ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভোলায় প্রতিদিন শ’ শ’ পাখি নিধন, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ভোলায় প্রতিদিন শ’ শ’ পাখি নিধন, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য

হাসিব রহমান, ভোলা থেকে ॥ যেদিকে দু’চোখ যায় শুধু পাখি আর পাখি। দিনশেষে গোধূলি লগ্নে আকাশ পানে তাকালেই চোখে পড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে সারি বাঁধা উড়ন্ত পক্ষীকুল। দেখা যায় নীল দিগন্তে উড়ে উড়ে ঘরে ফিরে যাচ্ছে একদল পাখি। আরেক দল ডানা ঝাঁপটাচ্ছে মেঘনার বুক চিড়ে জেগে ওঠা বিস্তীর্ণ চরে। আবার অন্য একটি দল ভাটার মধ্যে সাগরের নীল জলে অলস ভেসে বেড়াচ্ছে। চোখ ধাঁধাঁনো মনোমুগ্ধকর এ দৃশ্য লিখে বর্ণনা করা দুস্কর। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যেভরা এ অপরূপ দৃশ্য একপলক দেখলেই যে কারও চোখ জুড়িয়ে যায়। মুহূর্তে শিহরণ জাগায় দেহমনে। সাইবেরিয়াসহ শীতপ্রধান দেশ থেকে আসা লাখ লাখ বিভিন্ন প্রজাতির এসব অতিথি পাখির জন্য এখন একটি দুঃসংবাদও রয়েছে। পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল চরাঞ্চলে শিকারিরা প্রতিদিন শত শত পাখি বিষটোপসহ জাল দিয়ে বিভিন্নভাবে শিকার করছে। নির্বিচারে প্রতিদিন পাখি শিকার করার ফলে পাখিদের আগমন কমে যাচ্ছে। এতে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য ও সৌন্দর্য হারাচ্ছে মনোমুগ্ধকর চরগুলো। অতিথি পাখি শিকারিদের বিরুদ্ধে স্থানীয় বনবিভাগ ও প্রশাসনের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় শিকারিদের দৌরাত্ম্য আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে শীতপ্রধান দেশ থেকে আসা লাখ লাখ অতিথি পাখি উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলার মাঝের চর, চরফ্যাসনের তারুয়া, কুকরী-মুকরী, গাসর কন্যা মনপুরার ঢালচর, চর পালিতাসহ অন্তত ২০-৩০টি চরে এসেছে সাময়িক একটু উষ্ণতা ও নিরাপদ আবাসের জন্য। বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠেছে চরগুলো। অতিথি পাখিগুলো এত দূরদেশ থেকে এখানে এলেও পাচ্ছে না নিরাপদ আবাসস্থল। দুর্গম চরাঞ্চলে পাখির জন্য নিরাপদ আবাসস্থল হওয়ার কথা থাকলেও পাখি শিকারিদের কারণে তাদের কোন নিরাপত্তা নেই। খাদ্যের সন্ধানে রং-বেরঙের পাখা মেলা এসব পাখি উড়তে গিয়েই মারা পড়ছে শিকারিদের হাতে। ধানের সঙ্গে বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য বিষটোপ ও জাল ফেলে নির্বিচারে চলছে পাখি শিকার। চর নেয়ামতপুরের বাসিন্দারা জানান, একশ্রেণীর লোক চরে ধানের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে বিকেলে চরে ফেলে রাখে। সকালে অতিথি পাখি এসে তা খায়। কিছু পাখি মারা যায় আর কিছু অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন শিকারিরা এসে জবাই করে বাজারের ব্যাগে করে বিভিন্ন হোটেলে ও বাসাবাড়িতে ফেরি করে বিক্রি করে। এসব পাখি প্রতিটি বিক্রি হয় ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা করে। পাখিপ্রেমী বাহাউদ্দিন বলেন, দেশে অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে দেশের ৬০ ভাগ পাখি ভোলার চরাঞ্চলে আসে। অথচ এসব পাখি রক্ষায় সরকারীভাবে কোন নজরদারি বা প্রচার দেখা যাচ্ছে না। পাখি শিকারে প্রশাসনের দুর্বল অভিযান ও নজরদারি না থাকায় এ বছর পাখির আগমন কমে গেছে। এতে নষ্ট হচ্ছে চরাঞ্চলের সৌন্দর্য। শিকারিদের হাত থেকে পাখি শিকার বন্ধ না করলে ভোলাতে কোন পাখির আগমন ঘটবে না বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। এদিকে আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য খাইয়ে নিধন করা এসব অতিখি পাখি মানবদেহের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি বার্ডফ্লুসহ হতে পারে জটিল রোগ। এ ব্যাপারে ভোলার সিভিল সার্জন ডাঃ ফরিদ আহমেদ বলেন, বিষটোপ দিয়ে অতিথি পাখি নিধন করে তা যদি খাওয়া হয় তাহলে বিষক্রিয়া থেকে লিভার এবং কিডনির ক্ষতি হতে পারে। এদিকে ভোলা উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ রুহুল আমিন বলেন, শিকারিদের হাত থেকে পাখি রক্ষায় বন বিভাগ তৎপর রয়েছেন। ইতোমধ্যেই তারা অতিথি পাখি সংরক্ষণে প্রযোজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সহায়তা চেয়ে জেলা প্রশাসন, পুলিশ সুপার, কোস্টগার্ডকে চিঠি দিয়েছে। এছাড়া বন বিভাগের প্রতিটি রেঞ্জে একটি করে টিম টহল দিচ্ছে, যাতে অতিথি পাখি নিধন করতে না পারে।
×