ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় জাদুঘরে সেমিনার

মসলিনের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:২০, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

মসলিনের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মসলিনের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে। সমাজের সর্বস্তরে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এর ঐতিহ্য সম্পর্কে তরুণ প্রজন্মকে সচেতন করার সঙ্গে সঙ্গে অহঙ্কারের এ ঐতিহ্য কী কারণে হারিয়ে গেছে- তাও জানতে হবে। হারানো সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে বর্তমান সরকার সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি নীতি প্রণয়ের বিষয়টি নিয়েও ভাবছে। আর মসলিনের অর্থনৈতিক গুরুত্বের কথা চিন্তা করে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত তাঁতীদের সার্বিক সহায়তা বৃদ্ধি করতে হবে। সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে এ খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে হবে। বিশ্ববাজারে মসলিনের চাহিদা সম্পর্কেও জরিপ করা যেতে পারে। এছাড়া সংরক্ষণ করতে হবে নক্সার ধরন, ট্রেড মার্কের প্যাটেন্ট। আর এসব বিষয় মাথায় রেখে একসঙ্গে কাজ করলেই মসলিন পুনরুজ্জীবন সম্ভব। রবিবার রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘মসলিনের পুনর্জাগরণ’ শীর্ষক দিনব্যাপী চলা এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। মসলিন প্রদর্শনী ও মসলিন পুনরুজ্জীবন উৎসব-২০১৬ এর অংশ হিসেবে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। দিনব্যাপী মোট চারটি সেশনে এটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, দৃক পিকচার লাইব্রেরি লিমিটেড এবং আড়ংয়ের যৌথ উদ্যোগে এ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী চার পর্বে বিভাজিত সেমিনারটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন ইউনেস্কোর সিইও মিজ বিয়েত্রিচ কালদুন। এ সময় তিনি মসলিন পুনরুজ্জীবনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং কৌশল নির্ধারণের বিষয়ে দৃষ্টিপাত করেন। সেমিনারের প্রথম সেশনে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া। তিনি তার বক্তব্যে দৃক, জাতীয় জাদুঘর, আড়ং এবং শিল্প মন্ত্রণালয়কে যৌথভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। এ সময় তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, মসলিন পুনরুজ্জীবনে সকলের যৌথ প্রয়াস যুক্ত হলে অবশ্যই সফলতা পাওয়া যাবে। এছাড়া নক্সার ধরন, ট্রেড মার্কের প্যাটেন্ট করা প্রয়োজন। দৃকের প্রধান নির্বাহী সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের বর্তমান অবস্থা এবং লক্ষ্য স্থির করে একসঙ্গে কাজ করলেই মসলিন পুনরুজ্জীবন সম্ভব। এখানে গবেষণা ও প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা আমরা কামনা করছি। মূল প্রবন্ধকার মিস রোজমেরী ক্রিল তার প্রবন্ধে মসলিনের ইতিহাস তুলে ধরেন। তার প্রবন্ধে খ্রিঃ পূঃ ছয় হাজার থেকে শুরু করে খ্রিস্টীয় ঊনিশ শতক পর্যন্ত মসলিনের ইতিহাস উঠে এসেছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হামিদা হোসেন বলেন, ঢাকা মসলিন উৎপাদনের অন্যতম মূল কেন্দ্র ছিল। মসলিনের সোনালী অতীতকে ধরে রাখতে একটি টেক্সটাইল মিউজিয়াম স্থাপন করা খুবই দরকার। এ মিউজিয়াম থেকে তাঁতীগণ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গবেষকগণ নানা ধরনের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে মসলিন পুনরুজ্জীবনের ক্ষেত্রে কাজ করতে পারবেন। জামদানি নক্সার শুদ্ধতা বজায় রাখার ব্যাপারেও তিনি গুরুত্বারোপ করেন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল নাসের চৌধুরী বলেন, নোয়াপাড়ায় ৫.৮ একর জায়গায় জামদানি গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। বিসিকের মাধ্যমে জামদানি তাঁতশিল্পীদের উৎসাহিত করার জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এ সময় তিনি তার বক্তব্যে মসলিনের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সরকারের সব রকমের সহায়তার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। সাবেক সিনিয়র সচিব ড. সোহেল আহমেদ বলেন, বিশ্ববাজারে মসলিনের চাহিদা সর্ম্পকে জরিপ করা প্রয়োজন। বিশিষ্ট কারুশিল্পবিদ বিবি রাসেল মসলিন এবং জামদানির মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছেÑ সবাইকে এ বিষয়টি খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন। অন্য তিনটি পর্বেও মসলিনের ঐতিহ্য ও করণীয় সম্পর্কে নানা দিক উঠে আসে। রূপসী গ্রামের বিশিষ্ট জামদানি শিল্পী আবুল কাশেম বলেন, তিনি তার বাবা-মায়ের কাছে দাদা-দাদির মসলিন বোনার গল্প শুনেছেন। তিনি পরম্পরার শিল্পী হিসেবে তার বাবা-মার কাছ থেকে জামদানি বোনা শিখেছেন। তবে তিনি জানান যে, বর্তমানে জামদানি কারিগররা উপযুক্ত মজুরি না পাওয়ায় জামদানি বুনতে চান না। ভালমানের সুতা ও কারিগরের অভাবে উন্নতমানের জামদানি তৈরি করা যাচ্ছে না। তবে তিনি ১২০ কাউন্ট থেকে ১০০ কাউন্টের সুতা দিয়ে উন্নতমানের জামদানি তৈরি করতে পারবেন। এ সময় তিনি সরকারের নিকট ভালমানের সুতা ও মজুরির বিষয়ে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। বিশিষ্ট জামদানি গবেষক মালেকা খান বলেন, ঐতিহ্যবাহী মসলিন ও জামদানি শাড়ি বুননে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারী তাঁতশিল্পীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেনÑ শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল নাসের চৌধুরী, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হামিদা হোসাইন, ভিক্টোরিয়া এ্যান্ড এ্যালবার্ট জাদুঘরের সিনিয়র কিউরেটর রোজমেরি ক্রিল প্রমুখ।
×