ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

রাজধানীর চার মঞ্চে বসন্ত আবাহন কাল

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

রাজধানীর চার মঞ্চে বসন্ত আবাহন কাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজ শুক্রবার মাঘ মাসের শেষ দিনের মাধ্যমে বিদায় নিচ্ছে পিঠাপুুলির ঋতু শীত। কাল শনিবার পয়লা ফাল্গুনের মাধ্যমে পদার্পণ করবে ঋতুরাজ বসন্ত। প্রকৃতিতে লাগবে রূপের ছোঁয়া। কংক্রিটের শহর ঢাকার রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা কিংবা চন্দ্রিমা উদ্যানে কিছুটা হলেও চোখে পড়বে সেই রূপের রেশ। তাই নাগরিক জীবনেও বইবে বসন্তের দোলা। আবাহন করা হবে প্রিয় এই ঋতুকে। গাওয়া হবে বসন্তের আগমনী গান অথবা কবিতার আশ্রয়ে জানানো হবে অভিনন্দন। সেই সূত্রে দিনটিতে একযোগে রাজধানীর চারটি মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে বসন্ত উৎসব। ‘এসো মিলি প্রাণের উৎসবে’ বসন্তকে আবাহন করবে জাতীয় বসন্ত উদ্্যাপন পরিষদ। মূল আয়োজনটি হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায়। এছাড়া লক্ষ্মীবাজারের বাহাদুর শাহ পার্ক, ধানম-ি লেকের রবীন্দ্র সরোবর ও উত্তরার ৭নং পার্কের মাঠে অনুষ্ঠিত হবে বসন্ত উৎসব। বৃহস্পতিবার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে জাতীয় বসন্ত উদ্্যাপন পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন পরিষদের দুই সহসভাপতি কাজল দেবনাথ ও স্থপতি শফিউদ্দিন আহমেদ, সহসাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট, উৎসব কমিটির সদস্য, আহসান দীপু প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় শনিবার সকাল ৭টায় শুরু হবে বসন্ত আবাহনের এ উৎসব। মতিয়ার রহমানের সারেঙ্গী বাদনের মধ্য দিয়ে সূচনা হবে আয়োজনের। বেলা ১১টা পর্যন্ত চলবে প্রথম পর্বের অনুষ্ঠানমালা। এ পর্বের অনুষ্ঠানসূচীতে থাকবে বসন্ত কথন, প্রীতিবন্ধনী বিনিময়, আবির বিনিময়, দলীয় ও একক সঙ্গীত, দলীয় ও একক আবৃত্তি, পাঠ ও আদিবাসী পরিবেশনা। পরিষদ সভাপতি নাট্যজন আলী যাকেরের সভাপতিত্বে বসন্ত কথনে অংশ নেবেন বিশিষ্টজনরা। বিকেল সাড়ে ৩টায় একই স্থানে অনুষ্ঠিত হবে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব। একই সময় পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের বাহাদুর শাহ পার্কের শহীদ স্তম্ভের পাদদেশ, ধানম-ির রবীন্দ্র সরোবর ও উত্তরার ৭ নম্বর পার্ক মাঠে অনুষ্ঠিত হবে বসন্ত উৎসব। বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত একযোগে চলবে এ চার মঞ্চের আয়োজন। পুরো উৎসব আয়োজনে সহযোগিতায় রয়েছে মুঠোফোন কোম্পানি গ্রামীণফোন। কাজল দেবনাথ বলেন, নাগরিক জীবনে শিকড়ের অনুভব ছড়িয়ে দিতে ১৪০১ বঙ্গাব্দ থেকে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বসন্ত উৎসব। শুরুতে এ উৎসবের অগ্রভাগে ছিলেন রবীন্দ্র গবেষক ও সংস্কৃতি প্রাণ প্রয়াত ওয়াহিদুল হক, কবি শামসুর রাহমান, স্থপতি সফিউদ্দীন আহমেদ, আবৃত্তিশিল্পী কাজী আরিফসহ কিছু সংস্কৃতিকর্মী। তাদেরই প্রচেষ্টায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বসন্ত উৎসবের সূচনা হয়। বর্তমানে এ উৎসব শুধু ঢাকায় নয়, সাড়ম্বরে পালিত হয় সারাদেশে। বাঙালীর এই ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলোর দোলা ছড়িয়ে পড়ুক দেশ থেকে দেশান্তরে। আর এটাই হচ্ছে আমাদের সাংস্কৃতিক শক্তি। এ সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাঝেই ঘটবে বাঙালী জাতিসত্তার প্রকাশ। যখনই খারাপ কিছু হয়েছে তখনই এ সংস্কৃতির শক্তিই আমাদের পথ দেখিয়েছে। শফিউদ্দীন আহমেদ বলেন, সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িকতাকে ধারণ করাই আমাদের এ উৎসবের মূল লক্ষ্য। কারণ অপশক্তিকে রুখে দিতে সব সময়ই শাণিত হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে সংস্কৃতি। তিনি আরও বলেন, ফাল্গুন মাস হচ্ছে ভাষার মাস, এ মাস প্রতিরোধের মাস, এ মাস লড়াই-সংগ্রামের। এ মাসেই বাঙালীর ভাষাসত্তার প্রবল বোধ থেকে জাতিসত্তা গঠনের দিকে পা বাড়ায়। এ জাতিসত্তাই আমাদের পৌঁছে দেয় মহান মুক্তিযুদ্ধের একাত্তরে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ে। এ মাসেই বর্বর পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী আগরতলার ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল রাজনৈতিক নেতাকে জনগণের আন্দোলনের প্রবল চাপে নিঃশর্তভাবে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। শহীদ মিনারে একুশের অনুষ্ঠানমালা ॥ ‘রাষ্ট্র চলবে বাংলায়, না চলা অন্যায়’ সেøাগানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলছে অমর একুশের অনুষ্ঠানমালা। প্রতিদিনই বিকেল থেকে রাত অবধি গানের সুরে, কবিতার ছন্দে, নাচের মুদ্রায় ও পথনাটকের পরিবেশনায় ভাষাশহীদদের প্রতি উৎসারিত হচ্ছে হৃদয়ের ভালবাসা। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত দুই সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানমালার চতুর্থ দিন ছিল বৃহস্পতিবার। এদিন আয়োজনের শুরুতে সূচনা বক্তব্য রাখেন একুশের অনুষ্ঠানমালা উদ্্যাপন কমিটির সদস্য সচিব মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল। সংক্ষিপ্ত কথন শেষে শুরু হয় পরিবেশনা পর্ব। ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে সরদার রহমতউল্লাহ গেয়ে শোনানÑ ‘মাগো আটই ফাল্গুনের কথা আমরা ভুলি নাই’ শিরোনামের গান। এছাড়া একক কণ্ঠে গান শোনান মনিরা ইসলাম প্পাপু, পান্না দত্ত ও রিনা ফেরদৌস। সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করেন স্বভূমি, বেনুকা ললিতকলা একাডেমি ও নিবেদিতার শিল্পীরা। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের অভিশাপ কবিতাটি পাঠ করেন তামান্না সারোয়ার নীপা। এছাড়া একক কণ্ঠে আবৃত্তি করেন বাপ্পী আকন্দ ও মাহমুদুল হাকিম তানভীর। সম্মেলক আবৃত্তি পরিবেশনায় অংশ নেয় বৈকুণ্ঠ, স্বরশ্রুতি ও আবৃত্তি একাডেমির শিল্পীরা। দলীয় নৃত্য পরিবেশনা করে নৃত্যজন ও নাদমের শিল্পীরা। শিশুতোষ পরিবেশনা উপস্থাপন করে সন্ধান লিটল থিয়েটার। সব শেষে নাট্যযোদ্ধা শীর্ষক পথনাটক উপস্থাপন করে গতি থিয়েটার। আজ শুক্রবার পঞ্চম দিনের অনুষ্ঠান শুরু হবে বিকেল সাড়ে চারটায়। চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত একই সময়ে শহীদ মিনারে চলবে একুশের অনুষ্ঠানমালা। ১৮ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠান হবে ধানম-ির রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চে।
×