ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে অর্থমন্ত্রী

দুর্বৃত্তের দেশ পাকিস্তান বাংলাদেশের পাওনা স্বীকারই করে না

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

দুর্বৃত্তের দেশ পাকিস্তান বাংলাদেশের পাওনা স্বীকারই করে না

সংসদ রিপোর্টার ॥ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, পাকিস্তান দুর্বৃত্তদের দেশ। তাদের কাছে বাংলাদেশের সম্পদ পাওনা আছে সেটাই তারা স্বীকার করে না। এই অবস্থায় আমাদের সম্পদ ফিরিয়ে দিতে তাদের মানসিকতার পরিবর্তন আদৌও হবে কিনা তা ভবিষ্যত বলে দেবে। সোমবার বিকেলে জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ কথা বলেন। সরকারদলীয় সংরক্ষিত সংসদ সদস্য ফজিলাতুননেসা ইন্দিরার সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় একজন আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি কোন দেশের পক্ষেই কাজ করেননি। তখন অনেক সম্পদ বিভাজন হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেভাবে বিভাজন হয়নি। তবে আমাদের সঙ্গে তাদের (পাকিস্তানের) যখন কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন হয়, তখন থেকেই আমরা পাওনা আদায়ের চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু তারা স্বীকারই করে না, যে আমাদের সঙ্গে তাদের দেনা-পাওনার হিসাব রয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ভুট্টো সাহেব বাংলাদেশে আসলে তাকে বিষয়টি জোরালোভাবে জানানো হয়েছিল। তখন আমি (আবুল মাল আবদুল মুহিত) ডেলিগেট ছিলাম। তখন দেখেছি ভুট্টো কোন কথা বলেননি। পরবর্তীতে ওআইসি আমাদের দেনা-পাওনার বিষয়ে আলোচনা করতে সহযোগিতা করেছে। আমাদের চেষ্টা সব সময়ই আছে। তবে আমাদের সম্পদ ফিরিয়ে দিতে মানসিকতার যে পরিবর্তন দরকার, সেই মানসিকতা ওই দুর্বৃত্ত দেশের হবে কিনা তা বলা কঠিন। সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার প্রশ্নের জবাবে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বিদ্যমান আইনে জঙ্গী অর্থায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যাংক বা অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানের তালিকা জনসম্মুখে প্রকাশের সুযোগ নেই। তবে কোন ব্যাংক ও অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জঙ্গী অর্থায়নের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে আইনানুযায়ী আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে প্রেরণ করা হয়ে থাকে। পদ্মা সেতুতে ভারত-জাপানের দেড় হাজার কোটি যোগান ॥ সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজের প্রশ্নোত্তরে অর্থমন্ত্রী জানান, পদ্মা সেতু নির্মাণে সর্বশেষ অনুমোদিত ডিপিপি অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল ছাড়াও এক হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা জাপান ও ভারতের যোগান থাকছে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে সর্বশেষ অনুমোদিত ডিপিপি অনুযায়ী মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। যার মধ্যে ২৭ হাজার ১২৮ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল হতে যোগান দেয়া হচ্ছে। অবশিষ্ট অর্থের মধ্যে জাপানী ঋণ মওকুফ তহবিলের (জেডিসিএফ) ৩০০ কোটি টাকা এবং ভারত সরকারের অনুদান থেকে এক হাজার ৩৬৫ কোটি টাকার যোগান দেয়া হয়েছে। সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের প্রশ্নোত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ২০০২-২০০৬ সালে মোট ১৯ হাজার ৩৩৩ দশমিক ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স এসেছিল। আর বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রথম ৫ বছর এবং দ্বিতীয় মেয়াদের দুই বছরসহ মোট সাত বছরে প্রবাসী রেমিটেন্সের পরিমাণ ৯২ হাজার ১৫৯ দশমিক ২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। জনগণ পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায় নাÑ হানিফ ॥ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেছেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানী দূতাবাসের অনেকে দেশবিরোধী অপকর্মে লিপ্ত। বাংলাদেশের জনগণ এই দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায় না। তাই আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী তাদের সঙ্গে যেটুকু সম্পর্ক না রাখলেই নয় সেটুকু সম্পর্কই রয়েছে। সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মোজাফফর আহমেদ মিলনায়তনে ‘বীরাঙ্গনার আত্মকথন’ প্রামাণ্য গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ২০ বীরাঙ্গনার আত্মকথা নিয়ে প্রকাশিত একাত্তর প্রকাশনীর এই গ্রন্থটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ ফেলো শিল্পী বেগম কর্তৃক সংকলিত ও সম্পাদিত হয়েছে। প্রকাশিত গ্রন্থটির মুখবন্ধ লিখেছেন এমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান এবং প্রাথমিক পর্যালোচনা করেছেন এমিরেটাস অধ্যাপক ড. এএফ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। দালাল আইন বন্ধ করে রাজাকারদের রক্ষা করা, গোলাম আজমকে নাগরিকত্ব দেয়া, জামায়াতের রাজনীতি বৈধ করা ও বীরাঙ্গনাদের পুনর্বাসন কেন্দ্র বন্ধে জিয়াউর রহমানের ভূমিকার সমালোচনা করে হানিফ বলেন, যাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই ছিল, জেনারেল জিয়া ক্ষমতা দখল করে তাদেরই পুনর্বাসিত করেছেন। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে উনি স্বাধীনতাবিরোধী ও পাকিস্তানী ভাবধারায় বিশ্বাসী। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ছিলেন না বরং বিশ্বাসঘাতক ছিলেন। আওয়ামী লীগের এ নেতা আরও বলেন, যুদ্ধ চলাকালে জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের কর্নেল আসলামের সঙ্গে চিঠি আদান-প্রদান করতেন। আসলাম তাকে লিখেছিলেন, তোমার কাজ ভাল চলছে, চালিয়ে যাও। কখন একজন শত্রু এভাবে চিঠি লিখে? আসলে জিয়া ছিলেন পাকিস্তানের এজেন্ট। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াও পাকিস্তানী ক্যান্টেনমেন্টে যুদ্ধের সময় আরামে দিন কাটিয়েছেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন না, তাই ৪৪ বছর পর তিনি শহীদদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এটি মুখ ফসকে বলেননি, সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ। এ সময় তিনি গত ৪৪ বছরে বীরাঙ্গনারা অবহেলিত ছিলেন বলেও মন্তব্য করেন। সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী বাঙালী জাতির ওপর বর্বর গণহত্যা চালায় এবং অসংখ্য নারীকে নির্যাতন করে। হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা এখনও সেই নির্যাতনের চিহ্ন বহন করে চলেছেন। বাংলাদেশে গণহত্যা ও নির্যাতনের কথা অস্বীকার করায় কঠোর ভাষায় পাকিস্তানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, একাত্তরের বাংলাদেশে গণহত্যা ও নির্যাতনের কথা পাকিস্তানের অস্বীকার করা এক বর্বরতারই নিদর্শন। মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানান তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মুনজুরুল ইসলাম বলেন, গ্রন্থটিতে কোনরকম পরিমার্জনা ছাড়াই বীরাঙ্গনাদের ভেতরের কথা তুলে আনা হয়েছে। এটিই বইটির শক্তিশালী দিক। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা চলছে। এক্ষেত্রে নায়ককে খলনায়ক, আর যুদ্ধে যার সামান্য অবদান তাকে মূল নায়ক বানানোর চেষ্টা চলছে। ফলে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবকে দ্বিধাগ্রস্ত করার যে অপচেষ্টা, তা রোধ করতে বইটি ভূমিকা রাখবে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এমএম আকাশ, মফিদুল হক, গ্রন্থকার ড. শেখ আবদুস সালাম, অধ্যাপক মফিজুর রহমান, অধ্যাপক শাওন্তী হায়দার, ঢাবি এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রকীব উদ্দীন আহমেদ প্রমুখ।
×