ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ছে রেলের ভাড়া

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বাড়ছে রেলের ভাড়া

মশিউর রহমান খান ॥ যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে উভয় ক্ষেত্রেই বাড়ানো হয়েছে রেলের ভাড়া। ২০১২ সালের পর মাত্র ৩ বছর পরই এ ভাড়া নতুন করে নির্ধারণ করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এর আগে দীর্ঘ ২০ বছর পর ২০১২ সালে রেলের ভাড়া বাড়ানো হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ের আয়-ব্যয়ের পার্থক্য কমাতে ও যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি করতেই নতুন করে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। পুনর্নির্ধারিত এ ভাড়া দূরত্ব, স্টেশন, বিভিন্ন শ্রেণীভেদ নির্ধারণের পর এ মাসের ২০ তারিখ থেকেই কার্যকর করা হতে পারে বলে রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন। রেলপথ মন্ত্রণালয় ভাড়া বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠালে গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী তাতে অনুমোদন দেন। পরে গত রবিবার রেলপথ মন্ত্রণালয় ভাড়া বৃদ্ধি সংক্রান্ত সরকারী আদেশ (জিও) জারি করে। মন্ত্রণালয় একই সঙ্গে ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অতি দ্রুত কার্যকর করতে বাংলাদেশ রেলওয়েকে নির্দেশ দেয়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নির্দেশ অতি দ্রুত বাস্তবায়নে ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণের শর্তের কারণে এখন থেকে প্রতিবছর শুরুর দিকে ট্রেনের ভাড়া বাড়াতে ট্যারিফ রিফর্ম পলিসি প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ পলিসি বাস্তবায়নে অনুমোদন দিয়েছেন। ফলে এখন থেকে আগের অর্থবছরের তুলনায় শেষ হওয়া অর্থবছরে যে পরিমাণ ব্যয় বাড়বে সে অনুপাতে ভাড়া বাড়ানো হবে। রেলসূত্র জানায়, রুটভেদে ৭ থেকে ৯ শতাংশ পর্যন্ত ভাড়া বাড়ছে। এর পাশাপাশি ট্রেনে ভ্রমণের ন্যূনতম ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। প্রতিটি শ্রেণীতে ন্যূনতম ভাড়া ৫-১০ টাকা হারে বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়া পণ্য ও কন্টেনার পরিবহনে ভাড়া বাড়ছে ৭-৯ শতাংশ হারে। সূত্র আরও জানায়, বিভিন্ন রুটে গড়ে ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে। তবে দূরত্ব ও শ্রেণীভেদে ভাড়ার হারে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। সাধারণ আসনের ভাড়া তুলনামূলক কম ও এসির ভাড়া বেশি হারে বাড়ছে। একই হারে বাড়ছে রেলে পণ্য ও কন্টেনার পরিবহন ভাড়াও। তবে ট্রেনের ভাড়া বাসের চেয়ে তুলনামূলক কম থাকবে। রেলওয়ের তথ্যমতে, নতুন হার কার্যকর হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে শোভন শ্রেণীর ভাড়া ২৬৫ থেকে বেড়ে হবে ২৮৫ টাকা। শোভন চেয়ারে ভাড়া ৩২০ টাকার স্থলে হবে ৩৪৫ টাকা, এসি চেয়ার ৬১০ টাকার স্থলে ৬৫৬ টাকা, এসি সিট ৭৩১ টাকার স্থলে ৭৮৮ ও এসি বার্থে ১ হাজার ৯৩ টাকার স্থলে ১ হাজার ১৮৯ টাকা। ঢাকা-খুলনা রুটে শোভন শ্রেণীর ভাড়া ৩৯০ থেকে বেড়ে হবে ৪২০ টাকা, শোভন চেয়ার ৪৬৫ থেকে ৫০৫, এসি চেয়ার ৮৯১ থেকে ৯৬১, এসি সিট ১ হাজার ৭০ থেকে ১ হাজার ১৫৬ ও এসি বার্থের ভাড়া ১ হাজার ৫৯৯ থেকে বেড়ে হচ্ছে ১ হাজার ৭৩১ টাকা। ঢাকা-সিলেট রুটে শোভন শ্রেণীর ভাড়া হবে ২৬৫ টাকা, শোভন চেয়ার ৩২০, এসি চেয়ার ৬১০, এসি সিটে ৭৩৬ ও এসি বার্থে ১ হাজার ৯৯ টাকা। ঢাকা-রাজশাহী রুটে