ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মারুফ রায়হান

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ঢাকার দিনরাত

ভাষার মাসে কিছু কথা না বললেই নয়। একবারে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে- এটা বড় বেশি আশাবাদীর লক্ষ্মণ। একবারে কিছুই হয় না, তাই বার বার বলা দরকার। পথে পথে বাংলা ভাষার প্রতি উপেক্ষা, অপ্রেম বুঝতে অসুবিধে হয় না। বেশিরভাগ গণপরিবহন বাস-মিনিবাসের নাম বাংলা ভাষায় নয়। আরবী বা ইংরেজী ভাষায়। অবশ্য বাংলা বর্ণমালা ব্যবহার করেই লেখা হয় সেসব; যেমন ভিআইপি, স্কাইলাইন, আবাবিল, জাবালে নূর ইত্যাদি। তবু তার সমান্তরালে বিহঙ্গ, বলাকা, অনাবিল এসব বাংলা নাম বাসের গায়ে দেখে ভাল লাগে। তবে দোকান বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নাম এখনও ইংরেজীতেই রাখা হচ্ছে। বিদেশের সঙ্গে বাণিজ্য চালানোর সুবিধার্থে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ইংরেজীতে রাখার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন অনেক ব্যবসায়ী। বলাবাহুল্য এটি সুযুক্তি হতে পারে না। ইংরেজী ভাষা যেসব দেশের প্রধান ভাষা সেসব দেশের কথা আলাদা, তারা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের নামকরণের ক্ষেত্রে ইংরেজী ভাষাকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে। কিন্তু ফ্রান্স, জার্মানি, চীন, কোরিয়া, জাপান প্রভৃতি দেশের যেসব বেসরকারী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে ব্যবসা করছে সেসব নাম কি ইংরেজীতে রাখা হয়েছে? পণ্যের নামকরণের (ব্র্যান্ডিং) ক্ষেত্রেও ওইসব দেশের নাগরিকরা স্ব স্ব ভাষার ওপরই ভরসা রাখেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নয়, কেবল দেশের ভেতর ব্যবসা-বাণিজ্য করছে যেসব প্রতিষ্ঠান সেগুলোর নাম ইংরেজীতে রাখারই বা যুক্তি কী? এখন আবার হিন্দী ভাষায়ও দোকানপাটের নাম রাখার চল শুরু হয়েছে। এটাও মাতৃভাষার প্রতি অবমাননা প্রদর্শনেরই নামান্তর। বাংলা ভাষার মিত্র না বাড়লেও বাড়ছে এজাতীয় শত্রুর সংখ্যা। বাংলাপ্রেম ভাল, কিন্তু সেই প্রেমে খাদ মিশে যায় তখনই যখন ভাষাটি অশুদ্ধ উচ্চারণে, ভুল বানানে উপস্থাপিত হয়। বাংলায় প্রতিষ্ঠানের নামফলক (সাইনবোর্ড) একেবারে কম নয়। একটু লক্ষ্য করলেই ভুল বানানের ছড়াছড়ি চোখে পড়বে। এসব অসঙ্গতি নিয়ে সেই কবে থেকেই লেখালেখি চলছে। ব্যঙ্গবিদ্রƒপ কৌতুক চলছে। বিটিভির ইত্যাদি অনুষ্ঠানে কতই না নাট্যদৃশ্য ও প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছে। তবু এসব বন্ধ হয়নি। ভাষার মাস এসব অনিয়ম ও অসঙ্গতির দিকে আমাদের নতুন করে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মাতৃভাষাও শেখা ও চর্চার ব্যাপার। তার শুদ্ধতা রক্ষা করা যে জরুরী, এ জন্মদাত্রীর সম্মান রক্ষার সঙ্গে তুলনীয়- এই বোধটুকু জাগানোর জন্য লেখক-সাংবাদিক এবং শিক্ষকদের বারবার উদ্যোগী হতে হবে। বাঙালী মায়ের সন্তান হলেই যে