গত সপ্তাহে রাজেন্দ্রপুরের ব্র্যাক সিডিএম-এ (সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজমেন্ট) গিয়েছিলাম। আমেরিকায় থাকাকালীন এই প্রতিষ্ঠানটির অনেক সুনাম শুনেছিলাম। বিশেষ করে ঢাকার অদূরে কনফারেন্স করার জন্য খুবই সুন্দর স্থান এটি। অনেক ইচ্ছে ছিল জায়গাটি দেখার। জীবন সেই ইচ্ছে পূরণ করেছে।
আমাদের ছোট একটি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং টিম। তাদের নিয়ে টিম বিল্ডিং এবং ব্রেইন স্টর্মিং করার জন্য আমরা তিন দিনের জন্য একটা জায়গা খুঁজছিলাম। অফিস থেকে যেই মুহূর্তে প্রস্তাব করা হলো, ব্র্যাক সিডিএম-এ যাওয়া যেতে পারে, আমি এক মুহূর্তেই রাজি হয়ে গেলাম।
রাজেন্দ্রপুর শালবনের ভেতর খুবই সুন্দর স্থাপনা এই সিডিএম। আন্তর্জাতিকমানের একটি জায়গা বলতে যা বুঝায় ঠিক তাই। ঢাকা-ময়মনসিংহ মূল সড়ক থেকে বনের ভেতরে যাওয়ার রাস্তাটি যদিও খুব একটা সুবিধার নয়, তবে প্রতিষ্ঠানটির মূল গেটের সামনে গেলেই যে কারও মন ভাল হয়ে যাবে।
শীতের সুন্দর বিকেলে গিয়ে আমরা ওখানে পৌঁছলাম। গেটে আমাদের পরিচয় জিজ্ঞেস করা হলো। প্রতিষ্ঠানের নাম বলতেই কোন্ দিকে যেতে হবে দেখিয়ে দিল কর্তব্যরত নিরাপত্তাকর্মীরা। হাতের বাঁ দিকে বিশাল একটি দীঘি। আর ডান দিকে বিশাল সবুজ মাঠ, তার নিচে আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং এবং ওপরে হেলিপ্যাড। সুন্দর পরিষ্কার প্রশস্ত রাস্তার সঙ্গে সুন্দর ইট বিছানো ফুটপাথ। সেখানে নানান রকমের ফুল শোভা পাচ্ছে। চারদিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় দারুণ পরিবেশ। বাঁ দিকের পুকুরে সিরামিক ইটের তৈরি ঘাট দেখে আর সামনে যেতে মন চাইছিল না। ইচ্ছে করছিল, ওখানেই কিছুটা সময় কাটিয়ে নেই।
বিশাল সেই দীঘির পানির ওপর তৈরি করা হয়েছে হল রুম। তার স্থাপত্য শিল্প দেখার মতো বটে। এটা বাংলাদেশের কোনও স্থান, তা মনে হবে না। মনে হবে আপনি ইউরোপ কিংবা নতুন চীনে চলে এসেছেন। হাতের ডানে এবং বাঁয়ে আরও দুটো ভবন প্রায় শেষের পথে। যে কোনও দিন হয়ত অতিথিদের জন্য খুলে দেয়া হবে। আমরা সোজা গিয়ে নামলাম মূল ভবনের লবিতে।
সুন্দর গুছানো ছিমছাম লবি। দেয়ালে অল্প কিছু ছবি। সেখানে ফজলে হাসান আবেদ সাহেবের ছবিও শোভা পাচ্ছে। ব্র্যাকের ৪০ বছর পূর্তিতে কিছু থিম ব্যবহার করা হয়েছিলÑ সেগুলোও দেখতে ভাল লাগছে। চারদিকে কাঁচ দিয়ে ঘেরা লবিতে বেতের সুন্দর সোফার ওপর সবুজ রঙের কুশন যে কোনও অতিথিকে ওখানে আটকে দিতে পারে। আমরা রুমের চাবি নিয়ে কোনওরকমে লাগেজ রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে আবার নেমে এলাম লবিতে। কেউ কারও কথা শুনছে না। সবাই বিকেলে হাঁটতে বের হয়ে গেল। মুহূর্তেই আমরা যেন অন্য একটি জগতে চলে গেলাম। পরিচ্ছন্ন প্রকৃতি, সুন্দর স্থাপত্য এবং বিনয়ী আন্তরিক কর্মীদের আপ্যায়নে আমাদের দল মুগ্ধতায় হারিয়ে গেল যেন।
