি; কিন্তু আমাদের নিজেদেরও অনেক অনুষ্ঠান রয়েছে। সেগুলোর একটি এই বসন্তবরণ। সারাদেশে এ অনুষ্ঠান হওয়া উচিত। এতে প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের চেনাজানা আরও ঘনিষ্ঠ হবে। প্রকৃতিকে আমরা আরও ভালবাসতে শিখব। কবির কথায়- ‘ফাল্গুনে বিকশিত কাঞ্চন ফুল/ ডালে ডালে পুঞ্জিত আম্রমুকুল। চঞ্চল মৌমাছি গুঞ্জরি গায়/ বেণুবনে মর্মরে দক্ষিণ বায়।’ এটা আমাদের বাংলাদেশের রূপ। আমরা গাই- ‘ওমা ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে।’ এটাও বাংলাদেশের রূপ। এটাই সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশের প্রকৃতি। শহরে তুলনামূলকভাবে গাছপালা কম, ফুলগাছও কম। তবু যা আছে সেগুলোই নতুন রূপে সাজবে। যে কটি ফুলগাছ এখানে-ওখানে আছে তাতে ফুল ফুটবে। ফুল যদি নাও ফোটে তবুও ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে। তব অবগুণ্ঠিত কুণ্ঠিত জীবনে/ করো না বিড়ম্বিত তারে।’ বসন্তকে বরণ করা হচ্ছে আজ। প্রকৃতির যা-ই আমাদের অবশিষ্ট আছে সেটাই সাজবে আজ। এখন এই বসন্তে ফুল ফুটবে, গাছ কম আর বেশি যা-ই থাক। প্রকৃতির এই অনন্য উপহার মানুষ বরণ করে নেবে মনপ্রাণ দিয়ে। কেননা এর সঙ্গে জড়িত আমাদের হৃদয়, জড়িত আমাদের সংস্কৃতি। আমাদের জীবনযাপনের ধারা এসবই এর সঙ্গে যুক্ত। আমরা চলেছি এরই ধারাবাহিকতায়।
×