ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সেমিফাইনালে আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি বাংলাদেশ

জিতলেই ফাইনাল- আত্মবিশ্বাসী জুনিয়র টাইগাররা

প্রকাশিত: ০৯:০০, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

জিতলেই ফাইনাল- আত্মবিশ্বাসী জুনিয়র টাইগাররা

মিথুন আশরাফ ॥ শুরু থেকেই বাংলাদেশ যুব দলের লক্ষ্য শিরোপা জেতা। যেহেতু ঘরের মাটিতে অনুর্ধ ১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ হচ্ছে, তাই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশা করতেই পারে বাংলাদেশ। সেই সম্ভাবনার দিকে এগিয়েও যাচ্ছে। আর মাত্র দুটি ম্যাচ। সেমিফাইনাল ও ফাইনাল। টানা দুটি ম্যাচ জিতলেই প্রথমবারের মতো যুব বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে বাংলাদেশ। এর আগে একটি ম্যাচ জিতে ফাইনালে উঠতে হবে। আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেমিফাইনাল ম্যাচ। জিতলেই ফাইনালে উঠে যাবে মিরাজবাহিনী। এরপর ১৪ ফেব্রুয়ারি হবে ফাইনাল ম্যাচ। যেখানে ভারত আছে। জিতলেই শিরোপা ঘরে তুলবে মিরাজবাহিনী। পারবে বাংলাদেশ তা করতে? সেটি করার আগে তো ফাইনালে উঠতে হবে। বাংলাদেশ যুব দলের অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ বলেছেন, ‘আমরা সবাই রোমাঞ্চিত। এই ম্যাচটি জিতলেই আমরা ফাইনালে চলে যাব। আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত হচ্ছি আমাদের পরবর্তী ম্যাচের (আজকের ম্যাচের জন্য)।’ এ ম্যাচটি খেলতে নামার আগে বাংলাদেশ ৫ দিন বিরতি পেয়েছে। নেপালকে ৫ ফেব্রুয়ারি কোয়ার্টার ফাইনালে হারিয়ে প্রথমবারের মতো যুব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ যুব দল। বিশ্বকাপের মতো আসরে যা আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোন খেলায় সম্ভব হয়নি। তা করে দেখিয়েছেন মিরাজ, শান্ত, সাইফুদ্দিন, শাওন, জাকিররা। ইতিহাস গড়েছেন। তা গড়ে অনেকদিনের বিরতিও মিলেছে। সেমিফাইনালে খেলতে নামার আগে নিজেদের ভালভাবে প্রস্তুত করে নিতে পেরেছেন মিরাজরা। এ বিরতি অনেক কাজে লেগেছে বলেই মনে করছেন মিরাজ, ‘আমরা ৬ দিনের (হবে ৫দিন) একটি গ্যাপ পেয়েছি। এই গ্যাপে আমার ভাল প্রস্তুতি নিয়ে নিতে পেরেছি। সব মিলিয়ে আমরা প্রস্তুত আমাদের পরবর্তী ম্যাচের (আজকের ম্যাচের) জন্য। বিশেষ করে আমাদের ওপেনিং ব্যাটসম্যানরা প্রস্তুত। এছাড়া মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যানরা প্রস্তুত। তারাও গত ম্যাচগুলোতে দারুণ ক্রিকেট খেলেছে। এই দিনগুলোতে আমরা ভাল প্রস্তুতি নিয়েছি।’ সেমিফাইনালে প্রথমবারের ওঠায় সবার মতো গর্ববোধ হচ্ছে মিরাজেরও, ‘আমি খুব গর্বিত, প্রথমবারের মতো আমরা সেমিফাইনাল খেলছি। তবে এটা আমাদের জন্য কোন চাপের না। আমরা সবাই ভাল খেলতে মুখিয়ে আছি। যদি আমরা ভাল ক্রিকেট খেলতে পারি, অবশ্যই সফল হব।’ আজ সেমিফাইনালে আগে ব্যাটিং করলে একটা লক্ষ্যও দাঁড় করিয়েছেন মিরাজরা। সেই লক্ষ্যটা কী? মিরাজই জানালেন, ‘আগে ব্যাটিং করলে আমাদের লক্ষ্য ২৫০ রান। আমাদের দলে বেশ ভাল মানের বোলার আছে। আমার মনে হয় বোলারদের জন্য ২৫০ রান ভাল স্কোর।’ সঙ্গে রোমাঞ্চিত যে সবাই, তাও জানালেন বাংলাদেশ যুব দলের অধিনায়ক। তবে এখনই ফাইনাল নয়, ভাবা হচ্ছে শুধু সেমিফাইনাল ম্যাচটি কিভাবে জেতা যায় তা নিয়ে, ‘আমরা ফাইনাল নিয়ে ভাবছি না। আমাদের পুরো ফোকাস কালকের (আজকের) ম্যাচের দিকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আমাদের বোলার এবং ব্যাটসম্যানরা যদি ভাল খেলতে পারে সেক্ষেত্রে সাফল্য পাওয়া নিশ্চিত হবে।’ ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস বোলাররা দারুণ বল করলেন। এ পেস আক্রমণের বিপক্ষে ভাল করার সম্ভাবনাই দেখছেন মিরাজ, ‘আমার কাছে মনে হয় আমাদের কাছে গতির বল খেলতে ভাল লাগে। কম গতির বল খেললে মিস টাইমিংয়ের সম্ভাবনা বেশি থাকে। বেশি গতির বোলারদের বিপক্ষে খেলতে আমরা সব সময় আত্মবিশ্বাসী থাকি। আমরা দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলে এসেছি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে খেলেছি। টুর্নামেন্টে আমরা ৪ ম্যাচ খেলেছি ওই রকম গতির কোন বোলার ছিল না। এই জন্য আমাদের ওপেনারদের কিছুটা সমস্যা হয়েছে। আশা করি কালকের (আজকের) ম্যাচটা অনেক ভাল খেলবে সবাই।’ মিরাজ মনে করছেন বাংলাদেশের স্পিনাররাই পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। বলেছেন, ‘আমাদের দলে বেশ ভাল স্পিনার আছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের সম্পর্কে জানি তারা কি করতে পারে। আমরা আমাদের স্পিনাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমার কাছে মনে হয়, স্পিনাররা ভাল বোলিং করলে ওরা দাঁড়াতে পারবে না।’ রোমাঞ্চ চাপ না খুশি কোনটা বেশি? এমন প্রশ্নে মিরাজ বলেন, ‘এগুলোর কোনটাই আসলে বেশি না। কারণ আসলে আমরা যদি এখানে হ্যাপি থাকি তাহলে এখানেই শেষ করতে হবে। আমরা কিন্তু হ্যাপি না। আমাদের লক্ষ্য একটি একটি করে ম্যাচ। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই স্যার (কোচ মিজানুর রহমান বাবুল) একটা কথাই বলেছে আমরা প্রতিদিন একটা করে ম্যাচ খেলব আর একটা করে জিতব। এখন মঞ্চটা আমাদের কাছে এমন যে, সেমিফাইনালে আসছি। কিন্তু সেমিফাইনালে আসছি এটা আমরা কেউ চিন্তাই করছি না। আমাদের মাথার ভেতর কাজ করছে না। আমার চিন্তা কালকে (আজ) একটা ম্যাচ, ওটা আমাদের জিততে হবে। তারপরও সামনে যা হবে হবে, নো প্রবলেম!’ বাইরে থেকে কোন চাপ নেই মিরাজদের। সেই চাপ যে নেনই না বাংলাদেশ যুব দলের ক্রিকেটাররা। তাই বললেন বাংলাদেশ যুব দলের অধিনায়ক, ‘যখন আমি ক্রিকেট খেলা শুরু করি তখন আসলে আমি আমার পরিবার, দর্শকদের কথাও চিন্তা করি না। বাইরের কোন চিন্তাও মাথায় ঢুকে না। তখন একটা চিন্তা থাকে, বলটা আসছে কিভাবে ভাল খেলব। কিভাবে রান করতে হবে। কিভাবে উইকেট নিতে হবে। এটাই চিন্তাই করি।’ এই চিন্তাই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মিরাজদের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে বাংলাদেশের বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। উপমহাদেশে যেহেতু খেলা স্পিনটাই মূল পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। যেখানে ক্যারিবিয়ানরা অনেক দুর্বল। মিরাজও পার্থক্যের কথা বলতে গিয়ে জানালেন, ‘আমাদের স্পিনাররা অনেক ভাল। ব্যাটসম্যানও অনেক ভাল। ব্যাটসম্যানরা ভাল টোটাল করে দিলে আমাদের স্পিনারদের জন্য কাজটা সহজ হয়ে যায়। আমরা ওদের কাছ থেকে এগিয়ে আছি স্পিন আক্রমণ ও ব্যাটিংয়ে।’ মিরাজদের জন্য আজ বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়, বর্তমান ওয়ানডে ও টি২০ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ও টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের কথা প্রেরণা হয়ে ধরা দিতে পারে। তাদের বলা কথাগুলো মিরাজই জানালেন, ‘কালকে (মঙ্গলবার) দুর্জয় স্যার মাশরাফি, মুশফিক ভাই কথা বলেছেন। তারা একটা কথাই বলছে, তোমরা ক্রিকেট যেভাবে খেলছ ভালই চলছে। অন্য কোন দিকে নজর না দিয়ে এদিকেই ফোকাস রাখতে বলেছেন।’ সিনিয়রদের এ কথাই শেষপর্যন্ত কাজে দিতে পারে। দিলেই সেমিফাইনালে আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালে খেলাও নিশ্চিত করে নিতে পারে বাংলাদেশ।
×