ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জঙ্গীবাদের ভ্রান্তি

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

জঙ্গীবাদের ভ্রান্তি

শিক্ষার আলো যদি শিক্ষার্থীর মনকে প্রজ্বলিত না করে তবে বিভ্রান্তির চোরাবালিতে তাকে হাবুডুবু খেতে হয়। অন্ধকার তাড়া করে আরও অন্ধকারের দিকে। সে বেছে নেয় নিজের ধ্বংস। আর সেই ধ্বংসের ঢেউ আঘাত হানে পরিবার, সমাজ, দেশ এবং গণমানুষের জীবনে। আর তার ভয়াবহতা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষা মানুুষের জীবনকে আলোকিত করে। তার হৃদয়ে-মননে, চিন্তা-চেতনায়, আচার-আচরণে, সভ্য-ভব্যতায় এক নয়া দিগন্তের উন্মোচন করে। যে দিগন্তজুড়ে সম্পন্ন মানুষ হয়ে ওঠার গরিমা প্রসারিত হয়। কিন্তু শিক্ষা যদি সঙ্কুচিত করে মন, মেধার বিকাশ না ঘটায়, তবে সেই শিক্ষা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে এক অমানবিক চেতনার বিস্তার ঘটায়। বাংলাদেশের হৃদয়জুড়ে শিক্ষা, শান্তি, প্রগতির যে ধারা দীর্ঘকাল ধরে প্রবহমান, তাতে ছেদ পড়ার কার্যকরণ অনুসন্ধান করা জরুরী। কেন তরুণ শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক জীবন ছেড়ে অস্বাভাবিকতার পথ ধরে হাঁটছে, তার কার্যকারণ সূত্র জানা গেলে সমাধানের পথ বেরিয়ে আসে। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যে জঙ্গীবাদের বিকাশ ও বিস্তার ঘটেছে, তার ঢেউ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে বলেই দেখা যায়, পশ্চিমা দেশের তরুণরাও এতে আকৃষ্ট এবং আকর্ষিত হয়ে সে পথে পা বাড়াচ্ছে। পাশ্চাত্য জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য ছেড়ে অন্ধকারের গহ্বরে নিমজ্জিত হচ্ছে। শক্তির অপব্যবহার তাদের দস্যুবৃত্তি, জঙ্গীবৃত্তিতে ধাবিত করেছে। শক্তিমদে মত্ত হয়ে জঙ্গীবাদ মানবতাবিরোধী, ধর্মবিরোধী তৎপরতাকে সামনে এনে বিশ^জুড়ে অশান্তির দাবদাহ ছড়াচ্ছে। মানুষের জীবনকে যারা কানাকড়ির মূল্যও দেয় না, তারাই ধর্মের নামে, বর্ণের নামে নিরীহ, শান্তিপ্রিয় মানুষকে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করছে। আর এসবই করছে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নামে, অথচ এদের কর্মকা-ই ধর্মবিরোধী। মানুষের পরিচয় যে একমাত্র মানুষ হিসেবেই, সে বোধ তাদের নেই। বিশেষ কোন ধর্মাবলম্বী হওয়া সহজ। কিন্তু মানুষ হওয়া বড় কঠিন। ধর্ম আচরণের জিনিস। দৈনন্দিন জীবনে চিন্তায় কর্মে আচরণে সত্যিকারের ধার্মিক মানুষ ক’জন? সে মুখোশ উৎপাটন জরুরী হলেও সহজ নয়। জঙ্গীবাদ নামক যে হায়েনাটি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সর্বত্র, তা ক্রমশ প্রশ্রয় পাচ্ছে। আর এই প্রশ্রয় মানুষের ইতিহাসকে বর্বরতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বঞ্চিত মানুষের সঞ্চিত অসন্তোষ তাতিয়ে দিতে পারলে তা অকস্মাৎ একটা প্রচ- বিস্ফোরণে ফেটে পড়বেই। আর তাতে ধ্বংসের বার্তাই শুধু বইবে। মানব সমাজ আজ এক অন্ধকার যুগের সম্মুখীন। ধর্মীয় মৌলবাদের দুর্লক্ষণ সর্বত্র সভ্যতাকে ব্যঙ্গ করতে চাচ্ছে। সভ্য মানুষরা বাক্যে চিন্তায় কর্মে যুক্তির অনুমোদন মেনে চলে। কিন্তু জঙ্গীবাদ যুক্তিতর্ক কিছুই মানে না। শিক্ষিত মুসলিম সম্প্রদায়ের উচিত এর প্রতিরোধ করা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত, বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ুয়ারা জঙ্গীবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ছে, দেশপ্রেমহীনতা ও সংস্কৃতিহীন পরিবেশ তাকে বিপথে ঠেলে দিচ্ছে। যে কারণে আত্মঘাতী হতেও সে পিছপা হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী আত্মঘাতীরা দোজখে যাবে। ইসলামের নামে সন্ত্রাস সৃষ্টি রোধ করতে হবে। আমরাও তাই চাই। আর এর প্রতিকারের উপায় হচ্ছে সুশিক্ষা, সংস্কৃতিমনস্ক হিসেবে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলা। শিক্ষা যেন আলোকিত মানুষ তৈরি করে, সেই কাজ করা জরুরী।
×