ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খন্দকার জিয়া হাসান

অভিমত ॥ দক্ষ মানবশক্তি তৈরিতে ইংলিশ মাধ্যম স্কুলের ভূমিকা

প্রকাশিত: ০৪:০১, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

অভিমত ॥ দক্ষ মানবশক্তি তৈরিতে ইংলিশ মাধ্যম স্কুলের ভূমিকা

গত বছর সারাদেশে ২৯ লাখের বেশি ছাত্রছাত্রী প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল। এর মধ্যে ইংরেজী ভার্সনে পরীক্ষা দেয় ৫ হাজারেরও কম শিক্ষার্থী। ২৯ লাখের বিপরীতে মাত্র ৫ হাজার! এই ৫ হাজার সন্তানের বাবা-মাকে অভিনন্দন অতি দূরদর্শী একটি সিদ্ধান্ত তাদের সন্তানের বেলায় নিতে পারায়। ৫ হাজারের মধ্যে আমাদের স্কুল থেকে ১৬ জন পরীক্ষা দেয়। সবাই ‘অ’ পায়, ৬ জন ‘অ+’ পায়। তার মানে হলো, বাকি বিষয়গুলোর পাশাপাশি এই ৬ জন বাংলাতেও ৮০-এর বেশি পেয়েছে! বাকি ১০ জন ৫ বিষয়ে ৮০-এর ওপর পেয়েছে। আর বাংলায় পেয়েছে ৭০-এর ওপর। প্লে গ্রুপ থেকে এই বাচ্চাগুলো ৯০% পড়ালেখা ইংরেজীতে করেছে, কারণ বাংলা বিষয়টি ছাড়া এদের সব বিষয় ইংরেজীতে পড়তে হয়। তাই, বাংলা নিয়ে আমরাও একটু চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু আমাদের অবাক করে দিয়ে ওরা বাংলাতেও ৭০% এবং ৮০%-এর ওপর নম্বর পায়। এটা আমাদের দ্বিতীয় ব্যাচ। গত আট বছর গ্রামে শিক্ষা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে একটি কথা আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, গ্রামের বাচ্চাদের উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশ দিলে তারা শহরের বাচ্চাদের মতো একই পারফরমেন্স উপহার দেবে। তাদের দরকার শুধু পরিবেশ। আমার ছোট ছেলেটিকেও (রাফিন জিয়া) আমি ২০১১ সালে ঢাকার একটি নামকরা স্কুল থেকে নিয়ে গিয়ে গ্রামে আমাদের স্কুলে নার্সারিতে দেই। আমার সন্তান পড়ানোর মধ্য দিয়ে আমি শুধু প্রিন্সিপালের চোখ দিয়ে নয়, একজন অভিভাবকের চোখ দিয়েও দেখতে চাচ্ছিলাম স্কুলের মান ঠিক মতো থাকছে কিনা। এখন সে ওই স্কুলে ক্লাস ফাইভে পড়ে এবং এ বছর ওই স্কুল থেকে সে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। বাংলাদেশের মতো একটি নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে ঘুরে দাঁড়ানোর একটিই কায়দা; একটি দক্ষ মানবশক্তি তৈরি করা। এই দক্ষ মানবশক্তি তৈরির প্রথম শর্ত হলো যুগোপযোগী পড়ালেখা। আর সেখানেই ইংরেজী মাধ্যমের গুরুত্ব। এই ৫ হাজার ছাত্রছাত্রী ১৫ বছর পর বাংলাদেশকে আরও বেশি আলোকিত করবে, আরও শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাবে তাদের মেধা, প্রজ্ঞা দিয়ে এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ এবং রাষ্ট্র তৈরি করতে চাইলে পৃথিবীর সবচাইতে শক্তিশালী ভাষাকে পাশ কাটিয়ে যাবার কোন উপায় নেই, কারণও নেই। সন্তানকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইটি এক্সপার্ট যাই তৈরি করতে চান না কেন, উচ্চ শিক্ষার্থে তাকে পড়ালেখা ইংরেজীতেই করতে হবে। এটার সঙ্গে মায়ের ভাষা, প্রাণের ভাষা বাংলার কোন সাংঘর্ষিক ব্যাপার নেই। ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ৪০,০০০ মধ্যে ১৭ জনের ইংরেজীতে পাস করার কথা নিশ্চয়ই সবার মনে আছে। এটা একটা ভয়ঙ্কর চিত্র। বিশ্বমানের নাগরিক গড়ে তুলতে হলে আমাদের বিশ্বমানের পড়ালেখা করতে হবে। পাশের দেশের দিকে তাকান। তিন-চার দশক আগে থেকে হিন্দির পাশাপাশি ইংরেজীকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে পৃষ্ঠপোষকতার কারণেই ইন্ডিয়া আজ সারা পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাচ্ছে। ভাল উদাহরণ থেকে শিখতে তো কোন অসুবিধা নেই। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গীতাঞ্জলি ইংরেজীতে অনুবাদ করার পরই নোবেল পান, আগে নয়। সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালি ছবিতে ইংরেজীতে সাব টাইটেল ছিল বলেই অস্কার কমিটি ছবিটির কদর এবং মর্যাদা আনুধাবন করে। আমাদের নোবেলজয়ী ড. ইউনূস তার সামাজিক ব্যবসার ধারণাটি সারা দুনিয়ায় প্রচার করছেন ইংরেজীতেই। সরকারের কাছে অনুরোধ, দেশের ৪৪৯৮ ইউনিয়নে প্রতিটিতে একটি করে ‘ইংলিশ ভার্সন’ স্কুল করা হোক। পাশাপাশি। সারাদেশের ইউনিয়ন, থানা পর্যায়ে কর্মরত শিক্ষকদের কাছেও অনুরোধ, নিজের এলাকার সন্তানদের বিশ্ব দরবারে পরিচিত করাতে চাইলে এলাকায় অন্তত একটি ইংলিশ ভার্সন স্কুল করুন। একটি গ্রাম থেকে একটি সন্তান সফল, সার্থক হয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারলে সে একদিন তার গ্রামকেও ঘুরিয়ে দেবে। এটা করা কি অসম্ভব কিছু? অসম্ভব যে নয় সেটা আমরা গ্রামে ইংলিশ ভার্সন স্কুল নিয়ে কাজ করতে গিয়ে অনুভব করছি। চলুন, সবাই মিলে আমাদের প্রিয় এই দেশটিতে, একটি সৎ এবং দক্ষ মানবশক্তি গড়ে তুলি। লেখক : প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল, জিয়া হাসান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল করটিয়া, টাঙ্গাইল
×