এমন সুন্দর পরিবেশ ছেড়ে কেউ আর রুমে ফিরতে চাইছে না। আমি পুকুরের চারপাশের রাস্তায় ৪-৫ বার চক্কর মেরে ফেললাম। মাথার ওপর শীতের শিশির পড়ছে! তাতে কী! আমি একা একা হাঁটতে ভালবাসি। সেই ভালবাসার কাছে শিশিরের মমতা হার মেনে গেল। আমি হাঁটতেই থাকি।
॥ দুই ॥
পরের দিন সকালে টিমের সঙ্গে ব্রিফিংয়ে ছিলাম। তার ভেতর ঢাকা থেকে এক বন্ধু ফোন করল। আমি ফোনটি সাইলেন্ট মোডে দিয়ে আবার ট্রেনিং সেশন চালাতে শুরু করি। এমন ফোন আরও আসতে থাকে। মনোযোগ নষ্ট হবে বলে, আর সেগুলো ধরা হয় না। দুপুরের খাবার পর গিয়ে কল ব্যাক করি কয়েকটি।
সেই বন্ধুটি হাসতে হাসতে বলল, তোর অফিস তো ভেঙ্গে দিয়েছে, তাই ফোন করেছিলাম।
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, অফিস ভেঙ্গে দিয়েছে মানে কী!
বন্ধুটি ওপাশ থেকে বলল, মানে হলো আমি দেখলাম তোর অফিসের নিচে ‘স্বপ্ন’-এর পার্কিং ভেঙ্গে দিচ্ছে। ভাবলাম তোরটাও গেছে কিনা!
আমরা কেউ ঢাকায় নেই। আর তখন যদি শুনি অফিস ভেঙ্গে দিয়েছে তখন মনের অবস্থা কী হতে পারে! বন্ধুটির কথা বুঝতে পেরে আমি একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে জিজ্ঞেস করলাম, স্বপ্ন গ্রোসারি স্টোরের পার্কিং লট ভাঙছে কে?
ও বলল, রাজউক।
কেন ভেঙ্গেছে?
অবৈধ পার্কিং, ভাঙবে না? আরও আগেই তো ভাঙ্গা দরকার ছিল। ব্যাটারা তো পুরো রাস্তা জ্যাম লাগাইয়া বইসা থাকে। আর গুলশানের মতো জায়গায় ওদের জন্য ফুটপাথ দিয়া হাঁটা যায় না। এইটা কি মগের মুল্লুক নাকি?
বন্ধুটির বাসা গুলশান। বুঝলাম সে স্বপ্নের ওপর ক্ষেপে রয়েছে। ওর রাগ কমানোর জন্য বললাম, এটা কি স্বপ্ন একা করছে নাকি? পুরো ঢাকা শহরেই তো এই অবস্থা!
বন্ধুটি আরও ক্ষেপে গেল। খেঁকিয়ে উঠে বলল, ঢাকা শহর না, পুরো দেশটারই তো এই অবস্থা। যে যেদিক দিয়ে পারে সেখানেই নাক ঢুকিয়ে দিয়ে জায়গা দখল করে নেয়। এই যে বড় বড় বিল্ডিং আছে, তাদের পার্কিং লট কই? রাজউক তো ভবন করার সময় পার্কিং করার জায়গাসহ প্ল্যান পাস করেছিল। সেই প্ল্যানের পার্কিং কোথায় এখন? এটা তো একটা শহর না, ডাস্টবিন!
ঢাকা শহর যে একটি জীবন্ত ডাস্টবিন তাতে আমার কোনও সন্দেহ নেই। ডাস্টবিনের পোকামাকড়রা বুঝতে পারে না, তারা ডাস্টবিনে বসবাস করছে। বরং তাদের সুস্থ পরিবেশে নিলে মারা যেতে পারে। আমাদের শহরের বেশিরভাগ মানুষ বিশ্বাসই করে না যে, ঢাকাকে সুন্দর বাসযোগ্য একটি শহরে পরিণত করা যায়। এ্যাপার্টমেন্টের জানালা দিয়ে নিচে ময়লা ফেলে দেয়া, কিংবা মূল রাস্তার ওপর যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা দেয়া এই শহরে নিত্যদিনের ব্যাপার। এতে কেউ কিছু মনে করে না। তাই বন্ধুটিকে বললাম, এই ডাস্টবিনেই তো আমরা আছি। তুই আবার হঠাৎ করে জেগে উঠলি কেন?
