ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

উপেক্ষিত বাংলা ভাষা

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

উপেক্ষিত বাংলা ভাষা

এস এম হৃদয় রহমান দেশে উচ্চশিক্ষার অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে নেই বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে উচ্চশিক্ষার সুযোগ। বিশেষ করে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চর্চায় চরমভাবে উপেক্ষিত। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী শুদ্ধভাবে বাংলা উচ্চারণ করতে পারেন না। অতিমাত্রায় বাণিজ্যিক মনোভাবের কারণে অধিকাংশ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা নেই। এ বিষয়ে সরকারীভাবেও কোন বাধ্যবাধকতা নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাকরিনির্ভর পড়াশোনা এখন শিক্ষার্থীদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বাজার চাহিদার বিবেচনায় বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ, এমবিএ, কম্পিউটার বিজ্ঞান, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, ফ্যাশন ডিজাইনিংসহ কয়েকটি বিষয় বেশি করে পড়ানো হয়। রাজধানীর ধানম-িতে অবস্থিত একটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের চলাফেরা, কথাবার্তা দেখলে মনে হবে এটা কোন পশ্চিমা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতি কথার শেষে লুল, ওয়াও, জোশ, ইও ইত্যাদি পশ্চিমা শব্দ যেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের মুখে মুখে। বিশ্ববিদ্যালয়টির কোর্স ক্যাটালগে দেখা যায় ইংরেজী বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স করা গেলেও বাংলা বিষয়ের কোন অস্তিত্ব নেই। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ইংরেজী ভাষার প্রতিই বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। তারা বন্ধুরা মিলে যখন কথা বলে তখন তাদের কথা বলার ভাব নাকি অন্যরকম হয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা বলছে বাংলা ভাষার প্রতি গুরুত্বটা কম দেয়ার প্রথম কারণ হচ্ছে আমাদের পাঠ্যবই এবং চাকরির বাজার। বনানীর একটি ইউনিভার্সিটি, পশ্চিমা বিশ্বের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়াই যেন এই বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষা কার্যক্রমে পরিণত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের পোশাক, চলাফেরায় বাঙালিত্ব দূরের কথা কথাবার্তাও সে রকম ভাবধারা দেখা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের নামকরা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাটালগে নেই বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে কোন অনার্স বা মাস্টার্স কোর্স। রাজধানীর মানিকনগরে অবস্থিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পোশাক দেখলে মনে হবে- মধ্য প্রাচ্যের কোন দেশে আছি। এখানকার ছাত্রীদের মধ্যে হিজাব এবং বোরকা পরাসহ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আরবীয় সংস্কৃতির প্রতি প্রবণতাটা একটু বেশি দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়টির কোর্স ক্যাটালগে ইসলাম শিক্ষা ও ইংরেজীর প্রতি গুরুত্ব দেয়া হলেও উপেক্ষিত রয়ে গেছে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি। এখানকার শিক্ষার্থীরা বলেন, আরবী এবং ইংরেজীর গুরুত্ব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে। বিশ্বমানের শিক্ষা অর্জন করতেই আমরা এ ভাষাগুলোর প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছি। দেশের ৮৩টি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলায় স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর করার সুযোগ রয়েছে মাত্র ৯টিতে। বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যের চেয়ে বিদেশী ভাষা ও সাহিত্যকেই গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে আমাদের দেশীয় বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। অনেক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পশ্চিমা ও মধ্যপ্রাচ্যের ভাবধারার চলাফেরাও লক্ষ্য করা যায়। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি অবহেলা। দেশে ৮৩টি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি, গণবিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ, সাইথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি, শান্তা মারিয়াম ইউনিভার্সিটি, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি, নর্থ বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ইউনিভার্সিটি, সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগ রয়েছে। ৭৪টি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগ না থাকা নিয়ে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর নুরুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারটাতে সরকারের বিরাট দায়িত্ব ছিল যে বাধ্যতামূলক বাংলা অনুষদ রাখার বিষয়ে আইন করা। ১৯৫২ সালে যে ভাষা এবং সংস্কৃতির জন্য আমাদের সোনার ছেলেরা জীবন দিয়ে গেছেন সেই ভাষাকে অবমূল্যায়ন করাটা আমাদের জাতি হিসেবে লজ্জার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে হঠাৎ করে বাংলা বিভাগ না খোলা গেলেও অন্তত অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ে কোর্স চালু করা উচিত। স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে সম্ভব না হলেও সহায়ক বিষয় হিসেবে কমপক্ষে ১০০ নম্বরের বাংলা বিষয় চালু করা উচিত। ঢাকা কলেজ থেকে
×