উল্লিখিত শ্রেণীগুলোর ভাড়া হবে যথাক্রমে ২৮৫, ৩৪০, ৬৫৬, ৭৮২ ও ১ হাজার ৬৮ টাকা। অর্থাৎ ভাড়া বাড়ছে সাড়ে ৭ থেকে ৯ শতাংশ। অন্যান্য রুটেও প্রায় একই হারে বাড়ছে রেলের ভাড়া। রেলওয়ের তথ্যমতে, ২০ বছর পর ২০১২ সালের অক্টোবরে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানো হয়। সেসময় সেবার মান না বাড়িয়ে ভাড়া বাড়ানো নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে রেল কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরের বর্ধিত ভাড়া ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখ থেকে কার্যকর করা হতে পারে। তবে কার্যকরের তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। রবিবার রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা জিওতে যত দ্রুত সম্ভব নতুন ভাড়া কার্যকরে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। সূত্র জানায়, ২০১২ সালের অক্টোবরে নতুন ভাড়া কার্যকরের আগে ট্রেনের কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া ছিল ২৪ পয়সা, যা বেড়ে হয় ৩৬ পয়সা। নতুন ভাড়া কার্যকর হলে তা বেড়ে হবে ৩৯ পয়সা। জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন বৃদ্ধি এক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এদিকে গত অর্থবছর রেলওয়ে ৯০০ কোটি টাকা লোকসান করে। তবে ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হলে লোকসান ৫০ কোটি টাকা কমবে। রেলসূত্র জানায়, ভাড়া বৃদ্ধিতে তথ্য গোপন করেছে রেলওয়ে। কারণ ট্যারিফ পলিসিতে লোকসান কমানো ও আয়-ব্যয় অনুপাত স্থিতিশীল রাখতে প্রতিবছর ভাড়া বাড়ানোর প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে বেতন-ভাতা বাবদ ২০১৩-১৪ অর্থবছর রেলওয়ের ব্যয় কমলেও তা বাদ দিয়ে শুধু জ্বালানি ও মেরামত ব্যয় বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৩-১৪ অর্থবছরে জ্বালানি বাবদ ১৭ কোটি ৫৩ লাখ ও মেরামত বাবদ ২৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয় বেড়েছে। তবে বেতন-ভাতা খাতে ব্যয় ৫৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা কমেছে। এ হিসাবে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ব্যয় কমেছে ১২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। অথচ বেতন-ভাতা বাদ দিয়ে ৪৫ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির অনুপাতে ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের আয়-ব্যয়ের পার্থক্য কমাতে ও যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধিতে রেলপথ মন্ত্রণালয় রেলের যাত্রী পরিবহন ও পণ্য পরিবহনে নতুন করে ভাড়া বৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অতি দ্রুত এ ভাড়া কার্যকর করতে রেলওয়েকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে আমরা কাজ করছি। পুনর্নির্ধারিত এ ভাড়া দূরত্ব, স্টেশন, বিভিন্ন শ্রেণীভেদ নির্ধারণের পর আশা করি চলতি মাসের ২০ তারিখ থেকেই কার্যকর করা সম্ভব হবে। বিভিন্ন রুটে গড়ে ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে। তবে দূরত্ব ও শ্রেণীভেদে ভাড়ার হারে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। জিও অনুযায়ী সাধারণ আসনের ভাড়া তুলনামূলক কম ও এসির ভাড়া বেশি হারে বাড়ছে। রেলে পণ্য ও কন্টেনার পরিবহন ভাড়াও একই হারে বাড়ছে। এর মাধ্যমে রেলের আয়-ব্যয়ের পার্থক্য কিছুটা হলেও কমবে। তাছাড়া বর্তমানের তুলনায় সেবার মানও বাড়ানো সম্ভব হবে।
×