ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সুন্দরবনে ফ্লাইং ক্যামেরাসহ ড্রোন আটক, প্রশাসনে আলোড়ন

প্রকাশিত: ০৫:২০, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সুন্দরবনে ফ্লাইং ক্যামেরাসহ ড্রোন আটক, প্রশাসনে আলোড়ন

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ পূর্ব সুন্দরবনে কটকা অভয়ারণ্যের আকাশে ক্যামেরাসহ উড়ন্ত ড্রোন আটকের ঘটনায় প্রশাসন ও বন বিভাগে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ড্রোনটি তিন বিদেশী সাংবাদিকের বলে জানা গেছে। এক সপ্তাহ আগে ড্রোনটি আটক করা হলেও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি বনবিভাগ। তারা এ বিষয়ে যোগাযোগ করে চলেছে উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে। সুন্দরবন বিভাগের পূর্ব ‘অনুমতি না নিয়ে’ অভয়ারণ্যে ড্রোন উড়িয়ে ছবি তোলায় ফ্রান্সের ‘এআরটিই’ টেলিভিশনের ওই তিন সাংবাদিকও এখন বিপাকে পড়েছেন। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পাগমা ট্যুর এ্যান্ড ট্রাভেলস কোম্পানির এমএল বাওয়ালী লঞ্চে করে অন্যান্যের সঙ্গে ফ্রান্সের ‘এআরটিই’ টেলিভিশনের তিন সাংবাদিক গাই কিউসি, টিমো এভাম্যান ও নাসিম এলমাউন সুন্দরবন ভ্রমণে আসেন। গত ৩১ জানুয়ারি বেলা ১১টার দিকে এই তিন সাংবাদিক কটকা ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ বনের আকাশে ক্যামেরাসহ একটি ড্রোন উড়িয়ে বন্য প্রাণীসহ জীববৈচিত্র্যের ছবি ধারণ করতে থাকেন। বিষয়টি জেলে-বনজীবীদের নজরে এলে কটকা অভয়ারণ্যে শোরগোল পড়ে যায়। পরে কটকা অভয়ারণ্যের কর্মকর্তা ফরেস্ট রেঞ্জের শাহ নোমান ঘটনাস্থলে গিয়ে তিন সাংবাদিককে উড়ন্ত ড্রোনটি নিচে নামিয়ে আনতে বাধ্য করেন। অভায়ারণ্যে ড্রোন ওড়ানোর জন্য সুন্দরবন বিভাগ থেকে কোন পূর্বঅনুমতি না নেয়ায় ড্রোনটিকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ওই তিন সাংবাদিক সুন্দরবন নিয়ে তাদের দেশের টেলিভিশনের জন্য ডকুমেন্টারি করার কথা জানালে ড্রোনটি রেখে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। ফ্লাইং ক্যামেরাসহ আটক ওই ড্রোনটি হচ্ছে ডিজেআই কম্পানির। যার মডেল নং- পি-৩৩০ জেড, সিরিয়াল নম্বর পিএলএল-৬৩৬১৫৪১২৬। একটি ব্যাটারিসহ ড্রোনটির সঙ্গে একটি রিমোটও রয়েছে। ড্রোনটি বাংলাদেশে আনার জন্য কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স ও বাংলাদেশের আকাশে ওড়াবার জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কোন অনুমতিও দেখাতে পারেননি ফ্রান্সের ওই তিন সাংবাদিক। পরে আটক ড্রোনটি বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের অফিসে নিয়ে আসা হয়। পরে সেটি নিয়ে যাওয়া হয় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। জানানো হয়, বন মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাদেরও। গত এক সপ্তাহে আটক ড্রোনটির বিষয়ে সুষ্ঠু কোন সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি সুন্দরবন বিভাগ। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) কামাল উদ্দিন আহমেদ কটকা অভয়ারণ্য থেকে ড্রোন আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এখন এই ড্রোনটির বিষয়ে কি করা হবে তা জানতে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সোমবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে সে মতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অন্যদিকে, পাগমা টুর এ্যান্ড ট্রাভেলস কোম্পানির মালিক নজরুল ইসলাম দাবি করেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে ‘এআরটিই’ টেলিভিশনে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সুন্দরবন নিয়ে ডকুমেন্টারি তৈরি করতে ‘জেড’ প্রোডাকশন কোম্পানি তিন সাংবাদিককে বাংলাদেশে পাঠায়। তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে আমাদের মাধ্যমে সুন্দরবন ভ্রমণে যান। সুন্দরবনে ড্রোন উড়াতে বন বিভাগের অনুমতির বিষয়টি ওই তিন সাংবাদিকের জানা না থাকার কারণে তারা বিড়ম্বনায় পড়েছেন। তারা এই বিষয়টি না জানার কারণ উল্লেখসহ ভুল স্বীকার করে সুন্দরবন বিভাগের কাছে ড্রোনটি ফেরত চেয়ে আবেদন করেছেন। বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানের জন্য ওই তিন সাংবাদিক ঢাকায় ফ্রান্স দূতাবাসের হস্থক্ষেপ কামনা করে এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন।
×