আমার খোঁচা সে ধরতে পারল। আমতা আমতা করে বলল, না জেগে আর উঠতে পারলাম কোথায়? তবে ঢাকা শহরে অনেক জায়গায় ভাংচুর শুরু হয়েছে। দেখতে ভাল লাগছে। অনেক পরিচ্ছন্ন লাগছে।
ব্যস্ততা আছে। তার সঙ্গে আর কথা বাড়ালাম না। ওকে আর বললাম না যে, আমি কেমন পরিচ্ছন্ন একটি দ্বীপে অবস্থান করছি। আপাতত মাফ চেয়ে ওর হাত থেকে বাঁচি। বুঝতে পারলাম, রাজউক এবং সিটি কর্পোরেশন আবার পরিচ্ছন্নতা কাজে মাঠে নেমেছে। অবৈধ পার্কিং লট এবং ভবনের বাড়তি অনুমোদনহীন অংশ ভাঙতে শুরু করেছে।
॥ তিন ॥
তিন দিন পর ঢাকায় এসে যেন অন্যরকম এক ঢাকাকে আবিষ্কার করলাম। গাড়িতে বসে দেখতে পেলাম, হঠাৎ করেই ঢাকা শহরে নতুন নতুন অনেক ভবন চোখের সামনে চলে এলো যেগুলো আগে চোখে পড়েনি। লালমাটিয়া আড়ংয়ের পাশ যে সুন্দর এমন একটি ভবন ছিল, তা আমি জানতামই না। গুলশান এক নম্বরের মোড়ে যে বিশাল একটি পুরনো মার্কেট ছিল তাও চোখে পড়েনি কখনও। ব্যাপারটা কি!
একটু পরেই বুঝতে পারলাম, সিটি কর্পোরেশন শুধু বিভিন্ন ভবনের বর্ধিত অংশ ভেঙ্গে দিয়ে যায়নি, তারা শহর থেকে অবৈধ বিলবোর্ডও সরিয়ে ফেলেছে। মাথায় এটা ধরা পড়তেই চারদিকে নতুন করে তাকাতে শুরু করি। এ যেন নতুন এক বিস্ময়কর শহরÑ এই ঢাকা শহর! রাস্তার দু’পাশে এখন আর বিলবোর্ডের আস্তরটুকু নেই। শহরের বাড়িগুলো তাদের আদল নিতে শুরু করেছে।
মাথায় প্রথম যে প্রশ্নটি এলো তাহলো, ঢাকা শহরে কি এত অবৈধ বিলবোর্ড ছিল! নাকি সিটি কর্পোরেশন বৈধ বিলবোর্ডগুলোও ভেঙ্গে দিয়ে গেছে? আমি ধানম-ি, লালমাটিয়া, ফার্মগেট, আগারগাঁও, গুলশান, মহাখালী ইত্যাদি এলাকার সড়কগুলো গাড়ি থেকে খেয়াল করলাম। এমনকি সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া এভিনিউতেও অনেক বিলবোর্ড ছিল। এখন সেগুলো আর নেই। তাহলে কি ধরে নেয়া যায়, ঢাকা শহরে এত বিপুল পরিমাণে অনুমোদনহীন বিলবোর্ড ছিল! একটি দেশের রাজধানীতে এটা কিভাবে সম্ভব!
লালমাটিয়া আড়ংয়ের পাশে যে বিলবোর্ডগুলো পেছনের সুন্দর ছিমছাম বাড়িগুলোকে ঢেকে দিয়েছিল ওখানে দৈনিক প্রথম আলো এবং গ্রামীণফোনের কয়েকটি বিলবোর্ড ছিল। তাহলে কি আমি ধরে নেব, দৈনিক প্রথম আলো জানত না ওই বিলবোর্ডগুলো অবৈধ? এটা কি সম্ভব! আর অবৈধ ওই বিলবোর্ডগুলোতে সুন্দর সুন্দর নীতিকথা লিখে প্রচার করার অর্থটা কী?
