ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আমার দুঃখিনী বর্ণমালা

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

আমার দুঃখিনী বর্ণমালা

সফিউল্লাহ আনসারী ‘মোদের গরব মোদের আশা, আমরি বাংলা ভাষা।’ রক্তের দামে কেনা মায়ের ভাষা বাংলা। আমার দুঃখিনী বর্ণমালা বাংলা। বিশ্বের ইতিহাসে কোন জাতি বা গোষ্ঠী তাদের মুখের ভাষা-মায়ের ভাষা রক্ষার জন্য জীবন দিয়েছে বলে আমার জানা নেই। কিংবা সংগ্রাম আন্দোলন করতে হয়েছে এমনটিই শোনা যায়নি, অথচ আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষার জন্য দিতে হয়েছে বুকের তাজা রক্ত। কিন্তু হায়! এত ত্যাগ আর জীবনের বিনিময়ে পাওয়া মুখের ভাষা আজ চোখের জলে ভেজায় তার জমিন।রফিক, সালাম, জব্বার, বরকতরা কি ভাষার অবমূল্যায়ন আর অপব্যবহারের জন্য জীবন দিয়েছিল? কথা হচ্ছে বাংলা ভাষার শত্রু মিত্র; আমরা হুজুগে মাতাল জাতি বলেই অন্য বিষয়গুলোর মতো বাংলা ভাষার শত্রু মিত্র চিনতে পারি না কিংবা ভুল করি। ভাষার ব্যবহারে ভিনদেশী ভাষার মিশ্রণ আমার মায়ের ভাষা বাংলার বারোটা বাজাচ্ছে সেদিকে নেই কোন খেয়াল। আমরা জানি ভাষার জন্য সংগ্রাম শুধুই মুখের ভাষার জন্য হয়নি; হয়েছে স্বতন্ত্র বর্ণমালার জন্যই। বাঙালীর ভাষাকে হত্যা করার পাশাপাশি অক্ষরগুলোকেও নিঃশেষ করারও চেষ্টা করেছে পাকিস্তান শাসক গোষ্ঠী। ষড়যন্ত্রকে একসঙ্গে মোকাবেলা করে প্রতিরোধ যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছে, রক্ষা পেয়েছে আমার ভাষা বাংলা। আমার বাংলা বর্ণমালাকে হারতে দেয়নি বিজয়িনী মা, দিয়েছে বলিদান তার গর্ভে জন্ম দেয়া সন্তানকে। সেই সন্তানরা আজ প্রতিযোগিতায় মেতেছেন বাংলা বিদ্যালয় ছেড়ে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে। ভাষাবিদ, ভাষাবিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহসহ যাঁরা বাংলার পক্ষ নিয়েছিলেন, তাদেরকে ভারতের দালাল, হিন্দু ইত্যাদি বলা হয়েছিল- সেদিন, অথচ আজ স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীন ভাষা অজ্ঞাত শত্রু কবলিত! আমাদের দেশের অফিস-আদালত থেকে শুরু করে আজো আরবী, ফারসি, ইংলিশসহ হিন্দী ভাষার দখলদারিত্ব বিদ্যমান। কোন অজানা কারণে সরকারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। বাংলা এখন শুধুই বাংলাদেশের মানচিত্রেই সীমাবদ্ধ নেই, বিশ্বের সকল দেশে স্বীকৃত ভাষা হিসেবে গর্বিত বাঙালীর মাথা উঁচু করেছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হচ্ছে জাতিসংঘের আয়োজনে। ফেব্রুয়ারিতে বেড়ে যায় আমাদেরও মাতামাতি। একুশে বইমেলা বাংলা ভাষার আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে লেখক-পাঠকের মিলন মেলাকে অর্থবহ করে তোলে। আমরা অমর একুশের গান গাই, শহীদ মিনারে নগ্ন পায়ে ফুল দিই, সভা-সেমিনার আর কাব্যের মূর্ছনায় মাতিয়ে রাখি পুরো মাস, অথচ ভুলে থাকি ৮ ফাগুনকে। বাংলা ভাষার জন্য দিবস পালন হয় ইংরেজী তারিখ আর মাসকে ঘিরে। ভাবনার বিষয় বটে। আমরা খাঁটি বাংলাভাষী হয়েও চরম অবহেলায় বাংলাকেই আজ করে যাচ্ছি ছোট। বিদেশী ভাষা আর ভিন দেশী চ্যানেলের দাপটে আমাদের বিদ্যালয় পড়া ছেলেটাও কথা বলছে জগাখিচুরি ভাষায়। বাংলা ভাষা মুখে নিয়ে জন্ম হওয়া একজন বাঙালীর এই দেশে মাতৃভাষার অবহেলা একটি অপরাধ। দুঃখের বিষয় অসচেতনতা, হুজুগে বাঙালীর দোষ দিয়ে কি হবে? যেখানে সরকারী অনেক নীতিমালা ইংরেজীতে খসড়া হয়। বাংলা ভাষা প্রচলনের জন্য সরকারের যে আন্তরিকতার অভাব তা ইংরেজির দারস্থ হওয়াতেই বোঝা যায়। তবে আশার কথা ইদানীং মোবাইলে বাংলা অবাধ ব্যবহার এবং অনলাইন পোর্টালে বাংলায় সংবাদ ও তথ্য আদান-প্রদান পাঠককে উৎসাহিত করেছে। স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ থাকলেও-আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবে বাংলা ভাষার বেহাল দশা। ময়মনসিংহ থেকে
×