বাংলা ভাষার ব্যাপারে আমি দক্ষতা অর্জন করে নিয়েছি এমনটা ভাবলে বড় ভুল হবে। অভিধান বা ডিকশনারির কয়েকটা পাতা উল্টালেই বোঝা যায় আমাদের বাংলা শব্দের সঙ্গে পরিচয়ের গভীরতা কতখানি। এই লেখা যাঁরা পড়ছেন, তাঁদের বহুজনের ঘরে হয়ত বাংলা অভিধান নেই। তাঁদের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাই, হাতের কাছে একটি বাংলা অভিধান রাখুন। আপনার অতিব্যস্ত সময় থেকে আলাদাভাবে সময় বের করার কথা বলছি না। কাজের ফাঁকেই মাঝেমধ্যে সেটি হাতে তুলে নিন। পাতা উল্টে শব্দগুলো দেখুন। তার অর্থ খেয়াল করুন। বানানটাও দেখে নিন। আমার বিশ্বাস এভাবে কিছুদিন চললে এটা অভ্যাসে পরিণত হবেই। বাংলা ভাষার জন্য ভালবাসা এভাবেও গভীর রূপ নিতে পারে। মাতৃভাষা জাদুঘর অমর একুশে ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে ইউনেসকো ঘোষিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে, এটা আমরা বহুলোকই জানি। তবে ঢাকাতেই যে রয়েছে মাতৃভাষা জাদুঘর, সে খবর অনেকেরই জানা নেই। দেখতে দেখতে এই জাদুঘর অর্ধদশক অতিক্রান্ত করেছে। এটাও হয়ত জানানো দরকার, ঢাকার সেগুনবাগিচায় প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ইউনেসকোর দ্বিতীয় শ্রেণীর সংগঠনের মর্যাদা লাভ করেছে। ভবনের নিচতলায় রয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা জাদুঘর। শিল্পকলা একাডেমির বিপরীতেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। শুক্র, শনি এবং সরকারী ছুটির দিনগুলো ছাড়া সপ্তাহের পাঁচ দিন খোলা থাকে সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। জাদুঘর সবার জন্য উন্মুক্ত, কোন টিকেট লাগে না। জাদুঘর মানেই চমক জাগানো সব প্রাচীন নিদর্শন। এখানে আছে তেমনি বহু কিছু। মিসরের প্রাচীন হায়ারোগ্লিফ লিপির ছবি, পৃথিবীর প্রধান ভাষা পরিবারসমূহের পরিচিতি। রয়েছে মহাদেশগুলো অনুসারে বিশ্বের ৬৬ দেশের ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্যের সচিত্র বিবরণ। এটিকে ভার্চ্যুয়াল জাদুঘরে রূপান্তরের কাজ চলছে। তাতে সব ভাষার বিস্তারিত ইতিহাস, পরিচিতি ও অন্যান্য তথ্য থাকবে। এর পাশাপাশি জাদুঘরের সঙ্গে একটি আর্কাইভ করা হচ্ছে। সেখানেও বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাসংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণ করা হবে। ভাষা আন্দোলন জাদুঘর বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের দোতলায় ‘ভাষা আন্দোলন জাদুঘর’। ভাষা-আন্দোলন জাদুঘর পৃথিবীর আর কোন দেশে আছে কি? থাকার কথা নয়। এই জাদুঘরে ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, স্মারকপত্র, ব্যঙ্গচিত্র, চিঠি, প্রচারপত্র, পাণ্ডুলিপি, পুস্তক-পুস্তিকার প্রচ্ছদ এবং ভাষা শহীদদের স্মারকবস্তু সংরক্ষরণ করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য নিদর্শনের মধ্যে রয়েছেÑ ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্র-ভাষা বাংলা না উর্দু’ শীর্ষক পুস্তিকার প্রচ্ছদ, বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ছাত্র-জনতার বিভিন্ন মিছিলের আলোকচিত্র, অগ্রসরমাণ মিছিলকে বাধা প্রদানে সারিবদ্ধ পুলিশ বাহিনী, ঢাকায় রেসকোর্স ময়দানের সমাবেশে বক্তৃতারত মুহম্মদ আলী জিন্নাহর ছবি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রী সংসদের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সম্পর্কে প্রেস বিজ্ঞপ্তি, পত্রিকায় প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১৪৪ ধারা ভাঙার প্রস্তুতি, ভাষা শহীদদের আলোকচিত্র ও পরিচিতি, ভাষা শহীদদের বিভিন্ন স্মারকবস্তু, প্রথম শহীদ মিনার ও প্রভাতফেরির আলোকচিত্র। এই জাদুঘরটি আরও সমৃদ্ধ করার উদ্যোগ নেয়া দরকার। একই সঙ্গে এর প্রচারও চাই। বইমেলায় লাখো মানুষ আসেন, কিন্তু এখানে বিরাজ করে জনশূন্যতা। আহা বসন্ত! ক’দিন ধরেই আমের মুকুলের সুবাসে বাতাস ম ম করছে। আমার বাসায়ও আছে দুটো আম গাছ। গভীর করে নিশ্বাস নিলে সুবাস আত্মায় চলে যায়। আজ সকালে গিয়েছিলাম টিএসসিতে, কাজে। ফিরতি পথে ভিসির বাসা পার হওয়ার পর পরই একটা কোকিল গলা খুলে ডাকছিল। সেই ডাকে এক লহমায় ফাগুন যেন আমার রিকশায় উঠে এলো! তার উপরে আজ সকালে আমাকে কেমন বেকুব বানিয়ে দিল লালে লাল (ফাগুন আসার আগেই) হয়ে নীলক্ষেত মোড়ে দাঁড়িয়ে রাখা অদ্ভুত সুন্দর এক শিমুল ফুলের গাছ। নীলক্ষেতের মোড়ে রোড ডিভাইডারের ভেতর স্বল্প মাটির ওপর বেড়ে ওঠা এই গাছ দিনমান কর্কশ হর্নের ভেতর বেঁচে থেকে কী করে পেল এমন প্রাণশক্তি! আর সকল গাছে যখন সবে কুঁড়ি আসছে, তখন এই গাছ এত অগ্রিম! চিকন আর ছোট্ট একটা গাছ! অথচ প্রতিটা ডালে ডালে তার ফুল। নীলক্ষেত মোড় ছুঁয়ে যত মানুষ যায়, এই রং সকলের মর্মে লাগুক। ওপরের কথা কয়টি আমার নয়, এক তরুণ কবির। দুদিন আগে ফেসবুকে তিনি এ স্ট্যাটাস দেন। বসন্ত বোধহয় এসেই গেল। ভাষার মাসের প্রথম সন্ধ্যায় ওই এলাকায় গিয়েছিলাম। টিএসসির উত্তর-পূর্ব কোনটায় এক চুড়ি বিক্রেতার ডালিতে রকমারি চুড়ির ভেতরেও কি বসন্তের রঙ ছিল না! পরে আর দেখা পাইনি ওই চুড়িপসারিনীর। বইমেলার নিরাপত্তার প্রয়োজনে টিএসসি এলাকায় আর কোন দোকানিকেই বসতে দেয়া হচ্ছে না। বইমেলার কথা যখন উঠেই গেল তখন অল্প করে কিছু বলতেই হচ্ছে। মানুষে গিজগিজ ভারাক্রান্ত রাজধানীর যোগ্য মেলা হয়েছে এটি! দোকানে দোকানে সয়লাব মেলা। আসলে বইয়ের বাজার বললেই সঙ্গত হবে। মেলা আর বাজারের মধ্যে পার্থক্য বিস্তর। বিশেষ করে সেই মেলা যদি হয় বইয়ের মতো একটি বিশদ জ্ঞান ও বিপুল আনন্দ উপকরণের মেলা। সবজির বাজারে কৃষকদের দেখা মেলে না, বইয়ের মেলায় বইয়ের রচয়িতারা আসেন। তাঁদের দেখা পেতে চান যারা বইয়ের পাঠক বা ক্রেতা। তাই বইয়ের মেলা দাবি করে অনেক কিছু। একই সঙ্গে এটাও মনে রাখা চাই যারা বই কিনতে মেলায় আসেন, কিংবা ধরা যাক শুধু বেড়াতেই আসেন, তাদের ঘুরে বেড়ানো তথা মেলায় সময় কাটানো স্বস্তিকর ও আনন্দময় হচ্ছে কিনা। ষষ্ঠ দিনে মেলায় ঘোরার