ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যস্ত পদ্মা সেতু এলাকা

প্রকাশিত: ২৩:০০, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ব্যস্ত পদ্মা সেতু এলাকা

স্টফ রিপোর্টার ,মুন্সীগঞ্জ ॥ পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে ব্যস্ত সবাই। দেশেী-বিদেশী প্রায় ২০ হাজার লোক দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে স্বপ্ন পূরণে। সবার একই লক্ষ্য নির্দিষ্ট সময়ের আগেই যেন শেষ হয় এই কর্মযজ্ঞ। সেতুর দু’ প্রান্ত মুন্সীগঞ্জ ও শরিয়তপুর জেলা কিংবা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ২১ জেলার মানুষই নয় সারা দেশের মানুষ অপেক্ষায় এই স্বপ্নের পদ্মা সেতুর। নিজস্ব অর্থায়নে নির্মানাধীন দেশের সর্ববৃহৎ এ সেতু বাংলাদেশকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। স্বাধীনতার পর বিশ্ব আবারও অনুধাবন করতে পেরেছে বাঙালি বীরের জাতি। আতœবিশ্বাসে তারা সুদৃঢ়। এই দৃঢ়তার কারণেই নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি হচ্ছে পদ্মা বহুমুখী সেতু। এই সেতু নির্মানের পর দেশের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। বিশেষ এক গতিতে কাজ হচ্ছে এখানে। যা না দেখে বলা মুস্কিল। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও উত্তাল পদ্মায় সেতুর ৩০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। মূল সেতুর পাইল স্থাপন চলছে হরদম। আর বিশাল বিশাল এই পাইল তৈরী হচ্ছে সেতুর পাশেই। বাংলাদেশে এতবড় পাইল তৈরীর ঘটনা বিরল। প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ এই ওয়াকসর্পে পাইল তৈরীর কর্মযজ্ঞ বিস্ময়কর। এই পাইল তৈরীর জন্য ভাড়ি যন্ত্রপাতি ব্যবহারসহ সুক্ষ্ম কাজগুলো করছে নারী সদস্যরা। অতি নিখুঁত এই কাজগুলো সম্পন্ন হচ্ছে একরকম নিরবে। পদ্মা সেতুর মূল পাইলিং চলছে দ্রুত গতিতে। ক্রমেই এই কাজ প্রসারিত হচ্ছে। ৩টি মূল পাইল স্থাপিত হওয়ার পর এখন ৬ ও ৭ নম্বর পিলারে আরও দুটি মূল পাইল বসছে দ্রুতগতিতে। এছাড়া নতুন করে টেস্ট পাইল এবং ট্রায়াল পাইল স্থাপন হচ্ছে। ৪০ নম্বর পিালারে চলছে টেস্ট পাইলের কাজ এবং ৩৯ পিলারে ট্রায়াল পাইল বসছে। টেস্ট পাইল সহজ লোড দিয়ে টেস্ট করা হয়। কিন্তু ট্রায়াল পাইল অনেকটা মূল পাইলের মতই, বেশ মোটা। স্থাপনও অনেক ভারি যন্ত্রপাতির ব্যবহার হচ্ছে। ট্রায়াল পাইলের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয় এখানে মূল পাইল স্থাপন করা যাচ্ছে কিনা। এছাড়াও সেতুর দু’ প্রান্তে ভায়াডকের কাজও শুরু হয়েগেছে পুরো দমে। সব মিলিয়ে মূল সেতুর কাজ ছড়িয়ে পরেছে দু’তীরে এবং পদ্মায়। মাওয়া প্রান্তে দেড় কিলোমিটার এবং জাজিরা প্রান্তে প্রায় ১১ কিলোমিটার এলাকায় নদী শাসন করা হবে। আগামী মে পর্যন্ত পুরো সময় জুড়েই চলবে এ কাজ। আর এই কাজ পুরোদমে শুরু হয় গত নবেম্বরে। থেমে নেই এ্যাপ্রোচ রোড তৈরী, রেল লাইন, গ্যাস লাইন রাখাসহ সব কাজ। জার্মাণী তৈরী ২ হাজার ৪শ’ কিলো জুল ক্ষমতার হ্যামারের হাতুড়ি বাড়ি দিয়ে মূল পাইল স্থাপন করা হচ্ছে। পাইলিংয়ের মাধ্যমে তৈরি করা হবে সেতুর ¯প্যান (পিলার)। পিলারের ওপর বসবে সেতুর স্ল্যাব ও ট্রাস। চীনে ¯¬্যাব ও ট্রাস বানানোর কাজ চলছে। পিলার বানানোর কাজ শেষ হলে ¯¬্যাব ও ট্রাস জুড়ে দেওয়া হবে। তাই প্রথমেই সেতুর ৪২টি পিলার তৈরী করা হচ্ছে। ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ের সেতুটি চার লেনবিশিষ্ট মূল সেতুটি দৈর্ঘ্যে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার এবং চওড়ায় ২২ মিটার। সেতুটিতে মোট ৪১টি ¯প্যান (অংশ) থাকছে, যার প্রতিটির দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। ¯প্যান বড় হওয়ার কারণে রিইনফোর্সড কংক্রিট দিয়ে তৈরি না করে ওজন কমাতে এই সেতুটির মূল অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে স্টিল দিয়ে। তীব্র বায়ুপ্রবাহ ও ভূমিক¤পজনিত ধাক্কা মোকাবেলায় বেছে নেওয়া হয়েছে ওয়ারেন ট্রাস ফর্ম। পুরো সেতুটির ভার বহন করার জন্য থাকছে ৪২টি পিয়ার (পিলার), যার প্রতিটির নিচে থাকছে গড়ে প্রায় ৬টি পাইল। এই সেতু বাংলাদেশের ভাগ্য বদলে দেবে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ইতোমধ্যেই মূল সেতুর ২০ শতাংশ, নদী শাসনে ১৫ শতাংশ, অ্যাপ্রোচ সড়কের ৬০ শতাংশসহ সব মিলিয়ে গড়ে সেতুটির প্রায় ৩০ শতাংশ বেশী কাজ সম্পন্ন হয়েগেছে। মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল হাসান বাদল জানান, ইতিহাসের গর্বিত অংশ বিক্রমপুর তথা মুন্সীগঞ্জ। পদ্মা সেতু এই গর্বের নতুন অংশ। এখানে পরিকল্পনা রয়েছে হংকং কিংবা সিঙ্গাপুরের মত শহর গড়ে তোলা, পদ্মার চরে অলেম্পিক ভিলেজ তৈরী, পানি ও পরিবেশ এবং জীববৈচিত্রের জাদুঘর তৈরী করা।
×