ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভারোত্তোলনে গৌরব বয়ে আনলেন বাংলাদেশের মাবিয়া আক্তার সিমান্ত

সীমান্তর গলায় প্রথম স্বর্ণপদক

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সীমান্তর গলায় প্রথম স্বর্ণপদক

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এবার সাউথ এশিয়ান গেমসের (এসএ গেমস) ভারোত্তোলনে বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা শুরু থেকেই দারুণ নৈপুণ্য দেখাচ্ছিলেন। অবশেষে এই ভারোত্তোলন থেকেই দেশের জন্য প্রথম স্বর্ণপদক এসেছে। গৌরবময় এ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন ৬৩ কেজি ওজন শ্রেণীতে সেরা ভারোত্তোলক হয়ে মাবিয়া আক্তার সিমান্ত। বাংলাদেশের রবিবার দিনটাই ছিল ভারোত্তোলনে সাফল্য দিয়ে মোড়ানো। মাবিয়ার আগেই সকালে মেয়েদের ৫৮ কেজি ওজন শ্রেণীতে রৌপ্য জয় করেন ফুলপতি চাকমা। ১২তম এসএ গেমস শুরু হওয়ার আগে বাংলাদেশ মহিলা ভারোত্তোলন দলের স্বর্ণ জয়ের সম্ভাবনার কথা উড়ছিল দেশের ক্রীড়াঙ্গনে। আলোচনায় ছিল প্রথমবার এসএ গেমসে ভারোত্তোলন ডিসিপ্লিনে মহিলা ক্যাটাগরি সংযুক্ত হয়েছে তাই ভাল কিছু হলে এখানেই হবে। সবার দৃষ্টি যাদের দিকে ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মাবিয়া। অবশেষে তিনিই দেশের জন্য প্রথম স্বর্ণপদক এনে দিলেন। এবার এসএ গেমস নিয়ে কোন ফেডারেশনই নির্দিষ্ট করে তেমন কোন সাফল্য পাওয়ার বিষয়ে জোর গলায় নিশ্চয়তা দিতে পারেননি। সেই নাজুক পরিস্থিতির মধেও মাবিয়া দেশকে একটি গৌরব উপহার দিলেন। গেমসের তৃতীয় দিনে গুয়াহাটির ভোগেশ্বর ইনডোর স্টেডিয়ামে মাবিয়া স্বর্ণ জয়ের সুবাদে উড়ল লাল-সবুজ পতাকা। বিজয় মঞ্চে পদক নেয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আনন্দে কেঁদেই ফেলেছিলেন এ ভারোত্তোলক। আনন্দ অশ্রু ধরে রাখতে পারেননি উপস্থিত অনেক বাংলাদেশীও। মেয়েদের ৬৩ কেজি ওজন শ্রেণীতে স্ন্যাচে ৬৭ ও ক্লিন এ্যান্ড জার্কে ৮২ মোট ১৪৯ কেজি তুলে স্বর্ণ জেতেন সিমান্ত। আর শ্রীলঙ্কার আয়েশা বিনোদিনি ছিলেন অনেক পিছিয়ে। তিনি (৬৩ ও ৭৫) মোট ১৩৮ কেজি তুলে পান রৌপ্য পদক। এছাড়া নেপালের জুন মায়া (৫৫ ও ৭০) মোট ১২৫ কেজি তুলে ব্রোঞ্জ পদক জেতেন। এসএ গেমসে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম স্বর্ণজয়ী মহিলা ভারোত্তোলক মাবিয়ার গলায় সোনার মেডেল পরিয়ে দেন বাংলাদেশ দলের শেফ দ্য মিশন আশিকুর রহমান মিকু। আর ফুল তুলে দেন বাংলাদেশ ভারোত্তোলন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক উইং কমান্ডার মহিউদ্দিন আহমেদ। হাতে ব্যথা ছিল। খেলা নিয়েও সংশয় ছিল মাবিয়ার। তবু মনের জোরে নামেন খেলতে। আর বাংলাদেশকে স্বর্ণ উপহার দিতেই নিজেকে উজাড় করে দেন ২০১৫ সালে অক্টোবর মাসে ভারতের পুনে শহরে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ ভারোত্তোলন চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণপদক জয়ী। স্বর্ণ জয়ের অনুভূতিতে মাবিয়া বলেন, ‘আমার কাছে অবাক লাগছে যে আমি স্বর্ণ জিতেছি। আশা ছিল রৌপ্য বা ব্রোঞ্জ পাব। কিন্তু ভাগ্যক্রমে গোল্ড পেয়ে গেলাম। খুবই ভাল লাগছে যে বাংলাদেশকে একটি সোনার পদক উপহার দিতে পেরেছি। আমার এই সাফল্যেও জন্য ধন্যবাদ জানাই কোচ, ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন স্যার, আমার পরিবারকে।’ মাবিয়া জানিয়েছেন এখন তার লক্ষ্য অলিম্পিক গেমসের কোয়ালিফাইং রাউন্ড এ অংশগ্রহণ। মাবিয়ার আগেই ভারোত্তোলন থেকে বাংলাদেশকে আরেকটি রৌপ্য এনে দেনে ফুলপতি চাকমা। মেয়েদের ৫৮ কেজি ওজন শ্রেণীতে বাংলাদেশের হয়ে রৌপ্য পদক জেতেন তিনি। স্ন্যাচে ৬৩ ও ক্লিন এ্যান্ড জার্কে ৮১ মোট ১৪৪ কেজি তুলে দ্বিতীয় হন তিনি। এ বিভাগে (৮০ ও ১০৭) মোট ১৮৭ কেজি তুলে স্বর্ণ জেতেন স্বাগতিক ভারতের কমলা শ্রেষ্ঠ। আর (৬১ ও ৮১) মোট ১৪২ কেজি তুলে ব্রোঞ্জ পান শ্রীলঙ্কার উমেরিয়া মোহিদীন। এর আগে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ২০১০ সালে মালয়েশিয়াতে কমনওয়েলথ ভারোত্তোলন চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছিলেন চাকমা। এছাড়া ২০১২ সালে নেপালে প্রথম সাউথ এশিয়ান ভরোত্তোলন চ্যাম্পিয়নশিপে রৌপ্য পেয়েছিল ফুলপতি।
×