সময় হঠাৎ এক শিশুর চিৎকার কানে এলো। শিশুটি তার মায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে অর্ধ ফুট ব্যাসের একটি গর্তের দিকে। স্টল বানানোর সময় ওই গর্ত খোঁড়া হয়েছে, পরে আর বন্ধ করা হয়নি। একইভাবে মেলার উঁচুনিচু এবড়ো থেবড়ো পথে হাঁটতে হাঁটতে ইটের খণ্ডে বাধা পেয়ে মেলায় শয্যাগ্রহণ করাও যেন স্বাভাবিক বলেই মনে হচ্ছে। ধুলোর দাপটের কথা প্রতিদিনই লেখা হচ্ছে কাগজে, মেলায় আগত লোকজনও বিরক্তি প্রকাশ করছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষের রা নেই, তারা কুম্ভকর্ণ হয়ে আছেন। আরেকটা অসুবিধার কথা বলি। ধরুন আপনি ‘মহুয়া’ নামে কোন প্রকাশনীর স্টল খুঁজবেন। মেলায় তথ্যকেন্দ্র আছে, সেখানে তালিকা আছে। তবে সে তালিকায় স্টলের নাম আদ্যক্ষর অনুসারে নয়। ফলে শত শত নাম থেকে আপনাকে নির্দিষ্ট নামটি খুঁজে নিতে হবে। এই যে এত অনিয়ম ও অদক্ষতা, উপেক্ষা ও দায়িত্বহীনতা- এর প্রতিকার আপনি কার কাছে চাইবেন? শিল্পের উৎসব ঢাকায় সদ্য সমাপ্ত হলো দক্ষিণ এশিয়ার শিল্পী, শিল্পানুরাগী ও শিল্প সংগ্রাহকদের মিলনমেলা ঢাকা আর্ট সামিট। এ নিয়ে প্রতিবেদন বেরিয়েছে কাগজে, গতকাল জনকণ্ঠ সম্পাদকীয়ও লিখেছে এ আয়োজন নিয়ে। তাই বিস্তারিত না বললেও চলে। অন্তর্জালে জিজ্ঞেস করায় দ্য ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর স্কলার ও ভিজিটিং আর্টিস্ট ঢাকার রফি হক ঢাকা আর্ট সামিট সম্পর্কে যা জানালেন সেটাই বরং এখানে তুলে দেয়া যাক- ‘শিল্পকর্ম নিয়ে যে কোন বড় আয়োজনকে আমি স্বাগত জানাই। এটা কোন মাপের হচ্ছে সেটি বড় কথা নয়, বড় কথা নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে করে তরুণ প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পীরা সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত হবে, উপকৃত হবে। সব সময় একটি কথা আমার মনে হয়, এবং কথাটি জরুরী যে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বা সরকারীভাবে একাধিক কনটেমপোরারী আর্ট মিউজিয়াম হলে দেশ উপকৃত হবে। এবং তখনই কেবল আন্তর্জাতিক পরিসরে আমাদের আর্ট বাইরে পরিচিত হবে। আর্টের সঙ্গে দেশের স্বাস্থ্যবান অর্থনীতির যোগ রয়েছে। আর্টের ক্ষেত্রে আমাদের কিছু ব্যক্তিগত অর্জন আছে। কিন্তু সামগ্রিক অর্জন নেই বললেই চলে। কারণ বহির্বিশ্বের শিল্পাঙ্গন বাংলাদেশে আর্টের সঙ্গে পরিচিত নয়। এর মূল কারণ আমাদের শিল্পলেখক নেই, কিউরেটরও নেই। বাইরের দেশের কিউরেটররা যারা আসেন নানা উপলক্ষে, তারা মূলত বেড়াতে আসেন। আর্ট কিউরেট করতে নয়। এগুলো কাটিয়ে উঠলে যে কোন আর্টের বড়-সড় আয়োজন আরও অর্থময় হয়ে উঠবে। তখন সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশ আর্ট আন্তর্জাতিক পরিচয় পাবে বলে বিশ্বাস করি। ঢাকা আর্ট সামিটের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাবে বলে বিশ্বাস করি।’ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ [email protected]
×