ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এস এম মুকুল

শুঁটকি মাছের সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

শুঁটকি মাছের সম্ভাবনা

বাংলাদেশে তো বটেই বিদেশে বাংলাদেশের শুঁটকি মাছের একটি ভাল বাজার তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠী শুঁটকি মাছ পছন্দ করে। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র শুঁটকি মাছ বিক্রয় হয়। বিদেশে অভিবাসী হিসেবে আছেন যারা বিদেশের মাটিতে দেশের শুঁটকি মাছ পেলে তারা ক্রয় করবেন। এভাবে বিদেশে বাংলাদেশের শুঁটকি মাছের একটি বড় বাজার সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশে শুঁটকি তৈরি হয় দশ হইতে ১২ হাজার টন। যার অধিকাংশ প্রাকৃতিক উপায়ে অর্থাৎ রৌদ্রে শুকিয়ে তৈরি করা হয়। বর্তমানে বেশকিছু স্থানে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নতমানের শুঁটকি তৈরি করে বাজারজাত ও রফতানি হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিবছর কমবেশি ১০০ কোটি টাকার শুঁটকি মাছ বিদেশে রফতানি হচ্ছে। জানা যায়, তিন কেজি তাজা মাছ শুকিয়ে এক কেজি শুঁটকি তৈরি হয়। প্রকার ভেদে শুঁটকির বাজারমূল্য ৩০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত হয়। বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে শুঁটকি তৈরি হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টন। এর অধিকাংশ প্রাকৃতিক উপায়ে অর্থাৎ রৌদ্রে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হয়। শুঁটকি তৈরিতে ১৬টি কারখানা ইতোমধ্যে গড়ে উঠেছে যেখানে রৌদ্রের পরিবর্তে বিদ্যুতের তাপে মাছ শুকানো হয়। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, সারা বছর সমুদ্র থেকে মাছ ধরা হলেও শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয় অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত। আমাদের দেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা কক্সবাজারের লুনিয়াছাটা ও নাজিরারটেকে বর্তমানে ২০ এর অধিক রফতানিমুখী শুঁটকির কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় শুঁটকি ডিহাইড্রেড করে রফতানি উপযোগী করা হয়। কক্সবাজারের সাগরপাড়ে নাজিরাটেকে স্থাপিত দেশের সর্ববৃহৎ শুঁটকি মহালে মৌসুমে কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি শুঁটকি উৎপাদন করা হয় বলে জানা গেছে। সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার লোকদের অন্যতম পেশা সমুদ্র থেকে মাছ ধরে শুঁটকি উৎপন্ন করা। সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার প্রায় ১০ লাখ লোক শুঁটকি উৎপাদন কাজে নিয়োজিত রয়েছে। কক্সবাজারের সাগরপাড়ে নাজিরাটেকে স্থাপিত দেশের সর্ববৃহৎ শুঁটকি মহালের সঙ্গে কমপক্ষে ১০-১২ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত। আশুগঞ্জের লালপুরে শুঁটকি শিল্পের সঙ্গে ব্যবসায়ীসহ প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক জড়িত রয়েছেন। আশার খবর হলো, প্রতিকূলতা এবং সীমাবদ্ধতার মধ্যে বিশাল পরিমাণে শুঁটকি রফতানি হচ্ছে। সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় উৎপাদিত শুঁটকি অত্যন্ত সীমিত পর্যায়ে বেসরকারীভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, আমাদের দেশে উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতির শুঁটকি মধ্যপ্রাচ্য, পাকিস্তান, বৃটেন, আমেরিকা, চীন, হংকং, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। জাপান, চীন, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, রাশিয়াসহ ইউরোপীয় কয়েকটি দেশ এবং আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশেও শুকনো মাছ বা শুঁটকির জনপ্রিয়তা রয়েছে। সেসব দেশেও বাংলাদেশের শুঁটকি রফতানি সম্প্রসারিত হতে পারে। জানা গেছে, ১৯৭২-১৯৭৩ স্বাধীনতার পর শুঁটকি রফতানি খাতে সরকারের আয় হয়েছে ১৭ হাজার ৯শ’ টাকা। ১৯৮৫-৮৬ সালে আয় হয়েছে ১৬ কোটি ৮ লাখ টাকা, ১৯৯০-৯১ অর্থ সালে ২০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে শুঁটকি মাছে রফতানি আয় হয় ৬১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এভাবে ক্রমান্বয়ে গত ২০১১-২০১২ অর্থবছরে এই শুঁটকি মহাল থেকে মাছ রফতানি আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে অন্তত ৮০ কোটি টাকার উপরে। যা বর্তমানে ১০০ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল। বাংলাদেশ ডিহাইড্রেশন সীফুডস রফতানিকারক সমিতি সূত্রে, বর্তমানে প্রতি বছর ১০০ কোটি টাকার শুঁটকি মাছ বিদেশে রফতানি হয়। রফতানিকারকদের মতে, সরকার এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিলে বিদেশে শুঁটকি মাছ রফতানি করে বছরে ১০০০ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব।
×