ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তোফায়েল আহমেদ

সেমিতে নির্ভার থাকুক মিরাজরা ॥ বাশার

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সেমিতে নির্ভার থাকুক মিরাজরা ॥ বাশার

এবার তাহলে উনিশের গল্পটা বদলাতে যাচ্ছে! ‘যাচ্ছে’ না বলে ‘গেছে’ বলাটাই কি বেশি শ্রেয় নয়? যুব বিশ্বকাপের সেমিতে ওঠার মধ্য দিয়ে মেহেদি হাসান মিরাজের দল তো পূর্বসূরিদের গ্লানি মুছে দিয়েছে ইতোমধ্যে। যে গ্লানির ভার এক যুগ ধরে বইছে বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক ক্রিকেট। যুব বিশ্বকাপে প্রতিবারই বাংলাদেশের সামনে থাকে সম্ভাবনার নানা আঁকি-বুঁকি। নির্দিষ্ট করে বললে সেটি ২০০৪ সালে ঘরের মাঠে হওয়া আসর থেকে। আবার বঞ্চিত হওয়ার গল্পটাও ঠিক তখন থেকেই। সম্ভাবনা আর বঞ্চনার গল্প একই সমান্তরালে চলতে চলতে আরও একটি টুর্নামেন্ট যখন ঘরের মাঠে, তখন যুবা টাইগারদের সামনে বাড়তি দায়িত্ব হয়ে এসেছিল- পূর্বসূরিদের সব গ্লানি মুছে নিজেদের গল্পটা নতুন করে লেখার। গ্রুপ পর্ব এবং কোয়ার্টার ফাইনালের ধাপ পেরিয়ে সেমিফাইনালে ওঠার মধ্য দিয়ে মিরাজ-নাজমুলরা এখনও পর্যন্ত স্থির আছেন তাদের মূল লক্ষ্যে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব প্রথম আসর থেকেই। ১৯৮৮ সালে যুব বিশ্বকাপ নামাঙ্কিত প্রথম আসরে আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশগুলোর সম্মিলিত দলে ছিলেন বাংলাদেশের দুই ক্রিকেটার- আমিনুল ইসলাম বুলবুল এবং হারুনুর রশিদ। এরপর ১০ বছর বিরতি দিয়ে ১৯৯৮ সালে আবার যখন ফিরে যুব ক্রিকেটের বৈশ্যিক আসর, তখন থেকেই বাংলাদেশ একটি দল হিসেবে খেলছে নিয়মিত। সেই টুর্নােেমন্টে তখনকার যুবাদের কাছে প্রত্যাশা ছিল না তেমন বড় কিছুর। ২০০০ এবং ২০০২ টুর্নামেন্টও তেমনই। তবে ২০০৪ সালের ঘরের মাঠের আসর থেকেই শিরোপায় চোখ রেখে আসছে বাংলাদেশ। কিন্তু আফতাব আহমেদ, মাহমুদউল্লাহ, নাইম ইসলাম, এনামুল হক জুনিয়ররা সেবার পরেননি। প্লেট চ্যাম্পিয়নেই আটকে গিয়েছিল তাদের বড় স্বপ্ন। পারেননি সাকিব, তামিম, মুশফিকদের নিয়ে গড়া ইতিহাসে বাংলাদেশের সেরা যুব দলটিও। তবে সেবারের পঞ্চম হওয়াটাই এবারের আসরের আগ পর্যন্ত যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য হয়েছিল। এরপর ২০০৮ সালে অষ্টম, ২০১০ ও ২০১৪ সালে প্লেট চ্যাম্পিয়ন, ২০১২ সালে সপ্তম হওয়াটা গ্লানির বেদনাকে কেবল পাহাড় সমান করেছে। সেই পাহাড় সমান গ্লানি মুছে ফেলার সুযোগ এখন বাংলাদেশের সামনে। আর মাত্র দুটি সিড়ি! বৃহস্পতিবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম সিড়ি ডিঙ্গাতে পারলেই ফাইনাল। আর ফাইনালের সিঁড়ি পেরুলেই রচিত একটি গ্লানি ভুলার কাব্য। ঠিক এমন সময় দাঁড়িয়ে যুবাদের পরফর্মেন্স নিয়ে বলতে গিয়ে সুখের হাসি হাসতে পারছেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক ও জাতীয় নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ নিয়ে জনকণ্ঠের সঙ্গে আলাপ-চারিতায় মুঠোফোনের ওপ্রান্তে সুখী হাবিবুল বাশারকেই যেন পাওয়া গেল। তবে সেমিতে উত্তীর্ণ হয়েই তুষ্ট থাকতে রাজি নন তিনি, ‘যুবারা সেমিফাইনালে ওঠেছে এজন্য খুবই ভাল লাগছে। তবে মনে রাখতে হবে এই বিশ্বকাপে আমাদের প্রচেষ্টা আরও বেশি। ভাল লাগবে যদি আমরা ফাইনালে যেতে পারি। যেভাবে টিমটা গত তিন বছর ধরে পারফর্ম করছিল তাতে সেমিতে ওঠা অপ্রতাশিত ছিল না। বরং সেমিফাইনালে ওঠতে ব্যর্থ হলেই সেটা অনাকাক্সিক্ষত বা কষ্টের হতো।’ সেমিতে ওঠতে পারাটাকেই বড় মহাত্ম্য না মেনে সামনে চোখ রাখতে বলছেন বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেটের অন্যতম সফল অধিনায়ক, ‘আমরা একটা জিনিস ভুল করছি যে সেমিফাইনালে ওঠাকে সবাই বড় করে দেখছি। আমাদের টার্গেট কিন্তু আরও বড়। এখনও পর্যন্ত যে সাফল্য এটা আসলে প্রত্যাশিত। এটা নতুন কিছু নয়। দল সেমিফাইনালে ওঠেছে এটা নিয়ে আলাদা ভাল লাগা অবশ্যই আছে, তবে আমার নিজের চাওয়া আরও বেশি। ফাইনালে দেখতে চাই দলকে।’ শুধু ফাইনাল কেন। বাংলাদেশকে তো এবার চ্যাম্পিয়নই দেখতে চায় সবাই। গত তিন বছর ধরে যে দলটা স্বপ্ন দেখিয়ে আসছে সেই দলের গল্পও যদি পূর্বসূরিদের মতো হয় তাহলে তো মন ভাঙ্গার বেদনায় পুড়ে ছারখার হতে হবে। আশার কথা মেহেদি মিরাজের দল এখনও পর্যন্ত রাঙ্গিয়েই রেখেছেন সবার মন। হাবিবুল বাশার সুমনও মুগ্ধ দলের পারফর্মেন্সে। ‘ছেলেরা খুব ভাল পারফর্মেন্স করছে পুরো টুর্নামেন্টে। অলরাউন্ড নৈপুণ্যই আমরা দেখছি তাদের কাছে। টিম হিসেবে পারফর্ম করাটা অনেক জরুরী। বড় টুর্নামেন্টে ভাল করতে হলে টিম হিসেবেই পারফর্ম করতে হয় এবং সেটাই আমাদের ছেলেরা করছে। যার জন্য তারা বাহবাই দাবি রাখে।’- মন্তব্য হাবিবুল বাশারের। বড় স্বপ্নের পথে এতদিন কোয়ার্টার ফাইনাল অদ্ভুত ধাঁধা হয়েছিল বাংলাদেশের জন্য। তিন তিনবার যে এখানেই আটকে যেতে হয়েছিল যুবা টাইগারদের। এবার সেই গল্পটা বদলেছে। বদলেছে বলেই সবাই সামনে চোখ রাখার সাহস পাচ্ছেন। সেমিতে ওঠে তুষ্ট না হলেও হাবিবুল বাশারও স্বীকার করলেন তাঁর মনে ভয় ছিল কোয়ার্টার নিয়ে, ‘আমি আসলে কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচ নিয়েই চিন্তিত ছিলাম। এমনিতেই এই পর্বে বার বার আটকে যাচ্ছিলাম আমরা। তার ওপর নেপালের সঙ্গে খেলা ছিল। বড় মঞ্চে ছোট টিমের সঙ্গে চাপ অনেক বেশি থাকে।’ সব বাধা পেরিয়ে যখন স্বপ্ন সিঁড়ির শেষ দুই ধাপ আগে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ তখন হাবিবুল বাশার যেন অভয় দিতে চাইলেন যুবাদের, ‘নির্ভার হয়ে খেলতে বলব ছেলেদের। অতিরিক্ত কিছু বা চাপ যেন না নেয় তারা। এখনও পর্যন্ত দলকে যেমন দেখেছি তাতে সবাইকে উজ্জীবিতই মনে হয়েছে। আশা করি কাল সেমিফাইনালে ছেলেরা অনেক নির্ভার হয়েই খেলতে পারবে এবং এই ম্যাচে আমরা আরও ভাল কিছু করব।’ তাহলে কি হাবিবুল বাশার ফাইনালেই দেখছেন বাংলাদেশকে? উত্তর শুনে নিন তার কাছ থেকেই, ‘ফাইনাল খেলার স্বপ্নের কথা তো আগেই বলেছি। চ্যাম্পিয়ন হতে পারব কিনা সেটা পরের ব্যাপার। চ্যাম্পিয়ন হতে হলে আগে ফাইনালে যেতে হবে এবং সেই সামর্থ্য আমাদের অবশ্যই আছে। তবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা আমি এখনই বলতে চাই না। আমি আগে ফাইনালে ওঠতে চাই।’ এখনও পর্যন্ত মিরাজ-নাজমুলদের যে পারফর্মেন্স তাতে বাংলাদেশের বৃহস্পতি আছে কক্ষ পথেই। আগামী কাল সেই বৃহস্পতি পথ না হারালেই হয়!
×