ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জঙ্গী মদদে পাকিস্তান

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

জঙ্গী মদদে পাকিস্তান

শুধু বাংলাদেশ নয়, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশকেই অসহযোগিতা করে আসছে পাকিস্তান। দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার বিভিন্ন ফোরামেও দেশটির অসহযোগিতা বাড়ছে। স্পষ্ট করে বললে বলতে হয়, এই অসহযোগিতা করা ছাড়া তাদের কোন বিকল্পও নেই। কারণ তারাই বর্তমান বিশ্বে জঙ্গীবাদের মোড়ল হয়ে উঠেছে। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন সন্ত্রাস ও জঙ্গীগোষ্ঠীকে পাকিস্তান দীর্ঘকাল মদদ দিয়ে আসছে। আল কায়েদা, লস্কর-ই-তৈয়বা, জইশ-ই-মোহাম্মদসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর পেছনে রয়েছে পাকিস্তানের মদদ। আর পাকিস্তানের কারণেই ভারত, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানে জঙ্গীবাদের ঝুঁকি বাড়ছে। রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমসের এক সংবাদ বিশ্লেষণে উঠে এসেছে- আইএসসহ বিভিন্ন জঙ্গীগোষ্ঠীর উত্থানে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর হাত রয়েছে এই তথ্য। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সিরিয়া, ইরাক ও লিবিয়ায় তৎপর জিহাদীগোষ্ঠী আইএসসহ বিশ্বের বিভিন্ন জিহাদীগোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। গত মাসেই পেশোয়ারে জঙ্গী হামলা আবারও বিশ্বব্যাপী সংবাদ শিরোনাম হয়েছিল। তার কিছুকাল আগে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট তার এক ভাষণে অত্যন্ত স্পষ্ট করেই বলেছেনÑ পাকিস্তানই সন্ত্রাসবাদের স্বর্গ। ওবামার ভাষণে আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বের দাবিকে ছাপিয়ে উঠে আসে সন্ত্রাসবাদের কথা। তিনি মনে করেন, আগামী এক দশকে আফগানিস্তান, পাকিস্তানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই এই অস্থিরতা চলবে। সন্ত্রাসবাদীদের নতুন স্বর্গ হয়ে উঠবে পাকিস্তান। আল কায়েদা এবং আইএস যে সরাসরি আমেরিকার বিপদের কারণ হতে পারে সেই শঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি। বিগত কয়েক দশকের বিশ্ব পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, পাকিস্তান ও সন্ত্রাসবাদ ক্রমান্বয়ে সমার্থক হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বিগত কয়েক বছর ধরে বর্বর দেশটির জঙ্গীবাদী কর্মকাণ্ড পরিচালনার পরিধি বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বারবার বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। ভারতও অনেক দিন ধরেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ করে আসছে। পাকিস্তানে জঙ্গীরা এখন অত্যন্ত সক্রিয়। পাকিস্তানভিত্তিক নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা বাংলাদেশকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করে আসছে। ভূ-রাজনীতির কারণেই পাকিস্তানী রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থা এতে ইন্ধন দিয়ে আসছে। লস্কর-ই-তৈয়বার সদস্যরা ভারতীয় জাল রুপীর যে ব্যবসা চালিয়ে আসছে তাতে বাংলাদেশকে ব্যবহার করা হচ্ছে ট্রানজিট হিসেবে। ইতোমধ্যে ভারতীয় জাল রুপীসহ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও র‌্যাবের হাতে গত ৫ বছরে অর্ধশতাধিক পাকিস্তানী গ্রেফতার হয়েছে। এটা সত্য যে, পাকিস্তানে অধিকাংশ সন্ত্রাসী হামলা ও উপদলীয় খুন ধর্মীয় মতাদর্শ উদ্বুদ্ধ। তালেবান ও অন্য জঙ্গীগোষ্ঠীগুলো ‘শরিয়া এবং ইসলামের’ নামে তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম জায়েজ করে। এর উল্লেখযোগ্য নজির হচ্ছে, নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন তেহরিক-ই-তালিবান। পাকিস্তান আগের মতো এবারও এক ফেসবুক পোস্টে এ হামলার দায় স্বীকার করেছে। ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীদের মগজ ধোলাই করা হয়েছে, তাদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। দারিদ্র্য, বেকারত্ব, জিহাদের কল্পনা ও ইসলামী মৌলবাদী গোষ্ঠীর ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে তরুণরা আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীতে পরিণত হচ্ছে। মসজিদ ব্যবহার করে উপদলীয় ঘৃণা ছড়াচ্ছে, সহিংসতা উসকে দিচ্ছে। জঙ্গীবাদ পাকিস্তানের মাদ্রাসা ও মসজিদে তার ছায়া বিস্তার করেছে। এর বিরুদ্ধে প্রবল বিশ্বচাপ বজায় রাখার বিকল্প নেই। দেশে দেশে যাতে তারা জঙ্গীবাদের ছায়া বিস্তার করতে না পারে সেজন্য সজাগ সতর্ক থাকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।
×