ঢাকা শহরের এই নোংরা বিলবোর্ডগুলোকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য মাননীয় মেয়র আনিসুল হককে আন্তরিক শুভেচ্ছা। আমি জানি না, ঢাকার দক্ষিণ ভাগেও একই কাজ করা হয়েছে কিনা। যদি করা হয়ে থাকে, তাহলে তাকেও আন্তরিক ধন্যবাদ। একটি শহরে এমন অজস্র নোংরা বিলবোর্ড থাকতে পারে এবং এটা নিয়ে কেউ কিছু করতে পারছে না এমন অসহায়ত্ব আমাদের পেয়ে বসেছিল এবং সেই অবৈধ বিলবোর্ডগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যারপরনাই হয়ে ব্যবহার করেছে, বিভিন্ন সময় সরকারও তার প্রচারণা চালানোর জন্য ব্যবহার করেছে। কিন্তু কেউ একটিবারের জন্য ভাবেনি, রাজধানীটিকে কী পরিমাণ নোংরা শহরে আমরা পরিণত করে রেখেছিলাম। আমরা যেন নোংরা শহরে থাকার জন্যই জন্মেছি। এটাই আমাদের কালচার; এটাই আমাদের জীবন।
॥ চার ॥
বাংলাদেশে একটি প্রতিষ্ঠিত ডাকাতিবৃত্তি আছে, যা আমরা সবাই মেনে নিয়েছি। বিষয়টি হলো এমন যে, আমরা সরাসরি অন্যায় কাজটি করতে চাই না; তবে কেউ যদি আপনার হয়ে কাজটি করে দেয় তাহলে চোখ বন্ধ করে সেটা গ্রহণ করি। এমনকি সেটাকে হালাল করার জন্য তখন নানান ধরনের যুক্তি উপস্থাপন করি। কয়েকটি উদাহরণ দিলে বুঝতে একটু সুবিধা হতে পারে।
ঢাকা শহরে এবং এর আশপাশে বহু ল্যান্ড ডেভেলপার রয়েছে যারা গরিব মানুষের জমি জোর দখল করে নিয়ে নিয়েছে। কেউ মাথায় ডান্ডা মেরে, কেউ অল্প কিছু টাকা দিয়ে ভাগিয়ে দিয়ে, কেউবা তাদের নিজস্ব মস্তান বাহিনী দিয়ে সীমানা তৈরি করে তারপর কায়দা করে সেখান থেকে মূল জমির মালিককে উৎখাত করে সেগুলো ভরাট করে আমাদের কাছে বিক্রি করে। এই লাঠিয়াল বাহিনীর কাজটি আমরা ভদ্রলোকরা নিজেরা করতে পারতাম না। কিন্তু যেই মুহূর্তে কোনও একটি ডেভেলপার কাজটি আমাদের জন্য করে দিচ্ছে, তখন আমরা চোখ বন্ধ রেখে বলছি, ওরা কিভাবে এনে দিচ্ছে সেটা তো আমার দেখার বিষয় নয়!
কী অদ্ভুত যুক্তি! আর সেই আমরাই কিনা দেশে আইনের শাসন চাই! যারা এই দেশে আইনের শাসন চান, তারা আগে নিজের বাড়ির দিকে তাকান। দেখুন, যেই জমিতে আপনার বাড়ি সেই জমিটা সঠিকভাবে অধিগ্রহণ করা হয়েছিল কি না। যদি না হয়ে থাকে, তাহলে মুখ বন্ধ করে রাখুন। যে লোকটি তার ভিটে-বাড়ি হারিয়েছে তার জন্য আগে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করুন, তারপর কথা বলতে আসুন।
বিলবোর্ডেরও একই অবস্থা। দেশের প্রথম স্থানের একটি দৈনিক যারা কিনা প্রতিদিন দেশের মানুষকে নীতিকথা শেখায়, তারা জেনেও না জানার ভান করে থাকে। আবার তারাই কিন্তু অবৈধ বিলবোর্ড নিয়ে রিপোর্ট করে। বিষয়টি হলো এমন যে, অন্য কেউ যদি আপনার জন্য বিলবোর্ডটি অবৈধভাবে বসিয়ে শহরকে নোংরা করে, তাতে আপনার কিছু আসে যায় না। আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রচার চললেই হলো। গ্রামীণফোনের মতো কর্পোরেটগুলোরও একই অবস্থা। তারা কেউ একটিবারের জন্যও বলে না যে, অবৈধ বিলবোর্ডে আমরা বিজ্ঞাপন দেব না!
