ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিপর্যয়ে সেচ, মৎস্য সম্পদ ও পরিবেশ

পদ্মাসহ ১২ নদী পানিশূন্য

প্রকাশিত: ০৪:১২, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

পদ্মাসহ ১২ নদী পানিশূন্য

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ শুষ্ক মৌসুম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে শুকিয়ে প্রায় কাঠ হয়ে গেছে রাজশাহীর পদ্মা নদী। অনেক আগেই শুকিয়ে গেছে রাজশাহীসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের খাল-বিল, নালা। একই সঙ্গে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নেমে যাচ্ছে। গভীর নলকূপেও ঠিকমতো মিলছে না পানি। ফলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে সেচ ও পানীয় জলের সঙ্কট। নদী-নালা, খালবিল শুকিয়ে কাঠ হওয়ায় এরই মধ্যে মৎস্য সম্পদ ও পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীর পদ্মা নদীসহ শুকিয়ে পানিশূন্য এখন এ অঞ্চলের ১২টি নদী। রাজশাহী শহরের পাশেই স্রোতস্বিনী পদ্মা নদীতে জেগে ওঠা বিশাল বিশাল চরে এখন বিভিন্ন ফসল চাষ হচ্ছে। এক সময় যেখানে ছিল পদ্মার স্রোতধারা সেখানে এখন শুধুই ধু ধু বালুচর। ফলে এ অঞ্চলে দেখা দিয়েছে পরিবেশের বিরূপ প্রভাব। পদ্মা সংযুক্ত ১২টি নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। এ অঞ্চলের হাজার হাজার জেলে ও মাঝি বেকার হয়ে পড়েছে। পদ্মা নদী ছাড়াও বরেন্দ্র অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত মহানন্দা, আত্রাই, বারনই, শিব ও রানী (ফকিন্নী), ছোট যমুনাসহ ১২টি নদ-নদীতেও পড়েছে প্রভাব। এসব নদী পলি ও বালু জমে ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে এখন মৃতপ্রায়। ফলে শুষ্ক মৌসুমের আগেই নদীগুলো শুকিয়ে গেছে। আশির দশক পর্যন্ত এসব নদীতে শুষ্ক মৌসুমেও পানি থাকত। সে পানি কৃষি জমির সেচ কাজের জন্য ব্যবহার করা হতো। জেলেরা মাছ শিকার করতেন, চলত নৌকাও। তবে এখন সে দৃশ্য শুধুই স্মৃতি এ অঞ্চলের মানুষের কাছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৭০-এর দশকের শেষদিকে এবং ৮০ দশকের প্রথমদিকে রাজশাহী অঞ্চলের কিছু খাল খনন করা হলেও তা কোন কাজে আসেনি। ফলে এ অঞ্চলের কৃষির সেচ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভূগর্ভস্থ পানির উওরনির্ভর হয়ে পড়ে। এতে ভূগর্ভস্থ পানি অতিরিক্ত মাত্রায় নিচে নেমে যায়। প্রতিনিয়ত তা নিচে নামছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ড. সারোয়ার জাহান জানান, উজানের নদী কেন্দ্রিক পরিকল্পনার কারণে পলি জমা হয়ে পদ্মা নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। আর এর প্রভাবে এ অঞ্চলের ১২টি নদী এখন মৃতপ্রায়। পদ্মাসহ এসব নদী সংস্কারে কোন সরকারই পদক্ষেপ নেয়নি। পানির এ সঙ্কট কাটাতে নদীগুলো খননের মাধ্যমে পানি সংরক্ষণ ও রাজবাড়ীর পাংশায় ব্যারাজ নির্মাণের এখন বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমানো ও প্রস্তাবিত উত্তরা রাজশাহী সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন আন্দোলনে নেতা ও রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান জানান, কোন সরকারই রাজশাহী অঞ্চলে পানি সংরক্ষণের কোন উদ্যোগ নেয়নি। পানি সংরক্ষণের জন্য প্রকল্প গ্রহণের ৩০ বছরেও চলনবিল ও উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে এ অঞ্চলের কৃষকরা সম্পূর্ণ ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, খরাপ্রবণ এ অঞ্চল মরুকরণ প্রক্রিয়া থেকে রক্ষা করতে ভূউপরিস্থ পানি সংরক্ষণের কোন বিকল্প নেই। রাজশাহী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, বরেন্দ্র অঞ্চলে বর্তমানে গড়ে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ১১০ ফুট নিচে অবস্থান করছে। ক্রমেই তা নিচের দিকেই যাচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলে হাজার হাজার গভীর নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে।
×