ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিলুপ্তির পথে কাঁকড়া সম্পদ

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বিলুপ্তির পথে কাঁকড়া সম্পদ

আবদুর রাজ্জাক, মহেশখালী ॥ প্রজনন মৌসুমে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপকূলজুড়ে ডিমওয়ালা মা কাঁকড়া শিকারের মহোৎসব চলছে। বিশেষ করে উপকূলীয় দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর সোনাদিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার উপকূলীয় প্যারাবন ও ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলসমূহে প্রতিদিন শত শত মণ মা কাঁকড়া শিকার করে তা জেলাসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করা হচ্ছে। এভাবে প্রজননকালীন সময়ে কাঁকড়া শিকার চলতে থাকলে চিংড়ির চেয়েও উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় এ মৎস্যসম্পদ অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে সচেতন মহলের মনে করেন। বিশেষজ্ঞরা জানান, বিশ্বের অন্যতম মৎস্যসম্পদ কাঁকড়ার প্রধান প্রজনন ক্ষেত্র হলো উপকূলীয় এলাকা ও ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। অন্যদিকে বিশ্বের প্রধানতম ম্যানগ্রোভ এলাকা হলো কক্সবাজারসহ দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকা। এখান থেকে সংগৃহীত কাঁকড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়ে থাকে। এ থেকে প্রতি বছর অর্জিত হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। অন্যতম রফতানিপণ্য কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি দুই মাস। প্রজনন মৌসুমে উপকূল ও ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের লোনা পানিতে এরা ডিম ছাড়ে। মাঘ মাসের প্রথম অমাবস্যায় সবচেয়ে বেশি ডিম দিয়ে থাকে স্ত্রী কাঁকড়া। অন্যদিকে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি এ দু’মাসজুড়ে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, হংকং ও চীনসহ বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এসব উৎসবের খাদ্য তালিকায় ডিমওয়ালা কাঁকড়ার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে ডিমওয়ালা কাঁকড়ার চাহিদা সবচেয়ে বেশি এবং এ সময় দামও থাকে সর্বোচ্চ। তাই বেশি দামের আশায় এবং সুন্দরবন ছাড়া অন্য ম্যানগ্রোভ এলাকায় প্রজননকালীন কাঁকড়া শিকার বন্ধের সরকারী উদ্যোগ না থাকার ফলে ডিমওয়ালা কাঁকড়া শিকারে চলে মহোৎসব। মহেশখালীর বিভিন্ন উপকূলে প্রতিদিন শত শত শিকারি ডিমওয়ালা কাঁকড়া শিকার করছে। এক কাঁকড়া শিকারি জানান, প্রতিদিন ৩/৪ কেজি কাঁকড়া পান। ৪/৫টি কাঁকড়ায় এক কেজি হয় এবং প্রতি কেজি চারশ’ থেকে পাঁচশ’ টাকায় বিক্রি করেন। এখন কাঁকড়া বেশি ধরা পড়ছে এবং দামের দিক দিয়েও ভাল। সোনাদিয়া দ¦ীপের কাঁকড়া আহরণকারী জেলেরা জানান, তারা কাঁকড়া শিকার করে বিভিন্ন আড়তে সাপ্লাই দিচ্ছেন। কাঁকড়ার আড়তদার বিধু জানান, এখন ডিমওয়ালা কাঁকড়া পাওয়া যায় বলে ঢাকা-চট্টগ্রামের আড়তে এসব কাঁকড়ার বেশ চাহিদা রয়েছে এবং দামের দিক দিয়েও ভাল। অন্য সময় ডিমওয়ালা কাঁকড়া পাওয়া যায় না বলে তেমন চাহিদা থাকে না। চকরিয়া-কক্সবাজার ও আশপাশ এলাকার অর্ধশতাধিক আড়তদার প্রতিদিন কয়েকশ’ মণ ডিমওয়ালা কাঁকড়া ঢাকায় পাঠান বলেও জানান। উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ অঞ্চল কাঁকড়ার প্রজনন ক্ষেত্র ও এখান থেকে হরদম শিকার করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় কাঁকড়া শিকারিরা আরও বেপরোয়া হয়ে কাঁকড়া শিকারে ব্যস্ত। এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অমিতোষ সেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কাঁকড়া শিকার সম্পর্কে মৎস্য আইনে কোন নির্দেশনা না থাকায় জেলা মৎস্য দফতর থেকে এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না।
×