এই যখন আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, তখন আর মেয়র একা একা কী করতে পারেন? তিনি একদিক দিয়ে ভাঙবেন, আরেক দিক দিয়ে কচুরিপানার মতো আবারও অবৈধ স্থাপনা এসে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। আমি রাজেন্দ্রপুর থেকে এসে যখন গুলশান অফিসে গিয়েছি, প্রবেশের মুখেই দেখি সেই ‘স্বপ্ন’ তারা আবার পুরনো অবস্থায় ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছে। রাস্তায় লোক নামিয়ে দিয়েছে। তারা আবার তাদের সাইনবোর্ড লাগাতে শুরু করেছে। সামনের ফুটপাথ আবার পার্কিং এসে আগের মতোই জায়গা করে নিয়েছে। একটি ব্র্যান্ডশপ এই অপরাধটি দিনের পর দিন করে কিভাবে! আর আমাদের গ্রাহকদেরও চরিত্র এমন যে, দোকানটার দরজায় এসে নামতে হবে, সম্ভব হলে একদম দোকানের ভেতরে। অলস আর কাকে বলে! আরে বাবা, একটু দূরে গাড়ি থেকে নেমে তারপর হেঁটে আসো। অন্য পথচারীদের যেতে দাও!
আমাদের রক্তে সমস্যা রয়েছে। নইলে এমন হবে কেন!
॥ পাঁচ ॥
ঢাকা শহরে প্রচুর বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে, যারা পার্কিং স্পেসকে অন্য কাজে ব্যবহার করছে। অনেক ভবনে দেখা যায় নিচে পার্কিং স্পেসে দোকান ভাড়া দিয়ে বসে আছেন। তাই সব গাড়ি রাখতে হয় মূল রাস্তায়, নয়ত ফুটপাথে। তারপর এই আমরাই কিন্তু নিত্যদিন গালি দেই, ঢাকা শহর থাকার অযোগ্য হয়ে গেছে। আমরা নিজেরা কি এই শহরে থাকার যোগ্য রাখছি?
কয়েক সপ্তাহ আগে মেয়র আনিসুল হক সাহেব গেলেন তেজগাঁওয়ের একটি রাস্তা উদ্ধার করতে, যেখানে ট্রাক এসে অন্যায়ভাবে রাস্তাটি বন্ধ করে রাখত। সেই রাস্তা উদ্ধার করতে গিয়ে তিনি নিজেই আটকা পড়েছিলেন; এবং পরবর্তীতে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করেছে। টিভিতে সেটা লাইভ দেখা গেল।
সেদিন ওই সড়ক দিয়েই যাচ্ছিলাম। সহযাত্রীদের বললাম, যাক আনিসুল হক সাহেব অন্তত চেষ্টা করে যাচ্ছেন। একটা সড়ক তো উদ্ধার করতে পেরেছেন। নইলে এই রাস্তায় তো আর আসা যেত না।
সঙ্গের একজন বললেন, ভাই সব নাটক!
আমি অবাক হয়ে বললাম, নাটক মানে?
তিনি গলা কাশি দিয়ে বললেন, ওই যে দেখলেন না ওনাকে আটক করা হয়েছিল। ওটা ছিল নাটক।
আমি আরও অবাক হয়ে বললাম, নাটক! উনি তো সত্যি জখম হতে পারতেন!
লোকটি হাসতে হাসতে বললেন, আরে রাখেন। এগুলো সব নাটক। টিভি ক্যামেরা আসবে। আমাদের নাটক দেখালেন। ওনার গায়ে হাত দেবে, ওই সাহস কারও আছে নাকি?
একজন মেয়র তার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শহরের বেদখল রাস্তা উদ্ধার করতে গেলেন। কিন্তু কিছু মানুষ সেটা বিশ্বাস করছে না, ভাবছে নাটক! তাহলে সমস্যাটা কোথায়? আমাদের চরিত্রই কি এমন দাঁড়িয়ে গেছে যে, সব কিছুতেই আমরা সন্দেহ পোষণ করি? নাকি আমাদের সবকিছুই সন্দেহজনিত?
এমন একটি জটিল মনস্তত্ত্বের জাতিও সুন্দর একটি শহর চায়! আসলেই কি চায়? আসলে কি চায়!
৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
লেখক : তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং সম্পাদক, প্রিয়.কম
ুং@ঢ়ৎরুড়.পড়স
শীর্ষ সংবাদ: